বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নির্মাণাধীন ভবনে নকল ক্যাবল

পুরান ঢাকায় চক্রের ১৪ সদস্য চিহ্নিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির নির্মাণাধীন ভবনে ব্র্যান্ডের নকল ক্যাবল ব্যবহারের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রায় ৩০ বছর ধরে সরবরাহ করা এই নকল ক্যাবলের কারণে একের পর এক শর্টসার্কিটে আগুনের ঘটনা ঘটছে। পুরান ঢাকার বংশালে অভিযান চালিয়ে বিআরবি ক্যাবল ও বিজলী ক্যাবলসের নকল কারখানার সন্ধান পেয়েছে সংস্থাটি। কারখানাটিতে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। গতকাল বেলা ১২টায় রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানিয়েছেন সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা মেট্রো) মো. ইমাম হোসেন। তিনি জানান, চক্রটি ২৮ থেকে ৩০ বছর ধরে নকল ক্যাবল সরবরাহ করে আসছে। নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ওয়্যারিংয়ের জন্য ৫০০ কয়েলের মধ্যে ২০০ কয়েল আসল আর ৩০০ কয়েল নকল ক্যাবল নিতেন এ চক্রের কাছ থেকে।

তবে তাদের সহায়তা করে আসছিলেন কোম্পানির কিছু মার্কেটিং কর্মকর্তা। তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

ইমাম হোসেন বলেন, নকল ক্যাবল পুরান ঢাকার নবাবপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো। গোপন তথ্যে সিআইডি মঙ্গলবার বংশালের ১৯/২ নম্বর কাজী আবদুল হামিদ লেনের চান্দনা মার্কেটের চতুর্থ ও ষষ্ঠতলায় তিনটি নকল ক্যাবলের কারখানায় অভিযান চালায়। অভিযানে কারখানাগুলোতে বিপুল পরিমাণ নকল বিআরবি ক্যাবল ও বিজলী ক্যাবল পাওয়া যায়। এ সময় নকল তার সংবলিত ববিন, বিআরবি নকল তার তৈরির ডাইস এবং নকল তার তৈরির মেশিন জব্দ করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিরা এ ধরনের বৈদ্যুতিক তার তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি। এরা প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের নকল বৈদ্যুতিক তার তৈরি করতেন। অভিযানে তিনটি কারখানা থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকার নকল তার জব্দ করা হয়েছে। তারা কার কার কাছে নকল ক্যাবল সরবরাহ করে এসেছে তাদের একটি তালিকা পাওয়া গেছে। ক্রেতার তালিকা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে কয়েকটি ঘটনা ছাড়াও দেশে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে অগ্নিকান্ড বেড়েছে। সিআইডির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের টিম এসব অগ্নিকান্ডের ছায়াতদন্ত শুরু করে। তদন্তে দেখা যায়, নকল ক্যাবল এবং বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা পণ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে অগ্নিকান্ডের অন্যতম কারণ। নকল ক্যাবল ব্যবহারের ফলে শিল্প-কলকারখানাসহ আবাসিক ভবনে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অভিযানে আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের পর বংশাল থানায় একটি মামলা করেছে সিআইডি। মামলায় ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। আটক ১০ জনকে গ্রেফতার ও অন্যদের পলাতক দেখানো হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অভিযানে আটকরা হলেন- সোহেল রানা, আবুল কালাম, রাজীব মোল্লা, জসিম উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম সুমন, নাজির হোসেন, শাহিন শেখ, লিখন, আরিফ ও হাবিবুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিআইডির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান ও জিসানুল হক।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৯ হাজার ৭৫২টি অগ্নিকান্ড ঘটেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ গোলযোগে আগুন লাগার ঘটনা ৩৭ হাজার ৪০৪টি। আর ১৯ হাজার ১২৪টি আগুন লাগে বিভিন্ন ধরনের চুলা থেকে। হিসাব বলছে, এ দুই ধরনের আগুন মোট দুর্ঘটনার ৫৬ শতাংশ। তবে আগুনে আর্থিক ক্ষতির হিসাবটা আরও ভয়াবহ। গত পাঁচ বছরে আগুনে আর্থিক ক্ষতি ১ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ গোলযোগে ক্ষতি ৮৩৪ কোটি, যা মোট ক্ষতির ৫৭ শতাংশ। আর চুলার আগুনে আর্থিক ক্ষতি ১৬৬ কোটি বা ১১ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর