শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
মানব প্রেমের মূর্ত প্রতীক

লালন সাঁই

সাইফ ইমন

লালন সাঁই

লালন ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক দার্শনিক। অসাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে তিনি পরমাত্মাকে, স্রষ্টাকে খুঁজেছেন গানে গানে। ধর্মীয় সীমাবদ্ধতার বাইরে মুক্তির পথ খুঁজেছেন। তার কণ্ঠে তৈরি হয়েছে মানবধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের জয়গান। চর্যাপদের মতো তার গানের অন্তর্নিহিত বিষয়াদি দিনের পর দিন মানুষের বোধকে ত্বরান্বিত করেছে সাম্যবাদিতা আর অসাম্প্রদায়িকতার দিকে। জাতভেদ আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লালন সাঁইয়ের গান এক নীরব মূলমন্ত্র, চেতনার শানিত অস্ত্র...

 

লালনের জীবন সম্পর্কে বিশদ কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। তার সবচেয়ে অবিকৃত তথ্যসূত্র তার নিজের রচিত ২৮৮টি গান। কিন্তু লালনের গানে তার জীবন সম্পর্কে কোনো তথ্য তিনি রেখে যাননি। তবে কয়েকটি গানে তিনি ‘লালন ফকির’ হিসেবে নিজেকে আখ্যায়িত করেছেন।

লৌকিক বাংলার সাংস্কৃতিক পুরোধা ব্যক্তিত্ব লালন সাঁই ছিলেন মূলত গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ। আর সেখানে তার সাধনা ও উপলব্ধির মাধ্যমে জাগরণের যে তরঙ্গ তুলেছিলেন তা বিস্ময়কর। লালন সাঁইয়ের জন্ম ১৭৭৪ সালের ১৪ অক্টোবর। তিনি ছিলেন সাধক, গায়ক, সুরকার, কবি। ছিলেন সামাজিক দায়বদ্ধ একজন মানুষ। জনশ্রুতি রয়েছে, লালন জন্মেছিলেন হিন্দু কায়স্থ পরিবারে। শৈশবে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে সিরাজ সাঁই নামের এক মুসলমান সাধক লালনকে নিজ বাড়িতে নিয়ে সেবা-শুশ্রƒষা করে বাঁচিয়ে তোলেন। লালন ছিলেন সব সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে। তবে তার সমাজচিন্তা, মানবপ্রেম এবং মনুষ্যত্ববোধের পরিচয় আজও উপেক্ষিত। এরপরও দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অসংখ্য মানুষ এই আধ্যাত্মিক সাধকের দর্শন অনুসরণ করতে আসছে। সহজ ভাবনার ভাববাদী মানুষ এই সাধককে স্মরণ করতে তার আখড়ায় আসেন ফাল্গুন-চৈত্র মাসে  দোলপূর্ণিমা উৎসব ও কার্তিক মাসে লালন সাঁইজির তিরোধান দিবসের মহোৎসবে। লালনের জীবন সম্পর্কে বিশদ কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। তার সবচেয়ে অবিকৃত তথ্যসূত্র  হলো নিজের রচিত ২৮৮টি গান। কিন্তু লালনের কোনো গানে তার জীবন সম্পর্কে কোনো তথ্য তিনি রেখে যাননি, তবে কয়েকটি গানে তিনি নিজেকে ‘লালন ফকির’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তার মৃত্যুর পনেরো দিন পর কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত হিতকরী পত্রিকার সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, ‘ইহার জীবনী লিখিবার কোন উপকরণ পাওয়া কঠিন। নিজে কিছু বলিতেন না। শিষ্যরা তাঁহার নিষেধক্রমে বা অজ্ঞতাবশতঃ কিছুই বলিতে পারে না।’ লালনের জন্ম কোথায় তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের ঝিনাইদহ  জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হারিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বলে অনেকে দাবি করেন। কোনো কোনো লালন গবেষক মনে করেন, লালন কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার চাপড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাড়ারা গ্রামে জন্মেছিলেন।

লালন সাঁই জীবিত ছিলেন ১১৬ বছর। অশ্বারোহণে দক্ষ ছিলেন এবং বৃদ্ধ বয়সে অশ্বারোহণের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে যেতেন। শেষ বয়সেও ঘোড়ায় চড়ে যাতায়াত করতেন। মারা যাওয়ার এক মাস আগে তার পেটের পীড়া হয়। তখন পানি জমে হাত-পা ফুলে যায় তার। সে সময় দুধ ছাড়া তিনি অন্য কোনো খাবার খেতেন না। তবে খাবারের পাতে মাঝেমধ্যে মাছ চাইতেন। মৃত্যুর আগের দিন ভোররাত পর্যন্ত গান শুনেছেন। এরপর ভোর পাঁচটার দিকে শিষ্যদের ডেকে বলেছেন, ‘আমি চলিলাম।’ এর কিছুক্ষণ পরই মারা যান লালন।

 

গুরু সিরাজ সাঁই

লালন ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক দার্শনিক। অসাম্প্রদায়িকতাকে পুঁজি করে তিনি পরমাত্মাকে, স্রষ্টাকে খুঁজেছেন গানে গানে। শৈশবে বাবা-মাকে হারালে এক তীর্থযাত্রী দলের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন। এ সময় বসন্ত  রোগে আক্রান্ত হলে লালনকে পথে ফেলে অন্য যাত্রীরা চলে যায়। সিরাজ সাঁই নামের এক মুসলমান সাধক তাঁকে নিজ বাড়িতে নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা করে বাঁচিয়ে তোলেন। সেই থেকে সিরাজ সাঁইই লালনের প্রথম গুরু। সিরাজ সাঁই ছিলেন বাঙালি বাউল সাধক এবং দার্শনিক। তিনি ফকির সিরাজ, দরবেশ সিরাজ, সিরাজ সাঁই, সিরাজ শাহ ইত্যাদি নামেও পরিচিত। তিনি বাউল গানের প্রবক্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বাউল সম্রাট লালন তার কাছে বাউল ধর্মে দীক্ষিত হন এবং জীবদ্দশায় লালন তার বহু গানে সিরাজ সাঁইয়ের কথা উল্লেখ করেন। লালনের গুরু হিসেবেই পরবর্তীতে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার হরিশপুর গ্রামে সিরাজ সাঁইয়ের সমাধি অবস্থিত।  স্বশিক্ষিত লালনের কবিত্বশক্তি, সমাজ-মনস্কতা ও শিল্পচেতনা ছিল অসাধারণ। আর এর পেছনে রয়েছে গুরু সিরাজ সাঁইয়ের অবদান বলে মনে করেন অনেকে। লালনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। সিরাজ সাঁইয়ের কাছেই জীবন দর্শনের শিক্ষা লাভ করেন লালন। লালনের গানে ভাষা-সুর-অলঙ্কারের এমন শিল্পমন্ডিত রূপ আমাদের জানান দিয়ে যায় প্রতি মুহূর্তেই। ভুলিয়ে দেয় লালন নিরক্ষর গ্রাম্য কবি।

 

হিন্দু ছিলেন নাকি মুসলমান

লালন হিন্দু না মুসলমান ছিলেন এ নিয়ে গবেষকদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক চলছেই। অনেকের দাবি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন-জীবনীকার বসন্তকুমার পাল, গবেষক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, অন্নদাশঙ্কর রায় প্রমুখ বিশিষ্টজনেরা লালনকে হিন্দু পরিবারের সন্তান বলেই উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, কবি জসীমউদ্দীন, মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন প্রমুখ লেখকেরা লালনকে ‘ধর্মান্তরিত মুসলমান’ বলে মতামত দিয়েছেন। তবে মজার বিষয় হলো, নিজের একটি গানে লালন লিখেছেন, ‘সব  লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে/ লালন কয় জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে।’ লালনের মৃত্যুর পর, ১৮৯০ সালের ৩১ অক্টোবর কুষ্টিয়া থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক হিতকরী পত্রিকায় ছাপা হয়েছে যে, ‘লালন নিজে কোনো সাম্প্রদায়িক ধর্মাবলম্বী ছিলেন না। অথচ সব ধর্মের লোকেই তাহাকে আপন বলিয়া জানিত।’ লালনের লেখা থেকে বোঝা যায় যে, তিনি অসা¯প্রদায়িক ছিলেন। তিনি ধর্ম বর্ণ জাতের ঊর্ধ্বে মানুষকে স্থান দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় নিজের আখড়ায় শিষ্য-পার্শ্বচরদের নিয়ে জীবনযাপন করতেন লালন। ‘অধর মানুষ’-এর সন্ধানে সাধনপথে তার ছিল নিরন্তর পথচলা। বিষয়াসক্তি কিংবা জাগতিক সমস্ত লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে ছিলেন আজীবন। সব ধর্মের লোকই তার কাছে আসতেন।

 

চলছে গবেষণা...

‘প্রবাসী’ পত্রিকার ‘হারমনি’ বিভাগে রবীন্দ্রনাথ নিজেই লালনের কুড়িটি গান প্রকাশ করেন। সাঁইজির গান শুনে কবিগুরু যে রীতিমতো বিমোহিত হয়েছেন তা বলাই বাহুল্য।

জীবনের অধিকাংশ সময় গানে গানে জাত-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষের জয়গান গেয়েছেন লালন। লালনের ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’সহ মোট ২১টি গান সর্বপ্রথম মুখের শব্দ থেকে কাগজে ছাপার অক্ষরে ঠাঁই পেয়েছিল তাঁর ভাবশিষ্য ও ঘনিষ্ঠ সহচর কাঙাল হরিনাথের এম.এন প্রেসের মুদ্রণে। আমরা লালন সাঁইজির গানের অন্যতম সংগ্রাহক হিসেবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামও জানতে পারি। প্রায় শ’ খানেকের ওপর এই মরমি সাধকের গানের সংগ্রাহক রবীন্দ্রনাথ নিজেই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও লালন সাঁইজির মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে কি না, তা নিয়ে এখন পর্যন্ত বিতর্ক রয়েছে অবশ্য। কারও ধারণা, দুজনের সাক্ষাৎ হয়েছে। অন্যপক্ষের মত, দেখা হওয়ার স্বপক্ষে প্রামাণ্য কোনো দলিল-দস্তাবেজ নেই। কিছু গবেষক অবশ্য এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, রবীন্দ্র-সহোদর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে লালনের সাক্ষাৎ হয়েছে এবং তিনি তখন লালনের একটি স্কেচও এঁকেছিলেন। তবে জানা যায়, ‘প্রবাসী’ পত্রিকার ‘হারমনি’ বিভাগে রবীন্দ্রনাথ নিজেই লালনের কুড়িটি গান প্রকাশ করেন। অনেকে বলেন, লালনের গান প্রথম রবীন্দ্রনাথই বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে সচেষ্ট হন। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়’, গানটি কবিগুরু ইংরেজিতে ভাষান্তর করে সবার সামনে এই মহান মরমি সাধক ও দার্শনিককে তুলে ধরেন। ফলে দেশীয় পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও এ মানবতাবাদী গায়ক, সাধক ও দার্শনিকের চিন্তা-চেতনা এবং জীবন দর্শন আরও দৃশ্যমান হয়ে উঠতে থাকে। এভাবে ধীরে ধীরে সাঁইজি সমগ্র বিশ্বের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে থাকেন। এখন তো বিশ্বব্যাপী লালন দর্শন নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চলছে।

 

লালন সাঁইয়ের

বাণী

শুনি মরিলে পাব বেহেস্তখানা, তা শুনে তো মন মানে না...বাকির লোভে নগদ পাওনা, কে ছাড়ে এই ভুবনে।

এমন মানব জনম আর কি হবে!

মন যা করো তরায় করো এই ভবে।

ভবে মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার

সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তার।

ব্রাহ্মণ চণ্ডাল চামার মুচি

একি জলেই সব হয় গো সুচি

দেখে শুনে হয় না রুচি

যমে তো কাউকে ছাড়বে না।

মনের কথা বলবো কারে, কে আছে সংসারে।

আমি ভাবি তাই, আর না দেখি উপায়

কার মায়ায় বেড়াই ঘুরে। 

কলঙ্ক না লাগে যদি

ভালোবেসে লাগে কি ভালো

আসবার কালে কী জাত ছিলে, এসে তুমি কী জাত নিলে। 

জাত গেল জাত গেল বলে

একি আজব কারখানা

সত্য কাজে কেউ নয় রাজি

সব দেখি তা না না না।

এমন সমাজ কবে গো সৃজন হবে। যেদিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান জাতি-গোত্র নাহি রবে।

খাঁচার ভিতর অচিন পাখি

কেমনে আসে যায়

তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি

দিতাম পাখির পায়।

 

লালন ও দেহতত্ত্ব

এই দেহের ভিতরেই রয়েছে চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র, সব পাহাড়-পর্বত, নদ-নদী, বৎসর, মাস-দিবস-তিথিক্ষণ। এই দেহেই সত্যের মন্দির, সব তত্ত্বের বাহন। তাই বলা হয়েছে, যা আছে ভান্ডে/তা আছে ব্রহ্মান্ডে।

লালন মানবতাবাদে বিশ্বাসী- এ বিষয়ে সবাই একমত হবেন তার রচনাগুলো পড়লেই। লালন মানবতার বাণী প্রচার করেন। বাউল মতে, বৈষ্ণব ধর্ম এবং সুফিবাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বাউলরা সবচেয়ে গুরুত্ব দেয় আত্মাকে। তাদের মতে, আত্মাকে জানলেই পরমাত্মা বা সৃষ্টিকর্তাকে জানা যায়। আত্মা দেহে বাস করে। তাই তারা দেহকে পবিত্র জ্ঞান করে। বাউল সম্রাট লালন জীবনদর্শন সম্পর্কে অনেক গভীর কথা বলেছেন। মানুষই সর্বোচ্চ আসনে০ আসীন। বিশ্বাস এই যে মানুষের মাঝে এক মনের মানুষের বাস। লালনের বহু গানে এই মনের মানুষের প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়েছে। সব মানুষের মাঝেই ঈশ্বর বাস করেন। আত্মা তাদের গুরুত্বের বিষয়। যার দেহ পিঞ্জরে নিত্য যাওয়া-আসা। যা কোনো বাঁধনই মানে না। লালন ভক্ত বাউলরা মানেন, দেহের মধ্যে স্থিত রয়েছে বিশ্বের সবকিছু। শুধু তা চিনতে হবে। অচেনারে চিনতে পারলেই সব পাওয়া হয়ে যাবে। আত্মার দেহে অবস্থান হেতু দেহকে কেন্দ্র করেই তাদের সব

তত্ত্বকথা। সাধকদের মতে, সব সত্য শুধু অন্তরে নয়, আমাদের দেহের ভিতরেও। যে সত্য বিরাজিত বিশ্বব্রহ্মান্ডের প্রতিটা কোনায় সেই একই বিপুল প্রবাহের ভিতরে একই সত্যই বিরাজিত মানব দেহের ভিতরের সব জৈবিক প্রবাহের ভিতরে।

 

লালনের মাজার

বছরের প্রধানতম দুটি লালন অনুষ্ঠান দোল পূর্ণিমার ‘লালন স্মরণোৎসব’ এবং পয়লা কার্তিকের ‘লালন তিরোধান দিবস’-এর তিন দিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং বহির্বিশ্ব থেকে লাখ লাখ লালন অনুরাগী, ভক্ত, বাউল, সাধু, গুরু এবং দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মাজার প্রাঙ্গণ আর এতদ্সংশ্লিষ্ট সমগ্র এলাকা।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়া গ্রামে কালীগঙ্গা নদীর তীরে বাউল সম্রাট লালন সাঁইয়ের মাজার। তার মৃত্যুর পর শিষ্যরা এখানেই গড়ে তোলে মাজার বা স্থানীয়দের ভাষায় লালনের আখড়া। বিশাল গম্বুজে তার সমাধি ঘিরে সারি সারি শিষ্যের কবর রয়েছে। এ মাজারটি বাউলদের তীর্থস্থান। মাজার থেকে কিছু দূরে রয়েছে একটি ফটক। এ ফটক দিয়েই মাজারে প্রবেশ করতে হয়। প্রতি বছর তার মৃত্যুবার্ষিকীতে সাধু-ভক্তদের পাশাপাশি লালনের টানে ছুটে আসে লাখো পর্যটকের দল। মাজারের পাশে রয়েছে লালন মিউজিয়াম। লালনের একটি দরজা, লালনের বসার জলচকি, ভক্তদের ঘটি-বাটি ও বেশকিছু দুর্লভ ছবি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। মাজার থেকে বেরিয়ে সামনে এগিয়ে গেলে দেখতে পাবেন লালনের আবক্ষ মূর্তি। বছরের প্রধানতম দুটি লালন অনুষ্ঠান দোল পূর্ণিমার ‘লালন স্মরণোৎসব’ এবং পয়লা কার্তিকের ‘লালন তিরোধান দিবস’ এর তিনদিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং বহির্বিশ্ব থেকে লাখ লাখ লালন অনুরাগী, ভক্ত, বাউল, সাধু, গুরু এবং দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মাজার প্রাঙ্গণ আর এতদ্সংশ্লিষ্ট সমগ্র এলাকা। মনের মানুষের সন্ধান করতে যেয়ে বলেছেন, ‘বাড়ির কাছে আরশী নগর, সেথা এক পড়শি বসত করে, আমি একদিনও না দেখিলাম তারে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর