বুধবার, ২ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রেমিক আসলামের ভয়ঙ্কর সারপ্রাইজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আপাতত বিয়ে নয়— জানানোর পর থেকেই কলেজছাত্রী মিথিলাকে সন্দেহ করছিলেন প্রেমিক আসলাম। হোটেলে নিয়ে সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা বলেন। চোখ বন্ধ করেন মিথিলা। ভেবেছিলেন, গলায় হয়তো সোনার চেইন পরিয়ে দেবেন আসলাম। তা হলো না, চেইনের বদলে তিনি রশি পেঁচিয়ে টান দেন। অচেতন হয়ে পড়েন মিথিলা। মারা গেছে ভেবে পালিয়ে যান আসলাম। মিথিলা হাসপাতালে বেঁচে ছিলেন আরও কয়েকদিন। প্রেমিকের ভয়ঙ্কর সারপ্রাইজে শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়। আদালতে গত রবিবার আসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে এই নির্মম ঘটনা। আসলাম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেলস রিপ্রেজেনটেটিভ। বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুরে। রাজধানীর শ্যামলীর বিজলী মহল্লার তাজিন আবাসিক হোটেল থেকে গত ৮ জুলাই মিথিলাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় গত ২০ জুলাই তার মৃত্যু হয়। মিথিলা রামপুরার একরামুন্নেসা ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থী ছিলেন। আসলাম জানিয়েছেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন খুব সকালে মিথিলার বাসার সামনে যান। সিএনজি অটোরিকশায় করে মিথিলাকে নিয়ে ওই হোটেলে ওঠেন। ব্যাগের ভিতর নিয়েছিলেন রশি। হোটেল কক্ষে যাওয়ার পর মিথিলাকে আবারও বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মিথিলা ওই মুহূর্তে বিয়ের জন্য প্রস্তুত নন বলে জানান। আসলাম এরপর বলেন, ‘তোমার চোখ বন্ধ করো সারপ্রাইজ দেব।’ মিথিলা ভেবেছিলেন, প্রেমিক হয়তো সোনার চেইন পরিয়ে দেবেন। কিন্তু চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় গলায় রশি পেঁচিয়ে ধরেন। মিথিলা অচেতন হয়ে পড়েন। মারা গেছে ভেবে তাকে হোটেলের খাটের নিচে রেখে পালিয়ে যান আসলাম। দুপুরে গোঙানির আওয়াজ শুনে গলায় রশি পেঁচানো অবস্থায় মিথিলাকে পড়ে থাকতে দেখেন হোটেল কর্মচারীরা। মিথিলার মোবাইল ফোনসেট, ব্যাগসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যান আসলাম। গাবতলী গিয়ে নিজের মোবাইল ফোনের সিম ফেলে নতুন সিম ঢোকান। আর মিথিলার মোবাইল থেকে তার বাবাকে এসএমএস পাঠান— ‘আমি ভালো আছি, তোমরা আমার জন্য টেনশন করো না।’ পরে তিনি মিথিলার মোবাইল ফোনসেট বন্ধ করে দেন। পুলিশ প্রযুক্তির সাহায্যে আসলামকে আমিনবাজার থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, আসলামের জবানবন্দি শেষে একই মামলার আসামি হোটেলের ব্যবস্থাপক ও এক কর্মীসহ তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে। হোটেলের নথিতে আশরাফ নাম ব্যবহার করেছিলেন আসলাম। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, চার বছর আগে মিথিলা-আসলামের প্রেম হয়। আসলাম রামপুরায় ভাড়া থাকতেন। কিছুদিন আগে চাকরির সুবাদে তিনি ঢাকার আমিনবাজারে থাকা শুরু করেন। প্রায়ই তিনি বিয়ের জন্য মিথিলাকে চাপ দিতেন। বরাবরই বয়স হয়নি বলে এড়িয়ে যেতেন মিথিলা। আসলাম ভেবেছিলেন, মিথিলা হয়তো অন্য কারও সঙ্গে প্রেমে জড়িয়েছেন। পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হাফিজ আল ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মেয়ের নম্বর থেকে এসএমএস আসায়, বাবা ভেবেছিলেন পালিয়েছে। তাই নিখোঁজের পরও মানসম্মানের কথা চিন্তা করে জিডি করেননি মিথিলার বাবা।’

সর্বশেষ খবর