শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় আমদানি হওয়া ৯৫ শতাংশ কাগজ খোলা বাজারে বিক্রির অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বন্ডের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে তারা বলেছেন, রাজধানীর নয়াবাজার বন্ডের কাগজে সয়লাব। বন্ড সুবিধার কারণে প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার কেটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয় সরকার।
ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগের জবাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেছেন, বন্ডের সুবিধা নিয়ে যারা অপব্যবহার করেন, তারা জাতীয় শত্রু। আমরা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো।
মঙ্গলবার সেগুণ বাগিচার রাজস্ব ভবনে এনবিআর আয়োজিত 'সেবা খাত সংশ্লিষ্ট প্রাক-বাজেট ২০১৬-১৭' শীর্ষক আলোচনায় এফবিসিসিআই সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ বলেন, বন্ডের অপব্যবহারের কারণে ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছে না। ইলেক্টনিক ক্যাশ রেজিস্টার-ইসিআর নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ দরকার। ভ্যাটে লেভেলপ্লেং ফিল্ড (ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা) চাই। আমরা ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে পারবো না। সাড়ে ৪ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে ভ্যাট হার রাখা উচিত।
এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি শহিদ সেরনিয়াবাদ, সৃজনশীল জ্ঞান ও প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি, পেপার ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হক, পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপণন সমিতির সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল খান, ড্রেস মেকার এসোসিয়েশনের সভাপতি বি এম হারুন অর রশিদ, প্রাইভেট সিকিউরিটিজ এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম সরকার প্রমুখ।
এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প নিয়ে আমরা বহুদূর এগিয়ে যেতে চাই। ভ্যাট আদায়ে আমাদের কোথায় কোথায় মান উন্নয়ন প্রয়োজন সে বিষয়ে আমাদের ধারণা হয়েছে। আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে ভ্যাটের উত্তম চর্চা থেকে আমরা শিখছি। তিনি বলেন, আসছে ২০১৬-'১৭ অর্থবছরের বাজেটকে ব্যবসা-উন্নয়ন, জনবান্ধব, জ্ঞানভিত্তিক ও সংস্কৃতিবান্ধব করবো।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি শহিদ সেরনিয়াবাদ বন্ড সুবিধা নিয়ে অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, বন্ডের আওতায় যে সকল কাগজ, বোর্ড ও কালি আমদানি হয়, তা যেন কোন অবস্থাতেই খোলা বাজারে অবৈধভাবে না আসতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এনবিআরকে নিতে হবে।
সৃজনশীল জ্ঞান ও প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বলেন, জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ও বাস্তব ভিত্তি বাজেট চাই।
পেপার ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হক বলেন, দেশে উৎপাদন হয় এমন কাগজ আমরা আমদানি করি না। তবুও বন্ডের অপব্যবহারের কারণে কাগজের ব্যবসা করতে পারছি না। নয়া বাজার বন্ডের কাগজে সয়লাব হয়ে গেছে। দেখার কেউ নেই। আমরা ৭২ জন ব্যবসায়ী পথে বসে গেছি। অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। অথচ বন্ডের অপব্যবহারের কারণে ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা প্রতিবছর রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। তিনি বন্ডের বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করুন। বন্ড থেকে আমাদের রেহাই দিন।
পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিপনণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল খান বলেন, বন্ডের অপব্যহারের কারণে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। ৩২ কোটি বই ছাপা হয়েছে, যার একটিতেও ব্যাংকের ঋণপত্র বা এলসি নেই।
বিডি-প্রতিদিন/২৯ মার্চ ২০১৬/ এস আহমেদ