রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিশ্বখ্যাত যত পর্যটক

আবদুল কাদের

বিশ্বখ্যাত যত পর্যটক

এক সময় মানুষ আশপাশের যতটুকু জানত, তাকেই পুরো পৃথিবী মনে করত। সে সময় কেবল পর্যটক ও অভিযাত্রীরা পৃথিবীকে জানার স্পৃহা থেকে বেরিয়ে পড়তেন, পাড়ি জমাতেন অজানার উদ্দেশে। বণিকরা বাণিজ্য করতেন, আর পর্যটকরা বেরিয়ে পড়তেন ভ্রমণে।  এ দুই সম্প্রদায়ের লোকজনই নিয়ে আসতেন দূর-দেশান্তরের শিল্পকলা, সংস্কৃতি, ধন-সম্পত্তি, আচার-ব্যবহারের খবরাখবর। তার মধ্যে সেরা পর্যটকদের নিয়ে আজকের রকমারি।

 

আমেরিকা আবিষ্কার

ক্রিস্টোফার কলম্বাস

এক সময় বণিকরা বাণিজ্য করতেন। প্রাচীনকালে চীন থেকে নানা জিনিসপত্র যেত ইউরোপে। এসব পণ্যের বণিক ছিলেন মোঙ্গল, অটোমান তুর্ক ও আরবরা। আর অভিযাত্রীরা বেরিয়ে পড়তেন ভ্রমণে। অনেক অভিযাত্রী ভ্রমণের কাহিনি বিস্তারিত লিখে রাখতেন ডায়েরির পাতায়। ক্রিস্টোফার কলম্বাস ছিলেন তাদেরই একজন। তিনি ইতালির জেনোয়া শহরের এক সাহসী নাবিক। প্রায় ৫০০ বছর আগে আমেরিকা আবিষ্কার করেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। আনুমানিক ১৪৫১ সালে জন্ম নেওয়া এই নাবিক ২২ বছর বয়সে যোগ দেন এক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে। তার ধারণা হলো আটলান্টিক মহাসাগর দিয়ে ক্রমাগত জাহাজ চালিয়ে গেলে ভারতের পশ্চিম উপকূল বা জাপানের কাছাকাছি কোথাও পৌঁছানো যাবে। মূল জাহাজ সান্তা মারিয়া ও অন্য দুটি জাহাজ নিনা ও পিন্টা নিয়ে ১৪৯২ সালের ৩ আগস্ট সমুদ্রপথে ক্রিস্টোফার কলম্বাস অভিযান শুরু করেছিলেন। অক্টোবর মাসের ১২ তারিখ আমেরিকা মহাদেশে পদচিহ্ন ফেলেন কলম্বাস। ভারতে পৌঁছানোর জলপথ আবিষ্কার করতে গিয়ে কলম্বাস ১৪৯২ সালে আমেরিকা মহাদেশ খুঁজে পান। তিনি ও তার সঙ্গীরা তখনো জানতেন, ভারতের কোনো দ্বীপে পৌঁছেছেন। কলম্বাস এর নামও দেন ‘সান সালভাদর’। এরপর মোট চারবার স্পেন থেকে আমেরিকা মহাদেশে অভিযান চালান তিনি। মহাদেশের মূল ভূখন্ডেও তিনি পৌঁছান। অথচ তখনো জানতেন না তারা নতুন এক মহাদেশে পৌঁছেছেন। সে কথাটি বের করেন আমেরিগো ভেসপুচি নামের আরেক নাবিক। তার নাম অনুসারেই হয় আমেরিকার নাম। তবে এর ৩০০ বছর আগে মুসলিমরা আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করেছিলেন বলে ধারণা অনেকের।

 

৭৫ হাজার মাইল পাড়ি

ইবনে বতুতা

প্রায় ৭০০ বছর আগে সুদূর মরক্কোর তানজিয়ার থেকে পৃথিবী দেখার নেশায় ঘর ছেড়েছিলেন এক মুসলিম যুবক। তিনি ইবনে বতুতা। ২১ বছর বয়সেই শুরু করেন পর্যটক জীবন। এরপর প্রায় ৩০ বছর বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন। ইরাক, ইরান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ঘুরে এসেছিলেন বাংলায়ও। জীবনের ৩০ বছরের ভ্রমণে পাড়ি দিয়েছেন ৭৫ হাজার মাইল বা ১ লাখ ২১ হাজার কিলোমিটার পথ। অনেকে মার্কো পোলোকে তার সমকক্ষ মনে করেন। তবে মার্কো পোলোর চেয়ে ইবনে বতুতা বেশি অঞ্চল ভ্রমণ করেছেন। তার পুরো নাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ। ১৩০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মরক্কোর তানজিয়ারে জন্মগ্রহণ করেন ইবনে বতুতা। যিনি ছিলেন একাধারে একজন সুন্নি মুসলিম পর্যটক, চিন্তাবিদ, বিচারক। তিনিই একমাত্র পরিব্রাজক যিনি তার সময়কার সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন এবং সুলতানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বিশ্ব ভ্রমণের সময় তিনি জীবনের অনেকটা সময় কাজির চাকরি করেছেন। তিনি মন্ত্রীর মেয়েকে বিয়েও করেছিলেন। এমনকি কখনো রাষ্ট্রদূত কখনো সেনা কমান্ডের দায়িত্বও পেয়েছেন। বেশির ভাগ ভ্রমণে ইবনে বতুতার সঙ্গে কাফেলা ছিল। তিনি নিজে একজন জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। তার পূর্বপুরুষরা কাজির পেশায় ছিলেন। ফলে তিনি যে দেশে গেছেন সেখানেই রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছেন। প্রায় ৪০টি দেশ ভ্রমণ করে নিজ দেশে ফিরলে তখনকার সুলতান আবু ইনান ফারিস তার ভ্রমণকাহিনি লিপিবদ্ধ করার জন্য কবি নিয়োগ করেন।

 

উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরু সব তার জানা

স্যার এডমন্ড পার্সিভাল হিলারি

মাথার ওপর সুউচ্চ আকাশ। নয়তো পৃথিবীটা নিচে পড়ে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ‘মাউন্ট এভারেস্ট’ প্রথমবার জয় করা মানুষ এডমন্ড হিলারি। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু সম্পর্কে সবই তার জানা। তার পুরো নাম স্যার এডমন্ড পার্সিভাল হিলারি। তিনি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের একজন পর্বতারোহী এবং অভিযাত্রী। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে ১১টা বেজে ৩০ মিনিটে নিউজিল্যান্ডের পর্বতারোহী এডমান্ড হিলারি আর শেরপা তেনজিং নোরগে প্রথম মানুষ হিসেবে এভারেস্টের শৃঙ্গে পা রাখেন। জয় করেন মাউন্ট এভারেস্ট। সে সময় নিজেদের অক্সিজেনের সিলিন্ডারগুলো নিজেরা বহন করতেও কষ্ট হয়েছিল তাদের। ১৯১৯ সালের ২০ জুলাই জন্মগ্রহণ করা এই পর্বতারোহী ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মে তিনি ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলের অংশ হিসেবে নেপালি পর্বতারোহী শেরপা তেনজিং নোরগের সঙ্গে মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গে আরোহণ করেন। কমনওয়েলথ ট্রান্স-আটলান্টিক অভিযানের অংশ হিসেবে তিনি ১৯৫৮ সালে দক্ষিণ মেরু পৌঁছান। পরবর্তীকালে তিনি উত্তর মেরু অভিযান করলে বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পৃথিবীর দুই মেরু ও সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পদার্পণের দুর্লভ কৃতিত্ব অর্জন করেন।

 

৬ হাজার ঘণ্টারও বেশি সময় পানির নিচে

সিলভিয়া আর্লে

সিলভিয়া আর্লে; আমেরিকার খ্যাতিমান সমুদ্রবিজ্ঞানী। সমুদ্রে গভীর জলে তার নেতৃত্বে ‘মিশন ব্লু’ বিশ্ববাসী জানতে পেরেছিল সমুদ্রগর্ভের হাজারো রহস্যের গল্প। তিনি শুধু প্রথম শ্রেণির সমুদ্র বিশারদই নন, দীর্ঘ ৬ হাজার ঘণ্টার বেশি সমুদ্রের নিচে অবস্থান করে রেকর্ড গড়েছেন। কারও কারও মতে, তিনি ৭ হাজার ঘণ্টা পানির নিচে অবস্থান করেছিলেন। ১৯৩৫ সালে জন্ম নেওয়া সিলভিয়া কর্মজীবনে একাধারে মেরিন বায়োলজিস্ট, লেখক ও প্রভাষক। ১৯৯৮ সাল থেকে একটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এক্সপ্লোরার এর সঙ্গে কাজ করছেন। এ ছাড়া সিলভিয়া ছিলেন ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)-এর সাবেক প্রধান বিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ওষুধ ও অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভের প্রথম নারী বিজ্ঞানী। ১৯৯৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনে প্রথম হিরো হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। সামুদ্রিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে ১৮০টিরও বেশি প্রকাশনার লেখক তিনি। এ ছাড়াও তিনি সমুদ্র গবেষণায় ব্যবহৃত সাবমেরিন তৈরি ও ডিজাইন কোম্পানির মালিক। সিলভিয়া দেশে-বিদেশে শতাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার-পদক পেয়েছেন।

বিনয় পিটক সংগ্রাহক

ফা-হিয়েন

সময়টা তখন পঞ্চম শতক। সে সময় চলছিল দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকাল। বিখ্যাত চীন দেশীয় পরিব্রাজক ফা-হিয়েন ভারত ভ্রমণ করেন। এ জন্য সঙ্গী-সাথীসহ দীর্ঘ পথ পায়ে হাঁটেন। তার ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল বৌ ধর্মপুস্তক ‘বিনয় পিটক’-এর মূল রচনা সংগ্রহ করা। মধ্য এশিয়া ভারত ও শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করে এ সংক্রান্ত বিবরণ লিপিবদ্ধ করে যান তিনি। সে অনুযায়ী, প্রথমে আসেন ভারতে। ৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে ৬৪ বছর বয়সী ফা-হিয়েন ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন। মধ্য এশিয়া ও উত্তর-পশ্চিম ভারত ঘুরে তিনি উত্তর ভারতে এসে পৌঁছেন। যতদূর জানা যায়, বৌদ্ধ ধর্মের মঠতান্ত্রিক নীতি সংবলিত গ্রন্থ ‘বিনয় পিটক’-এর সন্ধানে ভারতে এসেছিলেন তিনি। এরপর একে একে গঙ্গা উপত্যকায় বৌদ্ধ সংস্কৃতির পবিত্র স্থানগুলো দর্শন করেন। ভ্রমণ শেষ হলে তিনি তাম্রলিপ্ত বন্দর থেকে সমুদ্রপথে সিংহল, মালয় এবং যবদ্বীপ থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ভারত ভ্রমণের শেষ পর্যায়ে সীমান্ত রাজ্য চম্পার মধ্য দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছিলেন। ফা-হিয়েনের বিবরণ অনুসরণ করে ভারত ও বাংলার বহু প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়।

৬৫৭টি গ্রন্থ অনুবাদ

হিউয়েন সাং

ভারতবর্ষে চৈনিক তীর্থ ভ্রমণকারীদের মধ্যে দ্বিতীয় বিবরণীটি হিউয়েন সাংয়ের। সময় তখন সাত শতক। ভ্রমণকালে তিনি উত্তর ভারতে হর্ষবর্ধন, বাংলায় শশাঙ্ক এবং আসামে ভাস্করবর্মণ শাসন করছিলেন। শৈশব থেকেই হিউয়েন সাং ধর্মগ্রন্থ, বিশেষ করে চৈনিক ধ্রুপদি গ্রন্থ ও প্রাচীন জ্ঞানী লোকদের লেখা পাঠে আগ্রহী হন। পরবর্তীকালে তিনি ৬৫৭টি সংস্কৃত বৌদ্ধ গ্রন্থ সংগ্রহ ও অনুবাদ করেন। তৎকালীন ভারতের বৌদ্ধ শাস্ত্রের ওপর সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষাই তিনি লাভ করেন। চীনা এই পরিব্রাজক অমায়িক ও বন্ধুত্বসুলভ একজন ব্যক্তি। তিনি ইয়ানজি ও কুচা হয়ে কিরগিজস্তানের রাজা তুর্ক খানের সঙ্গে দেখা করেন। অথচ তুর্কদের সঙ্গে তখনো তাদের যুদ্ধ চলছে। কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, সমরখন্দসহ আরও পশ্চিমে আমু দরিয়া এবং তিরমিজে পৌঁছান। ৬৩৮ সালে তিনি বাংলায় আসেন। তার বিবরণী অনুসারে, বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে কর্ণসুবর্ণের নিকটবর্তী রক্তমৃত্তিকা, পুন্ড্রনগর ও এর সংলগ্ন এলাকা, সমতট ও তাম্রলিপ্তি অন্যতম। তার বিবরণ বাংলার প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে ব্যাপক সহায়তা করে।

হেঁটে হেঁটে বাগদাদ ভ্রমণ

মার্কো পোলো

ভেনিসের সাহসী ও সম্ভ্রান্ত পরিবার ছিল পোলো পরিবার। বংশানুুক্রমে এরা দেশের বাইরে ব্যবসা-বাণিজ্য করত, কেউ কেউ দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ত রোজগারে, কেউবা আবার ভ্রমণে। এমন পরিবারে জন্ম নেন বিখ্যাত পর্যটক মার্কো পোলা। তিনি ১২৭১ থেকে ১২৯৫ সাল পর্যন্ত ইউরোপ থেকে সিল্ক রোডে এশিয়া ভ্রমণ করেন এবং তার এই ভ্রমণকাহিনি নিয়ে পরবর্তীতে তিনি একটি বই লেখেন, যা ইংরেজিতে ‘দ্য ট্রাভেলস অব মার্কো পোলো’ নামে অধিক পরিচিত। তিনি প্রথম ইউরোপীয় ছিলেন, যিনি প্রাচ্যকে পাশ্চাত্যের কাছে পরিচিত করিয়ে দিয়েছিলেন। এর আগে দূরপ্রাচ্য বা চীন সম্পর্কে ইউরোপের মানুষ খুব বেশি জানত না। সে সময় তিনি হেঁটে হেঁটে বাগদাদ শহরে পৌঁছান। সে সময় বাগদাদই ছিল বিশ্বের সেরা নগরী। মার্কো পোলোর বয়স যখন ১৭ বছর তখন থেকেই মার্কো বাবার দুঃসাহসিক যাত্রার সঙ্গী হন। এখান থেকেই মার্কো পোলোর পৃথিবী ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয়। তিনি যে এলাকা ভ্রমণ করতেন তার সবকিছু ডায়েরিতে লিখে রাখতেন। এই শুরুর মাধ্যমেই তিনি পৃথিবীর সেরা পর্যটকে পরিণত হন।

প্রথম ইউরোপীয়র ভারত আবিষ্কার

ভাস্কো দা গামা

১৫০২ সালে ভাস্কো দা গামা এবং তার বিশাল নৌবহর ভারতে পৌঁছায়।  ইউরোপের সঙ্গে এশিয়ার যোগসূত্র তৈরির কাজটি শুরু হয়েছিল বিখ্যাত এই পর্তুগিজ নাবিকের ভারত যাত্রার মধ্য দিয়ে।

ভাস্কো দা গামা; বিখ্যাত পর্তুগিজ অনুসন্ধানী ও পর্যটক। তাকে পাশ্চাত্য দুনিয়ার সংযোগ স্থাপনের অন্যতম কারিগর বলা হয়ে থাকে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে সমুদ্রপথে তিনি ইউরোপ থেকে ভারতে আসেন। ইতিহাসে তিনি প্রথম ইউরোপিয়ান, যিনি সাগর পথ পাড়ি দিয়ে ভারতে এসে পৌঁছান। তার এ ভ্রমণ এশিয়া ও ইউরোপকে সংযোগ করার পাশাপাশি আটলান্টিক মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরের মাঝে সেতুবন্ধন রচিত করেছিল। এ ভ্রমণের মাধ্যমেই পর্তুগিজদের এশিয়া মহাদেশে দীর্ঘকালীন উপনিবেশ স্থাপনের পথ সুগম হয়েছিল। ভাস্কো দা গামা জন্মগ্রহণ করেছিলেন পর্তুগালের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে সিনেস নামক জায়গায় ১৪৬০ কিংবা ১৪৬৯ সালে। ১৪৯৭ সালে লিসবনের উদ্দেশে সমুদ্রযাত্রা শুরু করে। ১৪৯৮ সালের ২ মার্চ থেকে ২৯ মার্চ পর্যন্ত মোজাম্বিক দ্বীপের কাছে সময় অতিবাহিত করেন। এরপর ৭ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে মোম্বাসা বন্দরের পরিচয় পান। ২৪ এপ্রিল দা গামা দলবলসহ মালিন্দি থেকে ভারত অভিমুখে রওনা হন। সেই বছরই ২০ মে ভাস্কো দা গামা নৌবহরসহ ভারতের কালিকটের নিকটবর্তী কাপ্পাডুতে এসে উপস্থিত হন। কালিকটের রাজা সামুদিরি (জামরিন) কমপক্ষে ৩ হাজার সশস্ত্র নায়ের বাহিনীর শোভাযাত্রার মাধ্যমে জাহাজের নাবিকদের অভ্যর্থনা জানান।

মহাকাশ ভ্রমণে প্রথম ব্যক্তি

ইউরি আলেক্সেভিচ গ্যাগারিন

ইউরি আলেক্সেভিচ গ্যাগারিন, সেই বিখ্যাত রাশিয়ান যিনি প্রথম মানুষ হিসেবে পৃথিবীর কক্ষপথ ভ্রমণ করেছেন, পান ‘প্রথম মহাকাশচারী’র খেতাব। কৈশোরেই গ্যাগারিন মহাকাশ ও গ্রহ সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। স্কুলে পড়াশোনাকালীন ফাউন্ড্রি-ম্যান হয়ে ওঠেন। অবসর সময়ে গ্যাগারিন রাশিয়ান মহাকাশ গবেষক কনস্ট্যান্টিন সিওলকোভস্কির বই উদাসীনভাবে পড়তেন। স্কুল থেকে পাস করার পর সোভিয়েত আর্মিতে যোগ দেন। হয়ে ওঠেন সোভিয়েত বৈমানিক। তিনি ভস্টক নভোযানে করে ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করেন। পৃথিবী থেকে ১৭৭ কিলোমিটার দূরের মহাকাশে একাকী গ্যাগারিনের ১০৮ মিনিটের কক্ষপথ ভ্রমণ ছিল দুর্দশাপূর্ণ। তার তৃতীয় প্রজন্মের ‘ভস্টক-১’ রকেটের ন্যাভিগেশনাল নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত ছিল না। চরম সাহসের সঙ্গে তিনি পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন। ২৭ বছর বয়সেই গ্যাগারিন আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের নায়কে পরিণত হন এবং দেশে-বিদেশে বহু পুরস্কার-পদক লাভ করেন।

মহাকাশ ভ্রমণে প্রথম নারী

ভেলেন্তিনা তেরেসকোভা

১৯৬৩ সাল। বিশ্ববাসী দেখল এক সাহসী নারীকে; নাম ভেলেন্তিনা তেরেসকোভা। মানব ইতিহাসে তিনি প্রথম নারী, যিনি মহাকাশ গমন করেছেন। একক পাইলট হিসেবে ভস্টক-৬-কে নিয়ে যান মহাকাশে। সেই নারীও একজন সোভিয়েত নাগরিক। তেরেসকোভা স্কুলে করেসপন্ডেস কোর্সের মাধ্যমে পড়াশোনা করেন, পাস করেন ইঞ্জিনিয়ারিং। ছেলেবেলা থেকেই ছিল তার প্যারাসুট ঝাঁপের প্রতি বিশেষ আগ্রহ। বুকোভস্কোই এয়ারফোর্স একাডেমি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রথম প্যারাসুট নিয়ে ওড়েন তেরেসকোভা। তখন ২৭ বছর বয়সী ইউরি গ্যাগারিন মহাকাশ জয় করেছেন। এরই মধ্যে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা ঘোষণা করল, বিশ্বের প্রথম নারী হিসেবে একজনকে মহাকাশ ভ্রমণে পাঠানো হবে। আবেদনও পড়ল অনেক। ৪ শতাধিক আবেদনকারীর মধ্যে মেধা ও যোগ্যতার মাধ্যমে মহাকাশ ভ্রমণকারী হিসেবে নির্বাচিত হলেন তেরেসকোভা। আর সুযোগ পেলেন প্রথম নারী এবং প্রথম বেসামরিক হিসেবে মহাশূন্য ভ্রমণের। আর মহাকাশ অভিযানে প্রথম সফল নারী নভোচারী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর