মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঝিলের জলে ওয়াটার ট্যাক্সি

জিন্নাতুন নূর

ঝিলের জলে ওয়াটার ট্যাক্সি

হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সি নাগরিক বিনোদনের নতুন সংযোজন ছবি: জয়ীতা রায়

আধুনিক দেশগুলোর আদলে রাজধানীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হাতিরঝিলে এবার চালু করা হয়েছে আধুনিক জলযান ‘ওয়াটার ট্যাক্সি’। সাধারণত শহর এলাকায় ওয়াটার ট্যাক্সি নামক জলযানটি কোনো নদী বা লেকের আশপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখার কাজে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ব্যবহূত হয়। সেই ধারণা থেকে হাতিরঝিলকে একটি পরিপূর্ণ বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং ঝিলের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যাত্রীদের স্বল্প সময়ে পৌঁছে দিতে এই সেবা চালু করা হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকার নতুন এই বাহনটি নগরবাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। চালুর একমাস না যেতেই যাত্রীদের চাহিদা মেটাতে নতুন করে আরও ছয়টি ওয়াটার ট্যাক্সি নামাচ্ছে ট্যাক্সি পরিচালনাকারী সংস্থা করিম গ্রুপ।  

গত সপ্তাহে ওয়াটার ট্যাক্সির টিকিট কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে যাত্রীরা টিকিট কেটে লাইন ধরে সুশৃঙ্খলভাবে ওয়াটার ট্যাক্সির অপেক্ষা করছেন। বর্তমানে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর তিনটি স্ট্যান্ড থেকে যাত্রী নিয়ে ওয়াটার ট্যাক্সি ছুটে চলে। সকালে অফিসগামী যাত্রীর চাপ বেশি থাকলেও বিকালের পর থেকে রাত পর্যন্ত ওয়াটার ট্যাক্সির মূল যাত্রী হচ্ছেন হাতিরঝিলে বেড়াতে আসা দর্শক। তারা এই যানে চড়ে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান। বিশেষ করে রাতে হাতিরঝিলের নয়নাভিরাম আলোকসজ্জায় ওয়াটার ট্যাক্সি ভ্রমণ দারুণ উপভোগ্য বলে জানান বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী।

বিশ্বে ব্যাংকক, দুবাই, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, মস্কো, ভারত, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে ওয়াটার ট্যাক্সি চলাচল করে। আর ঢাকায় যাত্রা শুরুর দিন থেকে নতুন এই বাহন সম্পর্কে আগ্রহী সব বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু। ছুটির দিনগুলোতে ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়তে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও সাধারণ দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের পাশাপাশি অফিসগামী মানুষ যানজট এড়াতে ওয়াটার ট্যাক্সি ব্যবহার করছেন। ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা ছাড়াও হাতিরঝিল এলাকায় উন্মুক্ত মঞ্চ, নগরবাসীর জন্য হাঁটার জায়গাসহ বিনোদনের জন্য আরও নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এগুলো তৈরি হলে হাতিরঝিল হবে দেশের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র।  

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হাসান মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার বাসা মেরুল বাড্ডায়। আর অফিস কারওয়ান বাজার। আগে এই দূরত্বে পৌঁছতে কখনো হেঁটে আবার কখনো রিকশায় চড়তে হতো। কিন্তু ওয়াটার ট্যাক্সি চালু হওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে এখন বাড্ডা থেকে এফডিসি মোড়ে পৌঁছে যাচ্ছি। মিরপুর থেকে দুই সন্তানসহ বেড়াতে আসা ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, আগে বুড়িগঙ্গায় বন্ধুদের নিয়ে নৌকায় চড়ে বেড়াতাম। কিন্তু এখন নদীদূষণ ও দুর্গন্ধের জন্য আর সেখানে যাওয়া হয় না। শহরে সন্তানদের নৌকায় চড়ার সাধ দিতে তাই ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়াতে নিয়ে আসেন মালেক।

নতুন এই যান নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ থাকলেও ভাড়া কিছুটা বেশি বলে কয়েকজন যাত্রী মন্তব্য করেন। আবার অনেকে বলেন, রুট আরও বাড়ানো উচিত। এছাড়া দুপুরের যাত্রীর চাপ কম থাকায় অনেক সময় সব আসন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ওয়াটার ট্যাক্সি ছাড়া হয় না বলে কিছু যাত্রী অভিযোগ করেন। ওয়াটার ট্যাক্সির কাউন্টারে কথা হলে এর সঙ্গে জড়িতরা জানান, প্রতিদিন তারা সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করেন। সাদা-কমলা রঙের এই জলযানগুলো মূলত ইঞ্জিনচালিত। উপরে ছাউনি দেওয়া ট্যাক্সির ভিতরে আছে ৩০ জনের বসার সিট। প্রতিটি ট্যাক্সিতেই নিরাপত্তার জন্য আছে লাইফ জ্যাকেট। এতে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য আসন সংরক্ষিত আছে।

গত বিজয় দিবসে এই সেবা শুরু হয়। বর্তমানে হাতিরঝিলে মোট চারটি ট্যাক্সি চলছে। এফডিসি, মেরুল বাড্ডা ও গুলশান এই তিন জায়গায় ওয়াটার ট্যাক্সির স্ট্যান্ড আছে। এফডিসি মোড় থেকে গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড হয়ে গুদারাঘাট যেতে ভাড়া ৩০ টাকা। আর এফডিসি থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত ভাড়া ২৫ টাকা। গৃহায়ণ, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত প্রকল্পটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (এসডব্লিউর-পশ্চিম) বাস্তবায়ন করছে। ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস পরিচালনার লিজ নিয়েছে করিম গ্রুপ।

সর্বশেষ খবর