সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আমাদের ভোটাধিকার নিয়ে ভবিষ্যতে আর যেন ছিনিমিনি খেলা না হয়, সে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনি আইন ও বিধিবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। এ কাজে নেতৃত্ব প্রদর্শনে এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কয়েকজন সৎ, নির্ভীক ও সুনামসম্পন্ন ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের জন্য অনতিবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য ২০২২ সালে একটি আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে আইনে কমিশনার নিয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি এবং কমিশনারদের নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত রাখার ব্যাপারে অস্পষ্টতা রয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনকে যথাযথ করতে হবে। যেমন বাছাই প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য গণশুনানির আয়োজন করা, কমিশনারদের যোগ্যতার সুস্পষ্ট মানদ নির্ধারণ করা। কমিশনার নিয়োগের জন্য সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দলসহ বিভিন্ন দলের সংসদ সদস্য, বিচার বিভাগের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য গঠিত অনুসন্ধান কমিটিতে যুক্ত করা এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়া।
সদ্যবিদায়ী ইসির বিষয়ে এই নির্বাচন-বিশ্লেষক বলেন, বহু অঘটন ঘটানোর পর প্রধান নির্বাচন কমিশার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান অবশেষে বিদায় নিয়েছেন। এসব অঘটন ঘটিয়েছেন তাঁরা তাঁদের নিয়োগদাতাদের পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী করতে। তিনি আরও বলেন, পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জেতার ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ২০১৪ সালে তারা একতরফা নির্বাচনি কৌশলে বৈতরণি পার হয়েছে। ২০১৮ সালে ক্ষমতায় থেকে মধ্যরাতের জালিয়াতি নির্বাচনের আশ্রয় নিয়েছে। আবার ২০২৪ সালেও তারা কারসাজির মাধ্যমে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় অব্যাহতভাবে থাকার চেষ্টা করেছে। এসব কারসাজি করার জন্য তারা অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে সব নির্বাচনি এলাকায় ইভিএম ব্যবহারের অপচেষ্টা করেছে। জাতীয় এমনকি স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে কোনো রাজনৈতিক ঐকমত্য ছিল না। নির্বাচন কমিশন অনেকটাভাবে ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিরোধী দলগুলো অনেক আপত্তি তুলেছিল। কারণ এ ইভিএম নিয়ে অনেকরকম বিতর্ক রয়েছে। কারিগরি দিক থেকে ইভিএম ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এতে ভোটার ভেরিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল বা ভিভিপিএটি ছিল না। নির্বাচন কমিশন একবার ইভিএমের ভোট গ্রহণের ফলাফল ঘোষণা করলে যাচাইবাছাই করার সুযোগ ছিল না। ইভিএমের কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির প্রধান হিসেবে জামিলুর রেজা চৌধরী এটার আপত্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা শর্তেও হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ইভিএম কেনা হয়েছে। ইভিএম নিয়ে বাণিজ্য হয়েছে বলেও অনেক অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, বিদায়ী নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নিয়েও কারসাজি করেছে। নামসর্বস্ব দলকে নিবন্ধন দিয়েছে। যাদের কথা আগে কেউ কখনো শোনেও নাই। অনেক দলকে নিবন্ধন দেওয়া থেকে বঞ্চিত করেছে। আর এর উদ্দেশ্য ছিল দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বিএনপি থেকে তাদের নেতা-কর্মী ভাগিয়ে এনে বিকল্প বিরোধী দল সৃষ্টি করার অপচেষ্টা। যেটা সফল হয়নি।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনে জেতাতে সবচেয়ে বড় অপচেষ্টা ছিল ২৮ অক্টোবর বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আক্রমণ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার ঘটনা। পরে অনেক গায়েবি মামলা দিয়ে প্রায় ২৫ হাজার নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়। অতীতের মামলা দেখিয়ে অনেককেই দ্রুত সাজা দেওয়া হয় যাতে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে। এসব করা হয়েছিল যাতে ক্ষমতাসীনরা বিনা বাধায় নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে পারে।