শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

কবরে আলো পাওয়ার আমল কী?

মুফতি আমজাদ হোসাইন

কবরে আলো পাওয়ার আমল কী?

অন্ধকার কবরে আলো পাওয়ার আমল হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। হাদিসে আছে ‘নামাজ নূর বা আলো’ কবরে ও হাশরের ময়দানের আলো হবে নামাজ। নেককারদের জন্য জান্নাতে আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করা হয়।  বেনামাজি হলে তার কবরে কী ধরনের আজাব হবে এ সম্পর্কে হাদিসে আছে, বেনামাজির কবরে তিন প্রকারের শাস্তি হবে : ১। কবর তার জন্য এমন সংকীর্ণ হবে যে, এক পাশের বুকের হাড় আরেক পাশে ঢুকে যাবে। ২। তার কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। ৩। তার কবরে এমন একটি সাপ নিযুক্ত করা হবে যার চক্ষু হবে আগুনের। আর নখগুলো হবে লোহার। তার প্রত্যেকটি নখ লম্বা হবে একদিনের দূরত্বের পথ। সাপের আওয়াজ হবে বজ্রের ন্যায় বিকট। সাপ ওই বেনামাজিকে বলতে থাকবে ‘আমাকে আমার রব তোর ওপর নিযুক্ত করেছেন যাতে ফজরের নামাজ নষ্ট করার কারণে সূর্যোদয় পর্যন্ত তোকে দংশন করতে থাকি। জোহরের নামাজ নষ্ট করার কারণে আসর পর্যন্ত দংশন করতে থাকি। আসর নামাজ নষ্ট করার কারণে মাগরিব পর্যন্ত। আর মাগরিব নামাজ নষ্ট করার কারণে এশা পর্যন্ত। আর এশার নামাজ নষ্ট করার কারণে ফজর পর্যন্ত তোকে দংশন করতে থাকি।’ এই সাপ যখনই তাকে একবার দংশন করবে তখনই সে সত্তর হাত মাটির নিচে ঢুকে যাবে (উঠিয়ে আবার দংশন করবে) এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত আজাব হতে থাকবে। নেককার ও বদকারের কবরের অবস্থা একটি দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, হজরত বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, মুমিন ব্যক্তির কবরে দুজন ফেরেশতা আসে ও তাকে বসায়। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার রব কে? সে উত্তর দেবে, আমার রব আল্লাহ। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার দীন কী? সে উত্তরে বলবে, আমার দীন হচ্ছে ইসলাম। তারা এবার তাকে জিজ্ঞাসা করে, ওই ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? সে উত্তর দেবে ইনি হচ্ছেন আমাদের  রসুল (সা.)। তারা এবার তাকে জিজ্ঞাসা করবে (এই উত্তরগুলো) তুমি কীভাবে জানলে? সে বলবে আমি আল্লাহর কিতাব থেকে জেনেছি এবং তাঁর ওপর ইমান এনেছি। তখন রসুল (সা.) বলেন, এটাই হচ্ছে আল্লাহতায়ালার ওই বাণীর মর্ম, যেখানে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের দৃঢ় বাক্যের ওপর দৃঢ় রাখেন পার্থিব জীবনে ও আখেরাতে’ রসুল (সা.) বলেন, তখনই আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ডাক দিয়ে বলবেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তাকে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও। তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার দিকে জান্নাতের দরজা খুলে দাও। তখন তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। তার কাছে জান্নাতের শান্তি ও সুঘ্রাণ আসতে থাকে। কবরকে তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেওয়া হয়। এরপর রসুল (সা.) বদকারের মৃত্যুর কথা আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, বদকারকে কবরে রাখার পর, তার কাছে দুজন ফেরেশতা এসে তাকে বসায়। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার রব কে? সে উত্তরে বলে, হায়; হায়; আমি তো জানি না। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার দীন কী? সে বলে, হায়; হায়; আমি তো জানি না। এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করে ওই ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? সে বলে, হায়; হায়; আমি তো জানি না। তখন আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী ডাক দিয়ে বলেন, সে মিথ্যা বলেছে, তাই তোমরা তাকে জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও। জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও এবং জাহান্নামের দিকে দরজা খুলে দাও। রসুল (সা.) বলেন, তখন তার কাছে জাহান্নামের উত্তাপ ও গরম বাতাস আসতে থাকে। আর কবরকে এমন সঙ্কীর্ণ করে দেওয়া হয় যে, তার পাঁজরের হাড়গুলো একটা আরেকটার মধ্যে ঢুকে যায়। তারপর তার জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতা নিযুক্ত করা হয়। ফেরেশতার হাতে থাকে লোহার এমন গদা, যা দিয়ে পাহাড়ে আঘাত করলে পাহাড়ও চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। সে তাকে এটা দিয়ে এমন আঘাত করে যে, জিন ও ইনসান ব্যতীত পূর্ব-পশ্চিমের সবকিছুই এ আওয়াজ শুনতে পায়। ফলে সে মাটি হয়ে যায়। অতঃপর তার দেহে আবার আত্মা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-১৮৫৫৭, আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নং-৪৭৫৫) হাদিসে কবরের আজাব থেকে বাঁচার জন্য কয়েকটা আমলের কথা আছে, রসুল (সা.) বলেছেন, (১) সূরা মূলক কবরের আজাব থেকে রক্ষাকারী। যে ব্যক্তি এই সূরা পাঠ করবে, এ সূরা তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবে। (কুরতুবি) রসুল (সা.) নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে সূরা মূলক তিলাওয়াত করতেন। কবর মূলত কোনো গর্তের নাম নয়। বরং লাশকে যেখানেই দাফন করা হবে সেটাই তার কবর। আজাব হয় রুহের ওপর। আর দেহ সে আজাবের কষ্ট ভোগ করতে থাকে। তাই দেহ জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে গেলেও রুহের ওপর কবরের আজাব হতে কোনো বাধা নেই। আর কবরের আজাব হওয়ার জন্য লাশ অবিকৃত অবস্থায় বাকি থাকা জরুরি নয়। বরং আল্লাহতায়ালা যেমন প্রথমে অত্যন্ত সহজভাবে দেহ সৃষ্টি করেছেন তেমনি লাশের বর্তমান দেহ জ্বলেপুড়ে ভস্ম হয়ে গেলেও উক্ত ব্যক্তির দেহকে পুনরায় নতুনভাবে  সৃষ্টি করে শাস্তি দেবেন। কবর হলো আখেরাতের প্রথম ঘাঁটি। হাদিসে আছে, হজরত উসমান (রা.) যখন কোনো কবরের পাশে দাঁড়াতেন, তখন এমনভাবে কাঁদতেন যে, নিজের দাড়ি মোবারক ভিজে যেত। তাই একবার তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি জান্নাত ও জাহান্নাম স্মরণ করে এত কাঁদেন না, যতটুকু কাঁদেন কবর দেখে এর কারণ কী? তিনি বললেন, রসুল (সা.) বলেছেন, কবর হচ্ছে আখেরাতের প্রথম ঘাঁটি। এখানে যদি কেউ রক্ষা পেয়ে যায়, তাহলে পরবর্তী সব ঘাঁটি তার জন্য সহজ হয়ে যাবে। আর এখানে কেউ যদি রক্ষা না পায় তাহলে পরবর্তী সব ঘাঁটি তার জন্য খুব কঠিন হবে।  তিনি আরও বললেন, রসুল (সা.) বলেছেন, মেরাজের রজনীতে আমি যত ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি তার মধ্যে কবরের আজাবই হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস নং-২৩০৮)।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর