মঙ্গলবার, ১১ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

উৎসবে উধাও করোনার স্বাস্থ্যবিধি

জয়শ্রী ভাদুড়ী

উৎসবে উধাও করোনার স্বাস্থ্যবিধি

করোনার স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ। ফেরিঘাটে ও ঢাকার ফুটপাথে মানুষের ঢল ছবি : রোহেত রাজীব ও জয়ীতা রায়

উৎসবের রং লেগেছে সারা দেশে। ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা। করোনা সংক্রমণ রোধে নিজ নিজ অবস্থানে থাকার সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাড়ি ফিরছে লাখ লাখ মানুষ। মহামারী করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণ দিন দিনই বাড়ছে। তবুও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে দলে দলে বাড়ি ফিরছে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ। ট্রেন ও লঞ্চও চালু নেই। মানুষ ছোট ছোট গাড়িতে করে ভেঙে ভেঙে বাড়ি যাচ্ছে। এমন বেপরোয়া উদ্দাম উৎসবযাত্রা আগে কখনো এভাবে চোখে পড়েনি। বাধা পেয়েই যেন বেপরোয়া হয়ে উঠছে মানুষ। গত বছর করোনার ভয়ে ঈদ করা হয়নি। প্রায় বন্দী জীবনই কাটিয়েছে রাজধানীবাসী। এবার আর বাঁধ মানছে না। অথচ গত বছরের এই সময়ের চেয়ে এবার করোনার ভয়াবহতা বেশি। অন্যদিকে প্রতিবেশী ভারতের সংক্রমণ ও মৃত্যুর ভয়াবহতায় বাংলাদেশও উদ্বিগ্ন। কিন্তু ঈদ যাত্রীদের যেন সেসবের কোনো কিছুই স্পর্শ করছে না। ঈদযাত্রা ঠেকাতে সরকারি নৌপরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) ফেরি বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু যাত্রীদের চাপে ফেরি চালু করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। পরে ফেরিঘাটে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। মানুষ সবকিছু উপেক্ষা করে বাড়ি যাচ্ছে। মানুষ নিজেরা সচেতন না হলে সরকারের আর কী করার থাকে।   

পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের ঢল চলছে। গত কয়েক দিন ধরে ঘাটে মানুষের ভিড় থাকলেও গতকাল সোমবার তা আরও বেড়েছে। সকাল থেকেই ঘরে ফেরা মানুষের গাদাগাদি ভিড় বাড়তে থাকে। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে যাত্রীরা ঢেউয়ের মতো এসে ফেরিঘাটে যেন আছড়ে পড়ছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে যাত্রীদের চাপ।

ঢাকার গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাটের উথলী পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হলেও যাত্রীদের ঈদে বাড়ি যাওয়া বন্ধ করা যাচ্ছে না। তারা ঢাকা থেকে বিভিন্ন বাইপাস রোডে সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেলে করে পাটুরিয়া-আরিচা ঘাটে পৌঁছে যাচ্ছেন। স্বাভাবিক সময়ের মতো অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে বাড়ি যাচ্ছেন যাত্রীরা।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অফিসের ডিজিএম জিল্লুর রহমান জানান, দিনে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা হলেও লাশবাহী ও অ্যাম্বুলেন্সসহ কিছু ছোট গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। তবে দুই আড়াই ঘণ্টা পরপর রজনীগন্ধ্যা, বনলতাসহ ছোট চারটি ফেরি দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে। ঘাটে ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীরা ঘাটে এসেই ফেরিতে উঠে পড়ছেন। কোনো বাধা-নিষেধ মানছেন না। তাদের কারণে অ্যাম্বুলেন্স ও লাশের গাড়ি ফেরিতে উঠতে পারছে না।

এদিকে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাটে গত তিন দিন ধরে ভিড় করছেন হাজার হাজার যাত্রী। দিনে ফেরি বন্ধ রেখে, রাতে পণ্যবাহী যান পারের নির্দেশনা থাকার পরও মানুষের ভিড় বাড়ছেই। বিভিন্ন জরুরি পরিবহন পারাপারের জন্য থাকা ফেরিতে করে পারাপারও হচ্ছেন তারা। অবশ্য ঘাট থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে সড়কে বিজিবির  চেকপোস্টের কারণে কোনো যাত্রীবাহী যান ঘাটে প্রবেশ করতে পারছে না। তবে নানা পথ ঘুরে, পায়ে হেঁটে, পাহারা গলে ঠিকই যাত্রীরা পৌঁছে যাচ্ছেন ঘাটে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের উপ-ব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম বলেন, জরুরি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্য যমুনা নামের একটি ডাম্প  ফেরি সকালে ছেড়ে গেছে। যদি নির্দেশনা আসে তাহলে রাতে আবার ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে।

অন্যদিকে, আগের দুই দিনের মতো গতকালও জেলেদের মাছ ধরার ট্রলারে করে পদ্মা নদী পাড় হচ্ছেন ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। তবে নৌ-পুলিশের অভিযানও অব্যাহত আছে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মোট ১৩টি ট্রলার জব্দ করা হয়েছে। মাওয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবীর এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, শিমুলিয়া ঘাটের পাশের এলাকা, মাওয়া মৎস্য আড়ত, কান্দিপাড়া থেকে ১৩টি ট্রলার জব্দ করা হয়। এ সময় ট্রলার চালকসহ ১১ জনকে আটক করা হয়েছে।

শুধু বাড়ি ফেরাই নয়, ঈদ কেন্দ্র করে শপিং মল, বিপণিবিতানে ছুটছে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তও। ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব স্তরের ক্রেতা সমাগমে রাজধানীর শপিং মলগুলোয় কেনাকাটার ধুম লেগেছে। এমনকি ফুটপাথেও ক্রেতাদের ভিড় করতে দেখা গেছে। অনেক রাত পর্যন্ত কেনাকাটা করছেন নগরবাসী।

রাজধানীর নিউমার্কেট, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, মিরপুর-১, মিরপুর-১০ নম্বর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বড় বড় মার্কেট ও শপিং মলে  মোটামুটিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও ফুটপাথের ভাসমান ব্যবসায়ীদের চিত্র ভিন্ন। তারা কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এমনকি তাদের ক্রেতারাও না। বরং ক্রেতারা গা ঘেঁষাঘেঁষি দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করছেন। আর দুপুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব বাণিজ্য কেন্দ্র এক ধরনের জনসমুদ্রে রূপ নিচ্ছে।

ফুটপাথের বিক্রেতারা বলছেন, রাত ৮টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা থাকার কারণে সকালের চেয়ে দুপুর ও বিকালে ভিড় বেশি হচ্ছে। গতকাল ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। চন্দ্রিমা মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্ক, মিরপুর-১০ নম্বর শপিং সেন্টার, মিরপুর-১ নম্বর নিউমার্কেটে নিয়ম মেনে ঢুকতে দেখা গেলেও মার্কেটের ভিতরে চিত্র উল্টো। জটলা বেঁধে চলাচল করতেও দেখা গেছে।

সর্বশেষ খবর