বুধবার, ২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর

জাতির কালো ইতিহাস কথা বলে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর

জয়শ্রী ভাদুড়ী

জাতির কালো ইতিহাস কথা বলে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়ি। গেট দিয়ে ঢুকতেই আম, কাঁঠাল আর কর্পূর গাছের নিবিড় ছায়া। ছাদের ঝুল বারান্দা থেকে উঁকি দিচ্ছে লতানো গাছের সবুজ পাতা। কিছুটা এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে রান্না ঘরের কোণায় ঝুলানো লণ্ঠন আর তৈজসপত্র। এতক্ষণ সবই স্বাভাবিক ছিল। তিনতলা বাড়ির দোতলায় গেলেই চোখে পড়বে ঘাতকদের ছোড়া বুলেটবিদ্ধ দেওয়াল, টেলিফোন আর দেওয়ালে লেগে থাকা ছোপছোপ রক্ত। বাড়ি জুড়ে তাণ্ডব আর হত্যার বিভীষিকা। এগুলো পাড়ি দিয়ে বাড়ির প্রধান সিঁড়িতে গেলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাঙালি জাতির কালো ইতিহাস। এই সিঁড়িতেই ঘাতকের বুলেট ঝাঁঝড়া করে দিয়েছিল জাতির জনক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বুক। এই বাড়িটি এখন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। এক বুক স্বপ্ন আর সাহস নিয়ে এই মানুষটি ছিনিয়ে এনেছিলেন এই পুণ্য ভূমির অস্তিত্ব আর অহংকার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতের অন্ধকারে এই বাড়িতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সেই সোনালি ইতিহাসকে রক্তাক্ত করেছে ঘাতকরা। দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। যে বাড়িটি ছিল হাজারো নেতা-কর্মীর রাজনীতির আঁতুড়ঘর আজ সেখানে সুনসান নীরবতা। সেই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পর ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। তিনি ১৯৯৩ সালে বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে ট্রাস্ট বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত করে। ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট জাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বাড়ির পেছনেই জাদুঘরের সম্প্রসারিত নতুন ভবন। বঙ্গবন্ধুর বাবা-মায়ের নামে নতুন ভবনের নাম রাখা হয়েছে ‘শেখ লুত্ফর রহমান ও শেখ সায়েরা খাতুন গ্যালারি’। গ্যালারি জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ছবিগুলো ইতিহাসের সাক্ষী। জাদুঘরের স্বেচ্ছাসেবক গাইড আলাউদ্দিন সাগর বলেন, ২০১১ সালের ১১ আগস্ট এ অংশটি খুলে দেওয়া হয়। ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন সময়ের আলোকচিত্র রয়েছে। পঞ্চম তলায় পাঠাগার ও গবেষণা কেন্দ্র। দোতলার মাঝের ঘরে কাচ ঘেরা বাক্সে রাখা আছে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ব্যবহৃত সাদা নীল শাড়ি, বঙ্গবন্ধুর পুত্রবধূ সুলতানা কামালের বৌ-ভাতের সবুজ বেনারসি শাড়ি, রোজী জামালের লাল ঢাকাই জামদানি, বিয়ের জুতা, ভাঙা কাচের চুড়ি, চুলের কাঁটা, শিশুপুত্র রাসেলের রক্তমাখা জামা, বঙ্গবন্ধুর রক্তমাখা সাদা পাঞ্জাবি, তোয়ালে, লুঙ্গি। খুব মনোযোগ দিয়ে এই ইতিহাসকে আত্মস্থ করার চেষ্টা করছিলেন আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস অথৈ। এখানে আসার কারণ জানতে চাইলে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আরও ভালো করে জানতে, বুঝতে এসেছি। সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে ছোট্ট শিশু রাসেলকে তার মায়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখিয়ে নিয়ে এসে তারপর হত্যা করা। মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে এমন করতে পারে তাই ভাবছিলাম। বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের টিকিট মাস্টার আবদুল কাদের বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৭০০-৮০০ মানুষ এই জাদুঘর দেখতে আসেন। দর্শনার্থীদের মধ্যে তরুণ এবং শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর