মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভোগান্তি-দুর্ভোগে নাভিশ্বাস

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ভোগান্তি-দুর্ভোগে নাভিশ্বাস

সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু কিংবা কোমর সমান পানি। ঘরে-বাইরে তৈরি হয় অসহনীয় জলাবদ্ধতা। বাইরে নিত্য যাতায়াতে সড়কের অবস্থা বেহাল। প্রতিনিয়তই লেগে থাকছে যানজট। ফুটপাথ দখল করেই চলছে ব্যবসা। নানা বর্জ্যে ঠাসা নালা-নর্দমা। বাতাস দূষণ হচ্ছে ডাস্টবিনের বর্জ্য।ন্ডে এসব নেতিবাচক অনুষঙ্গ অতিষ্ঠ করে তুলছে নাগরিক জীবন। ফলে চট্টগ্রাম নগর এখন অনেকের কাছেই দুর্ভোগ, ভোগান্তি ও দুর্বিষহ শহরে রূপ নিচ্ছে। নাভিশ্বাস ওঠছে অন্তহীন ভোগান্তিতে।       

নগরবাসীর অভিযোগ, দেশের প্রধানমন্ত্রী এই নগরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিচ্ছেন। তবুও কেন এই বাণিজ্যিক নগরের এমন দশা।  জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি অতীতের চেয়ে ক্রমান্বয়ে চরম আকার ধারণ করছে। আমরা মনে করি, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ কার্যকর ও যথাযথ ভূমিকা পালন না করার কারণেই বার বার ডুবছে এ নগর। কোন সংস্থা কি করছে তা আমরা বুঝি না। আমরা চাই, জলাবদ্ধমুক্ত নগর।    

জানা যায়, গত ৪ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত কখনো মুষলধারায়, কখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। ফলে নগরের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায় পানিতে। দেখা দেয় চরম আকারে জলাবদ্ধতা। বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকেই নগরবাসীকে কয়েক দফায় জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে নাভিশ্বাস ওঠে দৈনন্দিন জীবনে। কিন্তু জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে কোনোমতেই মুক্তি মিলছে না। বরং দায়িত্বশীল দুই সংস্থা- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) দায়সারা ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। চউক বলছে, চলমান মেগা প্রকল্প শেষ হওয়ার পর নগর জলাবদ্ধমুক্ত হবে। আর চসিক বলছে, মেগা প্রকল্পের কারণে চসিক নালা-নর্দমা পরিষ্কারের কাজ করছে না। দুই সংস্থার কাজের খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। বড়পুল এলাকার বাসিন্দা মীর শাফায়াত বলেন, ‘পুরো এলাকাটি এখন আমাদের জন্য কষ্টের কারণ হয়েছে। বৃষ্টি পড়লেই জলাবদ্ধতা আর পানি নামলেই সড়কের বেহাল অবস্থা। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ নিয়ে বাস করছি।’  চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে চউক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাই এ বছর অতীতের মতো বড় আকারে নালা- নর্দমা ও ড্রেন পরিষ্কার করা হয়নি। তবে চসিক রুটিন ওয়ার্ক করেছে।’

মেগা প্রকল্পের পরিচালক ও চউকের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মঈনুদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। ইতিমধ্যে ২৬টি খালের মধ্যে ১৩টি খাল পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চারটি খালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আশা করি, প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এর সুফল পাবে নগরবাসী।’ জানা যায়, প্রতিবারই বৃষ্টির পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে সব সড়কেই হা করে ওঠে ছোট-বড় গর্ত। বৃষ্টির আগে ভালো ছিল এমন সড়কও ফের নষ্ট হয়ে যায়। এসব সড়কে যান চলাচল দায় হয়ে পড়ে। বিশেষ করে রিকশা ও অটোরিকশার মতো ছোট যানগুলোকেই বেশি ধকল পোহাতে হয়। বেহাল সড়কে নষ্ট হয় যন্ত্রাংশ, লেগে যায় যানজট, ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অন্যদিকে, নগরের প্রধান কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দরগামী সড়কটিতে প্রতিনিয়তই লেগে থাকছে তীব্র যানজট। বিশেষ করে বিমানবন্দর সড়ক, কাটগড়, সিমেন্ট ক্রসিং, ইপিজেড মোড়, কাস্টমস মোড়, নিমতলা, বারিক বিল্ডিং, বাদামতলি মোড় এলাকায় যানজট তীব্রতর হয়ে ওঠেছে। অথচ এই বিমানবন্দর সড়কেই আছে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (সিইপিজেড), কর্ণফুলী ইপিজেড, ইস্টার্ন রিফাইনারি, বেসরকারি কয়েকটি অফডক, নৌবাহিনী হাসপাতালসহ নানা স্থাপনা, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস ভবন। 

সিএমপির বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এ সড়কের যানজট নিরসন করতে হবে। বারিক বিল্ডিং থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত একমাত্র সড়কের ওপর নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলাকালীন বিকল্প সড়ক হিসেবে কাটগড়, র‌্যাব-৭ সংলগ্ন এলাকা, ইপিজেড, হালিশহর-বড়পোল ও জহুর আহমদ স্টেডিয়াম সংলগ্ন সংযোগ সড়ক ব্যবহার করা যায়। একই সঙ্গে রুটিন করে ক্রম অনুসারে ট্রাক, প্রাইম মুভার বন্দরে প্রবেশের ব্যবস্থা করলে এ সড়কে যানজটের হার অনেকাংশে হ্রাস পাবে।’

 

সর্বশেষ খবর