শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

উন্নয়ন প্রকল্পের দুই কোটি টাকা ছাত্রলীগের পকেটে!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

শরিফুল ইসলাম সীমান্ত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচটি নতুন আবাসিক হলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এতে মোট বরাদ্দ সাড়ে চারশ কোটি টাকা। বরাদ্দের সেই টাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে এক কোটিসহ মোট দুই কোটি টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

গত মে মাসে ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তখন উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বিঘ্নে হলগুলোর নির্মাণকাজ চালাতেই ছাত্রলীগকে এই টাকা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রাপ্ত টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ক্যাম্পাসের সর্বত্র আলোচনার বিষয় এখন এই ‘দুই কোটি টাকা’। আবার টাকার ন্যায্য ভাগ পাননি দাবি করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কতিপয়          নেতা-কর্মী। বিশেষ করে সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলের অনুসারীরা টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে এ নিয়ে ক্ষোভ জানান বঞ্চিত কিছু নেতা-কর্মী। উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অনেকটা উত্তেজিত হয়ে এগুলো ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট বলে দাবি করেন। জানা যায়, গত ‘৯ আগস্ট উপাচার্যের বাসভবনে এ টাকা ছাত্রলীগকে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা, সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলসহ পাঁচজন নেতা ও উপাচার্যের পরিবারের একাধিক সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগ নেতাদের দেওয়া তথ্যের রেকর্ড বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে আছে। সূত্র জানায়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া কোটি টাকা ৯ আগস্ট ভাগাভাগি হয়। এ টাকা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদকের বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যে বণ্টন হয়। এর মধ্যে সভাপতি ৫০ লাখ, সাধারণ সম্পাদক ২৫ লাখ ও বিদ্রোহী গ্রুপ পায় ২৫ লাখ টাকা।

সূত্র আরও জানায়, ১০ তারিখ বিকালে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছেলেদের ছয়টি হলে তার অনুসারী ও কয়েকজন নেত্রীকে টাকা ভাগ করে দেন।

 ছেলেদের হলগুলো হলো- আল বেরুনী হল, মওলানা ভাসানী হল, শহীদ রফিক জব্বার হল, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও মীর মশাররফ হোসেন হল। প্রতিটি হলেই ৩ লাখ টাকা করে দেন ছাত্রলীগ সভাপতি। টাকা পাওয়ার এ বিষয়টি একাধিক হলের নেতা-কর্মীরা নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে। এ ছাড়া আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের নেতাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে টাকা দেন সভাপতি এবং শেখ হাসিনা হলের দুই নেত্রীকে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

সাধারণ সম্পাদক শহীদ রফিক জব্বার হল, আল বেরুনী হল ও মীর মশাররফ হোসেন হলের নেতা-কর্মীদের ৩০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। এ ছাড়া বাকি হলের নেতা-কর্মীদেরও ব্যক্তিগতভাবে টাকা দিয়েছেন তিনি।

এ ছাড়া বিদ্রোহী গ্রুপের সিনিয়র তিন নেতা ৩ লাখ টাকা করে নেন। আর বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মওলানা ভাসানী হলের নেতা-কর্মীদের মাঝে ৩ লাখ করে মোট ৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া জাবি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদেরকেও ৬০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় বলে সূত্র জানায়।

উপাচার্যের সঙ্গে মিটিংয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রায় সময়ই আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলি। তার অংশ হিসেবেই আমরা সে দিন দেখা করতে গিয়েছিলাম। সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল এবং খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

 

 

সর্বশেষ খবর