বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিচার বিভাগের বাজেটে লিগ্যাল এইডে গুরুত্ব

পৌনে ১০০ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব

আরাফাত মুন্না

নতুন সরকারের প্রথম বাজেটে আইন ও বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় পৌনে ১০০ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান (লিগ্যাল এইড) সংস্থাকে।

এ সংস্থার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়। সংস্থাটির জন্য চলতি অর্থ বছরের (২০১৮-২০১৯) চেয়ে এক-তৃতীয়াংশ বেশি অর্থ বরাদ্দের জন্য এবারের বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগ প্রণীত আইন মন্ত্রণালয়ের এবারের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এতে দরিদ্র অসহায় জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা দেওয়া, ৬৪ জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালত ভবন ও সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগে নতুন ১২ তলা ভবন নির্মাণ ও বার কাউন্সিলের ভবন নির্মাণ, অধস্তন আদালতের রেকর্ড রুম নির্মাণ, সাব-রেজিস্ট্র্রি অফিস নির্মাণ, ডিজিলাইজড ব্যবস্থাপনা সুবিধা বাড়ানো এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের গাড়ি সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার পেয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয়ের জন্য সংশোধিত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫৭৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে ১ হাজার ৬৫২ কোটি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এর মধ্যে অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ এক হাজার ১৯৮ কোটি ৪২ লাখ এবং উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৫৫ কোটি টাকা।

চলতি অর্থ বছরে লিগ্যাল এইডের জন্য বরাদ্দ ছিল ১৫ কোটি ৭৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। তবে এবার সংস্থাটির জন্য আগামী  (২০১৯-২০২০) অর্থ বছরে ২১ কোটি ১৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার লিগ্যাল এইড কার্যক্রমকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ধারাবাহিকতার প্রতিফলন ঘটেছে এবারের বাজেটেও।

খাতওয়ারি বাজেট বরাদ্দ : প্রস্তাবিত আগামী অর্থ বছরের বাজেটে অনুন্নয়ন খাতে এবার আইন মন্ত্রণালয়কে (সচিবালয়) ৭৭ কোটি ৬ লাখ ৮১ হাজার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ১০ কোটি ৫ লাখ, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে ৩৪ কোটি ৮ লাখ ৬৮ হাজার, লিগ্যাল এইড সংস্থাকে ২১ কোটি ১৬ লাখ ৩২ হাজার, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে ৩৪ কোটি ৮ লাখ ৬৮ হাজার, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালতকে ২০৩ কোটি ৫০ লাখ, দেওয়ানি আদালতকে ৪২১ কোটি ৮৫ লাখ, নিবন্ধন অধিদফতরকে (সদর, জেলা ও উপজেলা) ৩৩৫ কোটি ৭০ লাখ, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনকে ৪ কোটি ৮০ লাখ ১২ হাজার, বার কাউন্সিলকে ৭০ লাখসহ মোট ৮০১ কোটি ৪৭ লাখ ৭ হাজার টাকা বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া উন্নয়ন খাতে ৪৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলা আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ২৫৬ কোটি, স্ট্রেন্দেনিং ক্যাপাসিটি অব জুডিশিয়াল সিস্টেম ফর চাইল্ড প্রটেকশন প্রকল্পের জন্য চার কোটি, বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত প্রকল্পে এক হাজার ১৫ কোটি, সাব-রেজিস্ট্রি ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ১০০ কোটি, সুপ্রিম কোর্টের ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ৩৫ কোটি, বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

আরও বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন : আইন ও বিচার বিভাগের জন্য জাতীয় বাজেটে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের ১৭ কোটি মানুষের দেশে বাজেটে প্রতি বছরই বিচার বিভাগের জন্য বরাদ্দটা খুব কম থাকে। একটি চার লেন মহাসড়কের ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার তৈরিতে যে ব্যয়, আমাদের বিচার বিভাগের জন্য বাজেটে এটুকুই বরাদ্দ থাকে। গত অর্থ বছরে মোট বাজেটের মাত্র ০.৩২ শতাংশ বরাদ্দ ছিল আইন মন্ত্রণালয়ের জন্য। শাহদীন মালিক বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সাধারণ মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হলে বাজেটে বিচার বিভাগের বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও বাজেট বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তাব পাঠাতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর