মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রস্তুত আন্ডারপাস সুরসপ্তক

জয়শ্রী ভাদুড়ী

প্রস্তুত আন্ডারপাস সুরসপ্তক

রাজধানীর বনানীর এমইএস মোড়ে প্রস্তুত নতুন আন্ডারপাস সুরসপ্তক। শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে এখন ছবি : রোহেত রাজীব

রাস্তার পাশে সবুজে মোড়ানো স্বচ্ছ নীল গ্লাসের স্থাপনা। সিঁড়ি দিয়ে নামলে চোখে পড়বে দেয়ালে বিশাল ফ্রেমে বাঁধানো বরিশালে লাল শাপলা হাতে শিশুর অকৃত্তিম হাসি। পাশে বগুড়ায় তপ্ত রোদে শুকনা মরিচ পরিচর্যায় ব্যস্ত গৃহবধূর কর্মক্লান্ত দৃশ্য। আরেক পাশের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমির চিত্র। নির্মাণকাজ শেষে রাজধানীর বনানী এমইএস মোড়ের নতুন আন্ডারপাস ‘সুরসপ্তক’ এ চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। এ বছরই পথচারী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার প্রত্যাশায় চলছে বিদ্যুৎ সংযোগসহ খুঁটিনাটি কাজ।

২০১৮ সালের ২৯ জুলাই। বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের প্রতিযোগিতায় দুর্ঘটনায় শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম মীম নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরও ১০ জন। মুহূর্তেই সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এ খবর পাওয়া মাত্রই শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধ এবং বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভটি মুহূর্তে রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় নিরাপদ সড়ক আন্দোলন।

আন্দোলনের মধ্যেই বিমানবন্দর সড়কের দুর্ঘটনাস্থলে আন্ডারপাস করার প্রতিশ্রুতি দেয় সরকার। ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট ঢাকা-এয়ারপোর্ট মহাসড়কে শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ সংলগ্ন পথচারী ‘রমিজউদ্দিন আন্ডারপাস’ নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। দুই বছর পর আন্ডারপাসটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। চলতি বছরের যে কোনো সময় এটি খুলে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এখন পর্যন্ত এটিই দেশের সবচেয়ে বড় ও অত্যাধুনিক আন্ডারপাস।

রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলোর মধ্যে মহাখালী-বিমানবন্দর সড়কটি অন্যতম। এমইএস মোড় হয়ে কয়েকটি রুটের যানবাহন চলাচল করে। সেনা এলাকায় প্রবেশ দ্বারসহ এখানে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হোটেল এবং হাসপাতাল। ফলে প্রতিনিয়ত দ্রুতগতির গাড়ি থামিয়ে সড়ক পারাপার হতে হয় পথচারীদের। আন্ডারপাসটি খুলে দেওয়া হলে দুর্ভোগ কমবে পথচারীদের, কমবে দুর্ঘটনা। আন্ডারপাসটির দৈর্ঘ্য ৪২ মিটার, উচ্চতা ১৫ মিটার। নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

আন্ডারপাস ঘুরে দেখা যায়, এস্কেলেটর ও লিফট সংযোজনের কাজ শেষ হয়েছে। জেনারেটর মেশিন ও বৈদ্যুতিক তার সংযোজনের কাজ চলছে ত্বরিতগতিতে। ত্রিভুজ আকৃতির মিউজিয়াম ‘সুরসপ্তক’-এর দেয়ালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সাত বীর শ্রেষ্ঠের ম্যুরাল রয়েছে। দেয়ালের অন্য প্রান্তে শহীদ মিনার ও জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি। মধ্যবর্তী দেয়ালে ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড লাগানো হয়েছে। সুরসপ্তক আন্ডারপাসে রয়েছে চারটি সুড়ঙ্গ। এটিকে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে ২৪ ঘণ্টাই আলোর ব্যবস্থা থাকে। সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশ করতে পারবে সূর্য ও চাঁদের আলো। ভিতরে রাখা হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। এ ছাড়া উভয়পাশে চারটি প্রবেশ ও বহির্গমন পথ রয়েছে। বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও শিশুরা সহজেই এটিকে ব্যবহার করতে পারবেন। সড়কের পূর্বপাশে পথচারীদের বিশ্রামের জন্য জায়গা রাখা হয়েছে। রোগীদের হুইল চেয়ার ব্যবহার করে যাওয়ার জন্য রয়েছে পৃথক ঢালু পথ।

নির্মাণ প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ না ঘটলে নির্মাণকাজ এ বছরের মার্চে শেষ হয়ে যেত। এখন বিদ্যুৎ সংযোগসহ ডিজিটাল আঙ্গিকে সাজানোর কাজ চলছে। চলছে ভিতরে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা। আন্ডারপাসটি নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা কাটা ছাড়াই, মাটির নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ করে। আন্ডারপাসটি সম্পূর্ণ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। এটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। বাইরের যানবাহনের শব্দ ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। এটির সৌন্দর্য অব্যাহত রাখতে থাকবে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচারের ব্যবস্থা।

 

সর্বশেষ খবর