করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশের বেশির ভাগ মানুষ যখন নিজের চিন্তায় ব্যস্ত। কিছু মানুষ এ ভয়াবহ পরিস্থিতে নিজের চিন্তা না করে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তাদেরই একজন আলী তানভীর। দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে এক এক করে অসহায় ৪৩ জন প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এ শিক্ষার্থী। তার সাথে এ মানবিক কাজে যুক্ত হয়েছেন মুজিব, আরফাত, ফয়েজ নামে আরও তিন যুবক।
চকরিয়া উপজেলার ভেওলা ইনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে প্রতিবন্ধী আসমাকে উপহার দিয়েছেন হুইল চেয়ার। এছাড়াও ফারজানা নামের আরেক প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ার দেয়া হয়েছে। ফারুকের কাছেও দেয়া হয়েছে ওয়াকিং ওয়ে। সেটার মাধ্যমে সে হাটতে শিখছে। করোনাকালে এমন ৪৩ জন প্রতিবন্ধী কে সহায়তা দিয়েছেন। সাথে তাদের দেয়া হয়েছে নিত্য প্রয়োজনী খাবার সামগ্রী। এখন আসমারা স্বপ্ন দেখে সুন্দর জীবনের।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলো বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরই মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে গ্রামে। তাদেরই একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ৩য় বর্ষের বিভাগের শিক্ষার্থী আলী তানভীর। বাড়ি এসে বসে না থেকে ছুটে চলেছেন গ্রামের অলিগলি। খুজঁ নিয়েছেন অসহায় মানুষের। তখনই খবর পেলেন তার গ্রামের প্রতিবন্ধীদের। প্রতিদিনই সে ছুটে চলেছে প্রতিবন্ধীদের সেবায়।
নিজের কিছু জমানো টাকা। সেই সাথে বৃত্তবানদের কাছ থেকে সহযোগিতা। সব মিলিয়ে যে টাকাগুলো ছিল সব টাকা দিয়েই পাশে দাঁড়ালেন প্রতিবন্ধীদের।
চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরি নদীর কূল ঘেঁষে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের পশ্চিমে একটি নদী পার হলেই খিলছাদক গ্রাম। যে গ্রামের চারদিকে নদী। গত ১৫ দিন ধরে সে গ্রামের একদল যুবক প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ ও অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নেন। যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলী তানভীর। পরে ERAT FOUNDATION এর পক্ষ থেকে গত ২৫ জুন বরইতলীর গোবিন্দপুরে দুই প্রতি প্রতিবন্ধী বোনের কাছে ৫ হাজার টাকার খাবার পৌঁছে দেন। এরপর ২৮ জুন পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নে চরপাড়ার আরেক প্রতিবন্ধী ফারজানার কাছে হুইল চেয়ার প্রদান করেন। গত ১ জুলাই কৈয়ারবিলে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ির ৪০ জন শিশুকে রান্না করে খাবার বিতরণ করেন। ২ জুলাই কৈয়ারবিলে আরেক প্রতিবন্ধী ফাহিমকে হুইল চেয়ার প্রদান করেন। ৩ জুলাই ৪০ জন অসহায় বৃদ্ধকে বিরানী রান্না করে খাওয়ান।
তাদের এ ধারাবাহিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে এবং সাংগঠনিক দক্ষতা বাড়াতে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন কমিটি অনুমোদন দেন। কমিটিতে সভাপতি মো: রিফাত হোছাইন, সেক্রেটারি করা হয় রিদুয়ানুল ইসলাম ত্বোহাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবি ছাত্রলীগ নেতা আলী তানভীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছুটি হওয়ার পর গ্রামের বাড়ি চলে আসি। এসে দেখি করোনা পরিস্থিতিতে গ্রামে মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী আর অসহায় বৃদ্ধরা। তাই এলাকার যুবকদের একত্রিত করে কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেই। তখন থেকেই আমাদের ধারাবাহিক ছোট্ট এ প্রয়াস।
খালেদা নামের এক প্রতিবন্ধীর মা ফিরোজা বেগম বলেন, বিগত ১৬ বছর ধরে আমাদের মেয়ে বাড়িতেই বসে থাকতো। কিন্তু কিছু যুবকের সহায়তায় আজ আমার মা বাইরের আরো দেখছে। সেই ছেলেগুলোর জন্য দোয়া।
বিডি প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন