৩০ অক্টোবর, ২০২৪ ১৮:৪৬

তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের সেই অদম্য তরুণের পাশে বসুন্ধরা শুভসংঘ

নিজস্ব প্রতিবেদক

তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের সেই অদম্য তরুণের পাশে বসুন্ধরা শুভসংঘ

বছরের ১২ মাসেই যেন অভাবের গল্প সত্য কুমার তঞ্চঙ্গ্যাদের সংসারে। নিজেদের কোনো জমিজমা নেই। বাবা বর্গাচাষি। মাঝে মাঝে দিনমজুরিও করেন। বুঝতে শেখার পর থেকে সত্য কুমার দেখেছেন, পরিবারে কেবল ‘নাই আর নাই’ রব। তাই স্কুলের ফাঁকে বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করতেন।

হাই স্কুলে ওঠার পর থেকে সত্যিকারের জীবনযুদ্ধ শুরু হয় তার। প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে স্কুল। বাড়ি থেকে কিছুদূর যেতেই একটা নদী পার হতে হতো। বর্ষায় সেটি পানিতে টইটম্বুর থাকতো। তাই বাধ্য হয়ে চার-পাঁচটা গ্রাম ঘুরে তবেই যেতে হতো স্কুলে। 

এভাবে নানা বাধার পাহাড় ঠেলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসেছেন সত্য কুমার। ভর্তির সুযোগ পান চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগে ভর্তি হন। 

২৯ অক্টোবর তার জীবন সংগ্রামের গল্প ছাপা হয়েছিল কালের কণ্ঠের অবসরে পাতায়। শিরোনাম, ‘এত টাকা দিতে পারব নারে বাপ’। আলোচিত প্রতিবেদনটি পড়ে রাঙামাটির রাজস্থলীর দুর্গম বিমাছড়া পাড়ার এই তরুণকে অনুপ্রেরণা জোগান অসংখ্য মানুষ।

মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই নতুন দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছিল সত্য কুমারকে। তখন তিনি কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, ‘ঢাকায় থাকা-খাওয়ার খরচ অনেক বেশি। বাবারও বয়স হয়েছে। আগের মতো কাজ করতে পারেন না। ফলে এত খরচ জোগানো তার পক্ষে অসম্ভব। তবে কি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাবর্তন নেওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে না আমার?’

অদম্য এই তরুণের স্বপ্নপূরণে এগিয়ে এসেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পড়ে সত্য কুমারের পড়াশোনার ব্যয় বহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রধান ইমদাদুল হক মিলন বললেন, ‘এ ধরনের কাজগুলো আমরা নিয়মিত করে থাকি। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানলাম, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সত্য কুমার। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে তার পড়াশোনার খরচ আমরা চালাব।’

সংগঠনটির পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, ‘সত্য কুমারের উঠে আসার গল্প যে কারো জন্যই অনুপ্রেরণার। আমরা তার পাশে আছি।’ 

এদিকে, এই খবরে দারুণ খুশি সত্য কুমারের মা মুক্তামালা তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি বলন, ‘বহুত উপকার হইছে। অনেক ভালো লাগছে।’

তার বড় বোন শ্যামলী তঞ্চঙ্গ্যা বললেন, ‘অনেক কষ্টের জার্নি ছিল এটা। ঢাকায় ওর পড়াশোনার খরচ নিয়ে ভীষণ চিন্তায় ছিলাম আমরা। খরবটি শুনে স্বস্তি পেয়েছি। আপনাদের ধন্যবাদ।’

সত্য কুমার বলন, ‘পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে পারব কিনা এ নিয়ে টেনশনে ছিলাম। সে ভাবনা দূর হয়েছে। বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা। কালের কণ্ঠকেও ধন্যবাদ।

এর আগে, সত্য কুমারকে প্রথম বর্ষের বইগুলো কিনে দেবেন বলে জানিয়েছিলেন রাঙামাটি জজ কোর্টের আইনজীবী নয়ন চাকমা। 

বিডি প্রতিদিন/ইই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর