রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে এমফিল গবেষণাপত্রের শিরোনাম থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ দেয়ার ঘটনা নিয়ে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে বিভাগটি। বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছে। ফলে সেই গবেষণাপত্রের শিরোনামে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি বহাল রাখতে বাধ্য হয়েছে বিভাগটি। বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন গবেষণার সুপারভাইজার অধ্যাপক আরিফুজ্জামান।
অধ্যাপক আরিফুজ্জামান জানান, গবেষণাপত্রে শিরোনামে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি বহাল থাকবে। ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দ বহাল রেখেই গবেষণাটি অনুমোদিত হয়েছে।
এর আগে গত ৬ জুলাই বাংলাদেশ প্রতিদিন অনলাইনে ‘এম.ফিল গবেষণার শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর নাম থাকায় আপত্তি!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নজরে আসলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বিভাগের খাদিজা আক্তার নামে এক এম.ফিল. গবেষক ‘বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি: প্রেক্ষিত মধ্যপ্রাচ্য’ শিরোনামে ওই এমফিল গবেষণা করেন। সেই গবেষণায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামল ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক যেসব পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা হয়েছিলো, সেসব বিষয় নিয়ে তথ্য সন্নিবেশ করা হয়। এই গবেষণাটির সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক আরিফুর রহমান এবং কো-সুপারভাইজার ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. ফায়েকুজ্জামান।
গবেষণা শেষে তা জমা দেওয়া হলে শিরোনাম নিয়ে আপত্তি ওঠে একাডেমিক কমিটিতে। বিভাগের বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা গবেষণাপত্রের শিরোনামে ‘বঙ্গবন্ধু’ উল্লেখ করায় আপত্তি প্রকাশ করেন। সে কারণে গত ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত বিভাগের একাডেমিক কমিটির সাধারণ সভায় গবেষণাপত্রটির শিরোনাম পরিবর্তন করতে প্রস্তাব দেন তারা। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী গবেষেণার শিরোনাম করা হয় ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি (১৯৭২-৭৫); প্রেক্ষিত মধ্যপ্রাচ্য’। এরপর বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এই প্রস্তাবই গৃহীত হয়।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভা আহ্বান করা হয়। সভায় ওই গবেষণাপত্রে শিরোনামে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে ‘বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি: প্রেক্ষিত মধ্যপ্রাচ্য’ শিরোনামে ওই এমফিল গবেষণা জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।
এদিকে, বিভাগের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের আপত্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দ বাদ দেওয়াকে ‘বঙ্গবন্ধুর অবমাননার শামিল’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সোমবার (৭ জুলাই) বিক্ষোভ মিছিল আহ্বান করে। পরে বিভাগের একাডেমিক কমিটি গবেষণাপত্রে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দ বহাল রাখতে সম্মত হওয়ার কর্মসূচী বাতিল করা হয়।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. ফজলুল হক বলেন, বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় পূর্বের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে গবেষণার শিরোনামে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল