শরতের আছে নিজস্ব বর্ণ আর গন্ধ। দেশীয় পোশাক ডিজাইনাররা শরতের জন্য বেছে নিয়েছেন- সাদা, নীল, সবুজ ও সোনালি রং। নীল আকাশ, সাদা কাশফুল, সোনালি সূর্য আর সবুজ ফসল
বর্ষা গেল, এলো শরৎ। প্রকৃতি সেজেছে কাশফুলে। মাতাল হাওয়া, নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর বিলের জলে শাপলা-কমলের জলকেলিতে মুখরিত প্রকৃতি। সময়-অসময়ে মেঘের আনাগোনা আর কখনো রোদের ঝিলিক; ক্ষণে ক্ষণে ঋতুরানির এমন দুরন্তপনা উচ্ছল কিশোরীকেও হার মানায়। এমন প্রকৃতিতে রঙে

শরতে পোশাকের কাপড়, রং এবং ডিজাইন নির্বাচন করা হয় বিশেষভাবে। বৈচিত্র্যময় পোশাক পরিধান করে বিকালের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারও বাসায় নিমন্ত্রণ, বন্ধুদের আড্ডায় মেতে উঠতে পারেন অনায়াসে। শরতে ফ্যাশন হাউসগুলো নীল-সাদার সমন্বয়ে বানিয়েছে শাড়ি। শুধু শাড়িতেই নয়, কামিজগুলোতেও প্রাধান্য পায় শুভ্র সাদা আর আকাশের নীলাভ রং। বেশিরভাগ নকশায় ঠাঁই পেয়েছে ফুলেল ও জ্যামিতিক মোটিভ। এ ছাড়া ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হালকা অ্যামব্রয়ডারি থাকতে পারে পোশাকগুলোয়। বেশিরভাগ নকশায় ঠাঁই পেয়েছে ফুলেল ও জ্যামিতিক মোটিভ।
শরতে সুতির পোশাকে রয়েছে কত-শত বৈচিত্র্য। গাঢ় নীল, হালকা নীল, আসমানি নীল, ময়ূরকণ্ঠী নীল, রয়েল ব্লু, নেভি ব্লু আরও কত কী? সঙ্গে সাদার মিশেল আর নকশার বৈচিত্র্য; এ নিয়ে বেশিরভাগ ফ্যাশন হাউস সাজিয়েছে তাদের শরৎ সংগ্রহ। শাড়ি বা কামিজের নীল জমিনে ফুটে ওঠে ফিরোজা, সাদা, ছাই, সোনালি, খয়েরি, সবুজ, হলুদ, গোলাপির নান্দনিক ডিজাইন। সুতি ছাড়াও সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্কসহ নানা কাপড়ে বানানো পোশাকে নীল-সাদা ধরা দিয়েছে নানাভাবে। এগুলোর ভিতর থেকে যে যার পছন্দমতো ডিজাইনের পোশাকটি জড়িয়ে নিচ্ছেন শরতের আগমনে।
পোশাকের ক্ষেত্রে সিল্ক কিংবা জর্জেট পরার এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। আরামদায়ক হবে লিনেন, ধুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, তাঁতের কাপড়ও। জর্জেট, জয়সিল্ক, সিল্ক কাপড়ের লং কামিজ, গাউন ধাঁচের পোশাক এখনকার উৎসবের জন্য ফ্যাশনেবল এবং আরামদায়ক। স্কার্ট, টপস, কুর্তি বেছে নিতে পারেন ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে। দৈনন্দিন অফিসে শাড়ি পরতে চাইলে এখন অনায়াসে পরতে পারেন তসর, অ্যান্ডি, তাঁত কিংবা কটন শাড়ি। রাতের দাওয়াতে সিল্ক, কৃত্রিম মসলিন বা কাতান শাড়ি এ আবহাওয়ায় দারুণ লাগবে।
তবে শরৎকাল মানেই যে, মেঘ-বায়ুর মেজাজ খোশ থাকবে এমনটাও নয়, মাঝে মাঝে মেঘের তর্জন-গর্জন আর প্রখর রোদের দাপটও থাকবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সর্বাবস্থার সাজ-পোশাকে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। তাই যে কোনো অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নিতে হালকা সাজের বিকল্প নেই। এমন আবহাওয়ায় ত্বকের ধরন বুঝে প্রসাধন ব্যবহার করতে হবে। আর রোদ থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিনই সেরা। আর বাড়ি ফিরে বাইরের ধুলাবালিমুক্ত ত্বক পেতে নিন স্ক্রাবার।
সময় এবং আবহাওয়া পরিবর্তনে বদলে যায় সাজও। শরতের এ সময়ে দিনের বেলা গরমে যেমন গাঢ় সাজ মানানসই নয়, তেমনি অন্যদের চোখেও তা দৃষ্টিকটু। তাইতো এ সময়ের সাজে স্নিগ্ধভাব থাকা চাই। এ আবহাওয়ায় হালকা মেকআপই ভালো। দিনের বেলায় ফাউন্ডেশন না লাগিয়ে হালকা কোনো ফেস পাউডার লাগিয়ে নিতে পারেন। এতে ত্বক অনেক বেশি মসৃণ ও স্নিগ্ধ দেখাবে। আর যদি ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতেই চান তবে ম্যাট ফাউন্ডেশন ভালো হবে। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে লাইট-ব্রাউন কালারের আইশ্যাডো লাগিয়ে নিলে অনেক বেশি ন্যাচারাল দেখাবে। দিনের সাজে চোখের নিচের পাতায় আইলাইনার অথবা মাশকারা না লাগানোই ভালো। বরং পোশাকের রং মিলিয়ে বেছে নিতে পারেন রঙিন কাজল। নীল, সবুজ, গোলাপি কাজলের রেখা টেনে নিতে পারেন চোখের কোণে। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে একাকার হবে আপনার এ সাজ। দিনের বেলা ব্লাশন না দিয়ে রাতে দিন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কপালে আলতো করে ছুঁয়ে দিন ছোট্ট একটি টিপ। শরৎ সাজে রাতের বেলায় একটু গাঢ় আই মেকআপ করতে পারেন, ভালো লাগবে। সে ক্ষেত্রে চোখটা সাজাতে পারেন মেরুন, কফি, নীল কিংবা সবুজের বিভিন্ন শেডে। এতে চোখের পাতায় সেজে উঠবে শরৎ। তবে প্রকৃতিতে যেহেতু রোদ-বৃষ্টির খেলা তাই এ সময় প্রসাধন হতে হবে পানিরোধক।
লেখা : ফেরদৌস আরা