শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে রাস্তার খাবার

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্কুল-কলেজের সামনে মুখরোচক খাবার বিক্রি হয়। এসব খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। স্কুলের শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার

রাশেদ হোসাইন

স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে রাস্তার খাবার

 ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর লক্ষ্মীবাজার এলাকায় বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষ ফুটপাতের ওপর দুপুরের খাবার খাচ্ছেন। খাবারের ওপর মাছি উড়ছে। ধুলাবালি পড়ছে। ফুটপাতের নিচ দিয়ে ড্রেনের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সেখান থেকে কিছু মশা মাছি খাবারের ওপর এসে বসছে। কথা হয় রিকশাচালক আনিসুর রহমানের সঙ্গে। রিকশা চালানোর কারণে শহরের বিভিন্ন স্থানে তার খাবার খেতে হয়। নির্দিষ্ট জায়গায় খাওয়ার সুযোগ কম। হোটেলের তুলনায় দামে কম হওয়ায় ফুটপাতের এসব খাবারের প্রতি তার আগ্রহ বেশি। রাস্তার পাশে দোকানে যা কিছু পান তা দিয়েই তিনি ক্ষুধা মেটান। ফলে কিছু দিন পরপরই আনিসুর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কখনো ডায়রিয়া, কখনো গ্যাসের সমস্যা আবার কখনো ইউরিনের সমস্যা হয়। অসুস্থতা যেন তার পিছু ছাড়ছে না। রাস্তায় খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন বহু মানুষ। ঢাকার কয়েক লাখ রিকশাচালক প্রতিদিন রাস্তার পাশেই খাচ্ছেন সস্তা মানহীন খোলা খাবার।

পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের মতো ঢাকার ব্যস্ত অফিস কিংবা মার্কেটের আশপাশে যেসব খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে সেগুলোতে খাদ্য উপাদানের চেয়ে আবর্জনার পরিমাণ বেশি। কার্যকর তদারকি না থাকায় রাস্তার পাশের খাবার হোটেল কিংবা খোলা খাবারের দোকানগুলো হয়ে উঠছে রোগজীবাণুর অন্যতম উৎস। এসব খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষ।

রাস্তায় বের হলে মানুষের খাবারের প্রয়োজন হবেই। সেই বিবেচনায় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবার জনপ্রিয়। রাজধানীসহ সারা দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তার খাবারের ওপর নির্ভরশীল। দেড় কোটি মানুষের মেগা সিটি ঢাকায় লাখ লাখ মানুষ রাস্তার খোলা খাবারে অভ্যস্ত। কিন্তু রাস্তার খাবারগুলো সাধারণত স্বাস্থ্যসম্মত নয়। রাস্তায় পাওয়া যায় বলে দাম কম নয়। তবে মানের বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্কুল-কলেজের সামনে মুখরোচক খাবার বিক্রি হয়। এসব খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। স্কুলের শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার। ফুটপাতে এমন কিছু মুখরোচক খাবার রয়েছে যা দেখলে লোভ সামলানো কঠিন। কিন্তু খুব কম মানুষই জানে এসব খাবার কতটা ভয়ঙ্কর। ঝালমুড়ি, ফুচকা ও আচারে কৃত্রিম রং, ইস্ট, কলিফর্ম, সিসার মতো শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদান পেয়েছে বিশেষজ্ঞরা। খোলা খাবারের জীবাণুতে খুব সহজেই শিশুরা ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিসে আক্রান্ত হচ্ছে।

আলু ভর্তা করে তৈরি আলুর চপসহ বিভিন্ন খাবার রাস্তার ওপর বিক্রির জন্য দীর্ঘ সময় খোলা রাখা হয় বলে তা না খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তেলে ভাজা সমুচা, পাকোড়া খাওয়াও উচিত নয়। কারণ, এতে ব্যবহৃত তেলসহ উপাদানগুলো বাসি থাকায় গ্যাসের সমস্যা হয়। রাস্তায় বা ফুটপাতের জুস বা রস খাওয়া থেকেও সচেতন থাকা উচিত। এ ধরনের জুস যখন তৈরি হয়, তখন সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। শরবত তৈরিতে অপরিষ্কার পানি ব্যবহৃত হয়। যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খাদ্যভোগ ও ভোক্তা অধিকার সদস্য মো. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের ছেলে মেয়েরা রাস্তার খাবার খাচ্ছে। স্কুলের সামনে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাচ্ছে এ নিয়ে শিক্ষক অভিভাবক কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। এসব খোলা খাবার কোনো অবস্থায় নিরাপদ নয়। এসব খাবারে ধুলা ময়লা পড়ে। যা শরীরের জন্য খুবই অস্বাস্থ্যকর। তাদের কোনো সনদ নেই। খোলাবাজারে বেশিরভাগ ভাজা পোড়া জিনিস বিক্রি হয়। অনেক মুড়িতে দেখা যায় ইউরিয়া ব্যবহৃত হয় যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। আবার পুরনো কাগজের মোড়ক ব্যবহৃত হয় তা জটিল রোগ সৃষ্টি করে। এত বড় একটা সিস্টেম আমাদের একা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এই দায়িত্ব মূলত সিটি করপোরেশনের পালন করা উচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ বিষয় গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। শ্রীলঙ্কায় প্রতি ১ হাজার জনে একজন স্যানিটারি অফিসার রয়েছে। আমাদের অফিসে ২৫ জন মানুষ চাকরি করে এদের নিয়ে এত বড় শহর মনিটর করা সম্ভব নয়। আমাদের জনগণের সচেতন হতে হবে। পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে এ বিষয়ে সচেতনতা আনা সম্ভব নয়। আমাদের দেশে অন্য সব কিছুর লাইসেন্সের ব্যবস্থা থাকলেও ফুড রিলেটেড লাইসেন্সের ব্যবস্থা নেই। নিরাপদ খাদ্যের জন্য আইন সংশোধন হচ্ছে। এসব কিছু দ্রুত পরিবর্তন সম্ভব নয়। সচেতনতায় পরিবর্তন আনতে হবে।

সর্বশেষ খবর