২১ এপ্রিল, ২০২১ ২০:৪০

পার্সেল ট্রেনেই পরিবহন হচ্ছে কৃষি ও জরুরি পণ্য

পণ্য পরিবহনে মূল ভাড়ার ২৫ শতাংশ ছাড়

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম


পার্সেল ট্রেনেই পরিবহন হচ্ছে কৃষি ও জরুরি পণ্য

ফাইল ছবি

করোনা পরিস্থিতিতে দেশের দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে কম খরচের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রেলওয়ের বিশেষ পার্সেল ট্রেনেই পৌঁছে যাচ্ছে কৃষি, ফলমূল ও জরুরি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্র। রেল প্রশাসন পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ পার্সেল ট্রেন চলাচল শুরু করেছে। এসব পণ্য পরিবহনে মূল ভাড়ার ওপর ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। বাড়তি কোনো মাশুলও দিতে হবে না। চলমান লকডাউনে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল একেবারেই বন্ধ রয়েছে।

পার্সেল ট্রেনে পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবসায়ীদের সুবিধায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পণ্য পরিবহনের স্বার্থে যেকোনো প্রয়োজনে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম খান ফোকাল পারসন হিসেবে কাজ করবেন। এ জন্য ০১৭১১-৬৯১১৯০ নম্বরে ফোন দিয়ে পণ্য পরিবহনের জন্য যাবতীয় তথ্য নেওয়া যাবে।   

পার্সেল ট্রেনে প্রতিকেজি পণ্য কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পরিবহনের খরচ মাত্র ১ টাকা ৮১ পয়সা জানিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে এবং চলমান লকডাউনে কৃষক ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনের স্বার্থে খুব কম খরচে রেলওয়ে পার্সেল ট্রেন সার্ভিস চালু করেছে। অন্য পরিবহনের তুলনায় রেলে পণ্য পরিবহন খরচ কয়েকগুণ কমে করা হচ্ছে। কৃষক ও কৃষির স্বার্থে পার্সেল ট্রেন সার্ভিস চালু রেখেছি। তবে পার্সেল ট্রেনে সাধারণ মানুষের উৎপাদিত পণ্য কম খরচে ও সহজে পরিবহন করবে সেটাই প্রত্যাশা করছি এবং পণ্য পরিবহনের স্বার্থে একজনকে ফোকাল পারসন হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি-অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম, করোনায় ঢাকা-সরিষাবাড়ী ও চট্টগ্রাম-সিলেটের মধ্যে পরিবাহিত পার্সেল মালামাল ভৈরববাজার ও আখাউড়া স্টেশনে লাগেজ ভ্যান সংযোজন/বিয়োজনের মাধ্যমে দেশের যেকোনো গন্তব্যে পাঠানো হবে। খুলনা-ঢাকা রুটের মালামাল পরিবাহিত লাগেজ ভ্যান ঈশ্বরদী স্টেশনে বিয়োজন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম-ঢাকা রুটে চলাচলকারী ট্রেনে সংযোজন/বিয়োজন করা হবে।

তিনি বলেন, নির্ধারিত রুট ছাড়াও দেশের অন্যান্য যেকোনো গন্তব্যে পণ্য পাঠানোর জন্য রেলওয়ে সার্বিক সেবা প্রদান করছে। বিশেষ পার্সেল ট্রেনে কৃষিজাত পণ্য যেমন, শাক-সবজি, দেশীয় ফলমূলসহ অন্যান্য কৃষি পণ্যাদি পরিবহনের ক্ষেত্রে মূল ভাড়ার উপর ২৫ শতাংশ ছাড় এবং অন্যান্য সকল প্রকার চার্জ করোনাকালীন সংকটের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য মওকুফ করা হয়েছে।

জানা গেছে, কোভিড-১৯ এর কারণে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য লকডাউন চলাকালীন পরিবহন সহজতর করতে বিশেষ পার্সেল ট্রেন সুবিধা চালু করে রেলওয়ে। সড়কপথের যানবাহনের তুলনায় কম খরচের এসব পার্সেল ট্রেনে পরিবহন করা হচ্ছে। পার্সেল ট্রেনে প্রতিকেজি পণ্য কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পরিবহনের খরচ মাত্র ১ টাকা ৮১ পয়সা। পণ্যটি যদি কৃষিজাত হয় তবে এর উপর আরও ২৫ শতাংশ রেয়াতি সুবিধা পাওয়া যাবে। এই হিসাবে প্রতি ৫ টন কৃষিজাত পণ্য কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পরিবহন করতে খরচ হবে মাত্র ৬ হাজার ৭৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও ৫ টন পণ্য ট্রাকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় নিয়ে যেতে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হবে।

রেলওয়ের সূত্রে জানা গেছে, লকডাউনের প্রথম চট্টগ্রাম থেকে সরিষাবাড়ী, ঢাকা থেকে সিলেট, পঞ্চগড় থেকে ঢাকা এবং খুলনা থেকে চিলাহাটি রুটে উভয়পথে ৮টি পার্সেল ট্রেন সার্ভিস চালু হয়। ১৪ এপ্রিল থেকে চালু হওয়া পার্সেল ট্রেন-১ ও ২ এর মাধ্যমে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করেছেন ১ হাজার ৮৯৬ জন। টনের হিসাবে পণ্য পরিবহন হয়েছে মাত্র ৮০ টনের কিছু বেশি। এছাড়া আয় হয়েছে মাত্র ২ লাখ ৫২ হাজার ৩১০ টাকা। যদিও পার্সেল ১ ও ২ ট্রেনটি ৬/১২ রেক অর্থাৎ ৬টি কোচ নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সরিষাবাড়ীতে কৃষি ও বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে। ট্রেনগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-সিলেট রুটের পার্সেল ট্রেনটি ঢাকা বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে রাত ২টা ৩০ মিনিটে সিলেট পৌঁছাবে। এছাড়া সিলেট থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে ওই ট্রেন সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা পৌঁছাবে। অপরদিকে, চট্টগ্রাম-সরিষাবাড়ী রুটে পার্সেল ট্রেনটি বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে ভোর ৪টায় সরিষাবাড়ী পৌঁছাবে। ফিরতি পথে ট্রেনটি ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে সরিষাবাড়ি থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে।

এছাড়া সপ্তাহে শনি, সোম, ও বুধবার খুলনা-চিলাহাটি রুটের পার্সেল ট্রেনটি খুলনা থেকে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে দিবাগত রাত ২টা ৩০ মিনিটে চিলাহাটি পৌঁছাবে। একই রুটে সপ্তাহে তিন দিন (রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার) চিলাহাটি থেকে পার্সেল ট্রেনটি বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে  ছেড়ে দিবাগত রাত ২টা ৩০ মিনিটে খুলনা পৌঁছাবে। অপরদিকে সপ্তাহে তিনদিন (শনি, সোম ও বুধবার) বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম-ঢাকা রুটে ১টি পার্সেল ট্রেন চলবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশন থেকে ট্রেনটি নির্ধারিত দিনে দুপুর ১টায় ছেড়ে দিবাগত রাত ৩টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। একই রুটে সপ্তাহে তিনদিন (রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার) ঢাকা থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে রাত ৮টা ৩০ মিনিটে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশনে পৌঁছাবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর