সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিতর্কের জন্ম দিয়ে আলোচনায় রাজশাহীর চার পৌর মেয়র

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

কথা ও কাজে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে আলোচনায় রাজশাহী অঞ্চলের চার পৌর মেয়র। কেউ ক্ষমতার প্রভাব দেখাতে গিয়ে সমালোচিত হয়েছেন, আবার কেউ অনিয়ম, নৈতিক স্খলন ও বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে বিতর্কে পড়েছেন। রাজশাহীর চার মেয়রকে নিয়ে এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। রাজশাহীর পৌর মেয়রদের মধ্যে সর্বশেষ বিতর্কে জড়িয়েছেন পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় এরই মধ্যে দলীয় পদ হারিয়েছেন। একই সঙ্গে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। অনাস্থা জানিয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন ১২ কাউন্সিলর। শুধু আব্বাস নন, এর আগেও নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছেন বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলী, ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল মালেক ও পুঠিয়া পৌরসভার মেয়র আল মামুন খান। বিতর্কে পড়ে নিজের মেয়র পদটিও ধরে রাখতে পারেননি বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা থেকে নির্বাচিত মুক্তার আলী। প্রথমবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকে মেয়র হয়েছিলেন তিনি। এবার দলীয় মনোনয়ন না পেলেও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়ে মেয়র হন। এই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় তিনি গত জুলাইয়ে এলাকার এক শিক্ষককে মারধর করেন দলবল নিয়ে গিয়ে। একারণে ওই শিক্ষক মামলা করলে মুক্তারের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। মেলে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, মাদক এবং কোটি টাকা। গ্রেফতার করা হয় স্ত্রী ও ভাতিজাকে। পরে গ্রেফতার হন মেয়র ও তার ছেলে।

এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মুক্তার আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তিনি এখন কারাগারে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযান চালিয়েছে পৌরসভায়।

বিয়ের ‘খায়েশ’ মিটছেই না জেলার বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আবদুল মালেকের। ৪০ বছরের ঘর-সংসার বাদ দিয়ে পরপর দুই অল্প বয়সী তরুণীকে বিয়ে করে সমালোচিত হন আওয়ামী লীগের এই নেতা। এ বছরের এপ্রিলে নূপুর আক্তার নামের এক তরুণীকে তৃতীয় বিয়ে করেন ৫৫ বছর বয়সী মালেক। তালাক দেন প্রথম স্ত্রী কোহিনুর বেগমকে। প্রথম স্ত্রী ও ছেলেকে বাড়িছাড়া করতে মেয়র মামলা করেন তাদের বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হয়ে ছেলে কারাগারে ছিলেন। এর আগে গত বছরের মে মাসে এক নাবালিকাকে বিয়ে করে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তবে মেয়রের দাবি, ‘পরিস্থিতি’ তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করছে।

বিয়ের কথা বলে দুই বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে পুঠিয়া পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা আল মামুন খানের বিরুদ্ধে একজন নার্স মামলা করেন। ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মামলাটি করেন। ওই নার্স ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত। ১২ এপ্রিল ওই নারীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়। ২০১৯ সালে ওই নার্স পুঠিয়ার একটি ক্লিনিকে কাজ করতেন। সে সময় আল মামুনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর থেকে তাকে বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ করেন মামুন। সম্প্রতি তরুণী বিয়ের জন্য মামুনকে চাপ দিলে তিনি তাকে এড়িয়ে যেতে থাকেন। ১১ এপ্রিল দুপুরে বিয়ের দাবিতে তিনি মামুনের পুঠিয়া সদরের চেম্বারে উপস্থিত হন। এ সময় নার্সকে নির্যাতন করে বের করে দেওয়া হয় বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। রাতে তিনি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, জনপ্রতিনিধিদের হতে হয় অনেক বেশি দায়িত্বশীল। বর্তমানে তা দেখা যাচ্ছে না। আগে তো মানুষ জনপ্রতিনিধি হতো জনগণের হৃদয়ে স্থান নিতে। এখন সেই চর্চা নেই। কারণ এখন মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যোগ্যতার চেয়ে অন্য যোগ্যতা দেখা হয়। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন মেয়রের কার্যকলাপে আমরা বিব্রত।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর