শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

উপকূলে বাঁধে বাঁধে জীবনযুদ্ধ

ভেঙে পড়েছে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, জীবনরক্ষায় নিজেরাই নেমেছেন বাঁধ সংস্কারে

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

উপকূলে বাঁধে বাঁধে জীবনযুদ্ধ

ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে নেমেছেন স্থানীয়রা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

একের পর এক দুর্যোগে অনেকটাই ভেঙে পড়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। তীব্র ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও ফণীর পর আম্ফানের আঘাত। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন মাছ চাষিরা। সেই সঙ্গে নোনা পানির কারণে ফসল ফলাতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। এদিকে ক্ষোভে-অভিমানে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত খুলনার উপকূলীয় এলাকার বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার মানুষ। অস্তিত্ব রক্ষায় তারা নিজেরাই নেমেছেন বাঁধ মেরামতে। খুলনার কয়রা, বটিয়াঘাটায় সকাল হলেই কোদাল-খোন্তা নিয়ে সবাই ছুটছেন বেড়িবাঁধে। দুপুরে নদীতে জোয়ার আসার আগ পর্যন্ত একটানা মাটি কাটছেন, বাঁধ উঁচু করছেন। জানা যায়, ২০০৭ সালে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় সিডরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। এরপর ২০০৯ সালে আঘাত হানে প্রলয়ঙ্করী ঝড় আইলা। এতে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকে পড়ে নোনা পানি। যার সঙ্গে লড়াই চলে পরবর্তী কয়েক বছর। সর্বশেষ ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙে ফের নোনা পানিতে তলিয়ে যায় খুলনার বিস্তীর্ণ এলাকা। শুধু সবজি চাষেই এবার ক্ষতি হয়েছে ৫৬ কোটি টাকা। সাড়ে ১৪ হাজার পুকুর, ঘের দিঘি ভেসে যাওয়ায় মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে আরও ৯৬ কোটি টাকার। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন’র পরিচালক মোস্তফা নুরুজ্জামান বলেন, বহুমুখী প্রাকৃতিক দুর্যোগে বার বার ফসলহানির কারণে পাল্টে যাচ্ছে এখানকার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। নোনা পানির কারণে আগামী ৫-৭ বছর আগের মতো আর ফসল ফলানো যাবে না। ফলে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সংকটে পড়বেন কৃষিনির্ভর সাধারণ মানুষ। এদিকে দুর্যোগে বেড়িবাঁধ টিকিয়ে রাখতে টেকসই প্রযুক্তিকে মূল সমাধান ভাবছেন জনপ্রতিনিধিরা। কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জি এম শামছুর রহমান বলেন, বাঁধের নাজুক অবস্থা সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আগেই জানানো হয়েছিল। কিন্তু ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাঁধ ভেঙে লবণ পানিতে বাড়িঘর, ফসল তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষুব্ধ ক্ষতিগ্রস্তরা এবার নেমেছেন বাঁধ মেরামতে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটে বাঁধ নির্মাণে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার আলাদা তিনটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন হলে মাস্টার প্লান অনুযায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণ শুরু হবে।

সর্বশেষ খবর