মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুই কারণে সিলেটে যানজট

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

দুই কারণে সিলেটে যানজট

‘সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার থেকে রিকশায় হুমায়ুন চত্বর যেতে ২০-২৫ মিনিটের বদলে লাগছে প্রায় দেড় ঘণ্টা। ভয়াবহ যানজটের কারণে ঘণ্টাখানেক সময় বেশি লাগছে।’ নগরীর হুমায়ুন রশীদ চত্বরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত খন্দকার মকসুদ। ঢাকায় যাওয়ার বাস ধরতেই হুমায়ুন চত্বরে গিয়েছিলেন তিনি। যানজটের কবলে পড়ে নির্ধারিত বাস ধরতে না পেরে হতাশাই ঝরছিল তার চোখে-মুখে।

এই একজনই নন, সিলেট নগরীর ভয়াবহ যানজটে এখন নিত্য ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে মানুষের সহ্য ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেট নগরীতে মূলত যানজটের নেপথ্যে দুটি কারণ। এর একটি ট্রাফিক এডুকেশন, অপরটি ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং। সিলেট নগরীর প্রধান কয়েকটি সমস্যার অন্যতম যানজট। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কে যানজট লেগেই থাকে। নগরীর কোর্টপয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার হয়ে চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার থেকে বারুতখানা হয়ে জেলরোড পেরিয়ে কুমারপাড়া পয়েন্ট, চৌহাট্টা থেকে আম্বরখানা, চৌহাট্টা থেকে রিকাবীবাজার ও মধুশহীদ পেরিয়ে মেডিকেল রোড, চৌহাট্টা থেকে মীরবক্সটুলা হয়ে নয়াসড়ক, আম্বরখানা থেকে সুবিদবাজার, আম্বরখানা থেকে চৌকিদেখী, জিন্দাবাজার থেকে জল্লারপাড় হয়ে লামাবাজার, লামাবাজার থেকে শেখঘাট, লামাবাজার থেকে রিকাবীবাজার প্রত্যেকটি সড়কে যানজনটের দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিত্যদিনকার। সিলেট নগর পুলিশের (এসএমপি) ট্রাফিক শাখায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন উপকমিশনার ফয়সাল মাহমুদ। তার মতে, সিলেট নগরীতে ট্রাফিক এডুকেশন ও ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং না থাকার কারণেই ভয়াবহ যানজট। এ দুটি বিষয়ের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক এডুকেশনের বিষয়টি হচ্ছে ট্রাফিক সংক্রান্ত যত নিয়মনীতি আছে, সেগুলো মেনে চলা। দ্রুতগতিতে গাড়ি না চালানো, ওভারটেকিং ও রং পার্কিং না করা, ফুটপাথ দিয়ে পথচারীদের হাঁটা এসব বিষয় ট্রাফিক এডুকেশনের অন্তর্ভুক্ত। সিলেট নগরীতে এ বিষয়গুলো কেউ মানতে চায় না। তিনি বলেন, ট্রাফিক আইন অমান্য করায় প্রতি মাসে আমরা গড়ে পাঁচ হাজার মামলা দিচ্ছি।  তারপরও মানুষের সচেতনতা বাড়ছে না। এসএমপির উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়ে বলেন, সিলেট নগরীতে হাত দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এটা ১৫০ বছরের পুরনো পদ্ধতি। এ ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করতে হবে। ডিজিটাল ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম চালু করতে হবে। আধুনিক সিগন্যাল বাতি লাগাতে হবে। এগুলো হচ্ছে ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং। তিনি বলেন, নগরীর সব সড়ক প্রশস্ত করতে হবে, সড়কের দুই পাশে ফুটপাথ থাকবে। সড়কে গর্ত থাকবে না, সংস্কার কাজ করা হবে দ্রুত। এগুলোও ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়। এসব বিষয়ের সুরাহা না হলে শুধু ট্রাফিক এনফোর্সমেন্টের মাধ্যমে যানজট নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এসএমপির ট্রাফিক শাখায় বর্তমানে ২১২ জন সদস্য কর্মরত আছেন। আরও অন্তত ১০০ সদস্য প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ফয়সাল মাহমুদ। সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, যানজট নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম চালুর পরিকল্পনা আমাদের আছে। তবে এর আগে সড়কগুলো প্রশস্তের কাজ শেষ করতে চাই। অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোর বিষয়ে সুরাহায় পৌঁছাতে চাই। একসঙ্গে সব করা সম্ভব নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর