রাজশাহীতে আরবান মাতৃসদন থেকে শিশু চুরির ঘটনায় জড়িত নারীর সন্ধান পাওয়া গেছে। সিসি টিভির ফুটেজে ওই নারীকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।
গত ১৯ জানুয়ারি রাতে রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকার ওই মাতৃসদন থেকেই অচেনা নারী মুক্তির বুক খালি করে তার সন্তানকে চুরি করে নিয়ে যান। এরপর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মুক্তি মাতৃসদন ছেড়ে যাননি। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মুক্তি এখন শারীরিকভাবে সুস্থ, কিন্তু মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মাতৃসদনটিতে গেলে মুক্তির কাছে তার মা রোজিনা খাতুন, বাবা মুক্তার আলী ও খালু ওমর আলীকে পাওয়া যায়। তারা জানান, তিন দিন আগে মাতৃসদন থেকে মুক্তিকে ছুটি দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সেদিন মুক্তি যেতে চাননি।
মুক্তি বলেছিলেন, সন্তানকে না পেলে তিনি কোনোভাবেই এখান থেকে যাবেন না। এর পর দিন থেকেই মুক্তির আচরণে পরিবর্তন হতে থাকে। এখন তিনি সারাক্ষণ চুপচাপ থাকেন। তবে মাঝে মাঝে চিৎকার করে কান্নাকাটি করেন। তখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ কারণে তারা এখনও তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।
মুক্তির দিনমজুর বাবা মুক্তার আলী জানান, রাজশাহীর পবা উপজেলার দুর্গম চর শ্যামপুরে তাদের বাড়ি। বছর দুয়েক পর একই গ্রামে মেয়ের বিয়ে দেন। তার জামাই কুলির কাজ করেন। মুক্তিকে রাজশাহী মহানগরীর ডাশমারী নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাঠকর্মী তহুরা বেগম তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। তিনি দুইবার তাদের বাসায় গেছেন। একবার ৩০-৩৫ বছর বয়সী একজন অচেনা নারীকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। মুক্তির সঙ্গে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তহুরা বলেছিলেন, ওই নারী বিদেশি এক প্রকল্পে কাজ করেন। বিদেশি প্রকল্প থেকে তিনি দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের আর্থিক সহায়তা দেন। তাকেও সহায়তা করবেন।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মতিয়ার রহমান জানান, মামলা দায়েরের পর মাঠকর্মী তহুরা বেগমকে তারা গ্রেফতার করেন। এরপর তাকে তিন দিন রিমান্ডেও নেওয়া হয়। গত বুধবার রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তহুরা গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোনো তথ্য দেননি। তবে বাচ্চা নিয়ে যাওয়া ওই নারীর ছবি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি জানান, নগরীর বিনোদপুর মোড়ে ইসলামীয়া কলেজ রোডে লাগানো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সিসি ক্যামেরায় ওই নারী চোর স্পষ্টভাবেই ধরা পড়েছেন। গত মঙ্গলবার ভিডিও ফুটেজটি পুলিশের হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, গত ১৮ তারিখ দুপুর ২টা ১২ মিনিটে ওই নারী রিকশা নিয়ে এসে ওই মোড়ে নামেন। মাত্র কয়েক সেকেন্ডই তিনি সিসি ক্যামেরার সামনে থাকেন। ফুটেজটি সংগ্রহ করে মুক্তির মা-বাবাকে দেখানো হয়। তারা ওই নারী চোরকে শনাক্ত করেন। এরপর ওই নারীর পরিচয় জানার জন্য তার ছবি দেশের বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়েছে। আর নবজাতক উদ্ধারেও বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে।
মাতৃসদনটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ জানান, নবজাতক চুরির ঘটনায় রাসিক ও পিএসটিসির পক্ষ থেকে আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুটি কমিটিতেই চারজন করে সদস্য রয়েছেন। তারা সরেজমিনে তদন্ত করেছেন। তবে তার কোনো প্রতিবেদন তাদের দেয়া হয়নি। পুলিশও এখানকার একজন নার্স ও একজন নৈশ্য প্রহরীকে আটক করেছিল। তবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।