বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য রাজশাহী গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর। ভারতের কাছ থেকে রাজশাহী যেন পূর্ণ সুবিধা নিতে পারে সেজন্য আমরা রাজশাহী বর্ডারকে উন্নত করছি। রাজশাহীর উন্নয়নে দ্রুত আমরা রাজশাহী-ভারত ট্রেন চালু করছি। ট্রেনটি চালু হলে আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হবে। আমাদের মাঝে যোগাযোগ বাড়বে।
‘মিলি মৈত্রীবন্ধনে গড়ি সংস্কৃতির সেতু’ স্লোগানে সাত দিনব্যাপী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী নাট্যোৎসব-২০১৮’ উদ্বোধনী আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। আজ সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সন্ধ্যা ৬টায় সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবন চত্বরে নাট্যোৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান।
হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘৫০ বছর ধরে বাংলাদেশ-ভারতের সুসম্পর্ক চলে আসছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আজ সোনালী অধ্যায় চলছে। এই সম্পর্ক দুই দেশের মানুষ ও সংস্কৃতিকে কাছাকাছি যেমন আনবে, তেমনি শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করবে।’
তিনি বলেন, ‘আগে আমরা পাশাপাশি ছিলাম, এখন এক সঙ্গে আছি। এই সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় ভারতের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি অঙ্গণে এক হয়ে কাজ করছে। ১৯৭১ সালে ভারতীয় সৈন্যরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে। এটা ভারত আজও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে। দুঃসময়-সুসময় বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক অটুট থাকবে এটাই প্রত্যাশা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহান বলেন, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সম্পর্ক এদেশের জন্মলগ্ন থেকেই চলছে। এদেশের প্রতিক‚ল মুহূর্তে ভারত কখনো চুপ করে থাকেনি, তারা আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। উপাচার্য বলেন, নাটক জীবনের প্রতিচ্ছবি। এটি সমাজের যাবতীয় দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করে। যাবতীয় অপকর্ম-অপধর্ম, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধ, মাদকসহ সবকিছুর বিপক্ষে সোচ্চার ভূমিকা রেখে চলেছে আমাদের এ নাটক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, আজ সংস্কৃতির জায়গায় বিশ্ব বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। অপসংস্কৃতিগুলো সভ্যতার টুঁটি চেপে ধরে রেখেছে। সংস্কৃতি মার খেয়ে যাচ্ছে অপসংস্কৃতির কাছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটি দুর্জয় ঘাঁটি। এখানে অপসংস্কৃতির কোন স্থান নেই। প্রজন্মের পর প্রজন্ম এ সংস্কৃতির ধারাকে অব্যাহত রাখবে।
নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আমিরুজ্জামানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, নাট্যব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিক, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগের অধ্যাপক ড. সোমনার সিনহা।
সাত দিনব্যাপী আয়োজিত এ নাট্যোৎসবে ভারত থেকে অশোকনগর নাট্যমুখ, লোককৃষ্টি, শ্রুতি পারফরমিং ট্রুপ এবং বাংলাদেশ থেকে বটতলা, প্রাচ্যনাট্য, সুবচন নাট্যদল, অনুশীলন নাট্যদল, ঢাকা থিয়েটার, লোক নাট্যদল, উত্তরাধিকার, মণিপুরি থিয়েটার, বাংলাদেশের পুতুলনাট্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ অংশগ্রহণ করছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার