শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
সাহাবিদের কথা

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)

হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং প্রধান সাহাবিদের অন্যতম। হজরত আবু বকরের মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব নেন। হজরত উমর ইসলামী আইনের একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ ছিলেন। ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করার কারণে তাকে আল ফারুক অর্থাৎ সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী উপাধি দেওয়া হয়। আমিরুল মুমিনিন উপাধিটি সর্বপ্রথম তার ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয়েছে। সাহাবিদের মর্যাদার ক্ষেত্রে সুন্নিদের কাছে আবু বকরের পর উমরের অবস্থান।

হজরত উমরের শাসনামলে খিলাফতের সীমানা অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এসময় সাসানীয় সাম্রাজ্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুই-তৃতীয়াংশ মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে আসে। তার শাসনামলে জেরুজালেম মুসলিমদের হস্তগত হয়। তিনি পূর্বের খ্রিস্টান রীতি বদলে ইহুদিদের জেরুজালেমে বসবাস ও উপাসনা করার সুযোগ দিয়েছিলেন।

হজরত উমর মক্কার কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম খাত্তাব ইবনে নুফায়েল এবং মায়ের নাম হানতামা বিনতে হিশাম। তার মা বনু মাখজুম গোত্রের সদস্য ছিলেন। যৌবনে তিনি মক্কার কাছে তার বাবার উট চরাতেন। তার বাবা বুদ্ধিমত্তার কারণে গোত্রে বিশেষ সম্মানের অধিকারী ছিলেন। উমর বলেছেন, আমার বাবা খাত্তাব ছিলেন একজন কঠোর প্রকৃতির মানুষ। তিনি আমাকে দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করাতেন। যদি আমি কাজ না করতাম তবে তিনি আমাকে মারধর করতেন এবং ক্লান্ত হওয়া পর্যন্ত কাজ করাতেন। ইসলামপূর্ব আমলে আরবে লেখাপড়ার রীতি বেশি প্রচলিত ছিল না। এরপরও তরুণ বয়সে উমর লিখতে ও পড়তে শেখেন। নিজে কবি না হলেও কাব্য ও সাহিত্যের প্রতি তার আগ্রহ ছিল। কুরাইশ ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি তার কৈশোরে সমরবিদ্যা, অশ্বারোহণ ও কুস্তি শেখেন। তিনি দীর্ঘদেহী ও শারীরিকভাবে শক্তিশালী ছিলেন। কুস্তিগির হিসেবেও তিনি ছিলেন সুনামের অধিকারী। হজরত উমর (রা.) ছিলেন একজন সুবক্তা। তার বাবার পরে তিনি তার গোত্রের একজন বিরোধ মীমাংসাকারী হন। হজরত উমর একজন বণিক হিসেবে বাণিজ্য শুরু করেছিলেন। তিনি বাইজেন্টাইন ও সাসানীয় সাম্রাজ্যে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকবার গিয়েছেন। এখানে তিনি রোমান ও পারসিয়ান পণ্ডিতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন এবং এসব সমাজের অবস্থা সম্পর্কে অবগত হন।

৬১০ সালে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) ইসলাম প্রচার শুরু করেন। অন্যান্য মক্কাবাসীর মতো হজরত উমর (রা.) প্রথম পর্যায়ে ইসলামের বিরোধিতা করেছিলেন। তার হাতে মুসলিমরা নির্যাতিত হয়। বিরোধিতার একপর্যায়ে তিনি মহানবী (সা.)কে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। তিনি কুরাইশদের একতায় বিশ্বাস করতেন এবং ইসলামের উত্থানকে কুরাইশদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির কারণ হিসেবে বিবেচনা করেন। পরে অবশ্য এ ভুল ধারণা থেকে সরে আসেন।

হজরত উমর (রা.) ৬১৬ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হজরত মোহাম্মদ (সা.)কে হত্যার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন। পথিমধ্যে তার বন্ধু নাইম বিন আবদুল্লাহর সঙ্গে দেখা হয়। নাইম  গোপনে মুসলিম হয়েছিলেন, তবে উমর তা জানতেন না। হজরত উমর (রা.) তাকে বলেন যে, তিনি মোহাম্মদ (সা.)কে হত্যার উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন। এ সময় তিনি তার বোন ও ভগ্নিপতির ইসলাম গ্রহণের বিষয়ে জানতে পারেন।

এ সংবাদে রাগান্বিত হয়ে হজরত উমর (রা.) তার বোনের বাড়ির দিকে যাত্রা করেন। বাইরে থেকে তিনি কোরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ শুনতে পান। এ সময় খাব্বাব বিন আরাত তাদের সূরা তাহা বিষয়ে পাঠ দিচ্ছিলেন। হজরত উমর (রা.) ঘরে প্রবেশ করলে তারা পাণ্ডুলিপিটি লুকিয়ে ফেলেন। কিন্তু উমর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে একপর্যায়ে তাদের ওপর হাত তোলেন। এরপর বোনের বক্তব্যে তার মনে পরিবর্তন এলে তিনি স্নেহপূর্ণভাবে পাণ্ডুলিপিটি দেখতে চান। কিন্তু তার বোন তাকে পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করতে বলেন এবং বলেন যে, এরপরই তিনি তা দেখতে পারবেন। হজরত উমর (রা.) গোসল করে পবিত্র হয়ে সূরা তাহার আয়াতগুলো পাঠ করেন। এতে তার মন ইসলামের দিকে ধাবিত হয়। এরপর তিনি রসুলে করিম   মোহাম্মদ (সা.)-এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।

ইসলাম গ্রহণের পর হজরত উমর (রা.) এসময় মুসলিমদের সবচেয়ে কঠোর প্রতিপক্ষ আবু জাহলকে তা জানান। তার ইসলাম গ্রহণের পর প্রকাশ্যে কাবার সামনে নামাজ আদায় করাতে মুসলিমরা বাধার সম্মুখীন হয়নি। ইসলাম গ্রহণের পর গোপনীয়তা পরিহার করে প্রকাশ্যে তিনি মুসলিমদের নিয়ে বাইরে আসেন এবং কাবা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবও এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন। মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) তাকে এ জন্য ফারুক উপাধি দেন।  আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এ প্রসঙ্গে বলেন, যখন উমর মুসলিম হন তখন থেকে আমরা সমানভাবে শক্তিশালী হয়েছিলাম এবং মান-সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে পেরেছিলাম।

     শাকিলা জাহান।

সর্বশেষ খবর