বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সেই খেলা নিয়ে সংসদে উত্তাপ

শেয়ার হস্তান্তরের বিধান রেখে পাস পেট্রোবাংলা বিল

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাঠ থেকে নারায়ণগঞ্জ, কলকাতা ও ঢাকা হয়ে ‘খেলা’ এখন সংসদে। গতকাল অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘খেলা’ নিয়ে এলেন জাতীয় সংসদে।

গতকাল সংসদে বৈঠকের শেষ পর্যায়ে হারুনুর রশীদকে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর দেন স্পিকার। এ সময় তিনি ‘জনঅসন্তোষ’ ও ‘জনদুর্ভোগে’র কথা উল্লেখ করেন। সরকারের সমালোচনা করেন। সরকারের ‘খেলা’কে জনদুর্ভোগের সঙ্গে তুলনা করেন। এ সময় তিনি ‘খেলা’ বন্ধের দাবি করেন। জবাবে কাদের ‘খেলা’ অব্যাহত থাকবে বলে কড়া জবাব দেন। সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে হারুন বলেন, “যোগাযোগমন্ত্রী প্রায়ই বলছেন খেলা হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর খেলা হবে। আমরা এমন খেলা দেখতে চাচ্ছি না যে জনদুর্ভোগে মানুষ পড়েন। এ দেশে দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুৎ এগুলো নিয়ে কয়েক মাস যাবত মানুষ সভা-সমাবেশ করছে। আপনি কেন পরিবহন বন্ধ করছেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে বলেন, ‘কী কারণে পরিবহন বন্ধ হয়েছে বলতে পারব না।’ দেশ চালাচ্ছেন কেন আপনারা? একটা নয়, দুটো নয়, একের পর এক। আগামী ৫ তারিখে বরিশালে সমাবেশ হবে। লঞ্চ বন্ধ, বাস বন্ধ, থ্রি-হুইলার বন্ধ। ট্রেন বন্ধ। সবকিছু বন্ধ। এর ফলশ্রুতিতে যে জনঅসন্তোষ তৈরি হচ্ছে, তা কল্পনা করা যায় না। যোগাযোগমন্ত্রী আছেন, দয়া করে দুর্ভোগ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেন। জনদুর্ভোগ আর বাড়াবেন না। জনদুর্ভোগে যে জনঅসন্তোষ তৈরি হচ্ছে, তাতে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে। ”

পরে সংসদে ফ্লোর নিয়ে হারুনের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিরোধী দল হলেই বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করা কালচারে পরিণত হয়েছে। গাজীপুরের যে প্রকল্প পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, মেট্রোরেল সামনে হচ্ছে। এলিভেটেড এগিয়ে গেছে। কর্ণফুলী টানেল রেডি। কী চান আর? একটা সরকার এতগুলো প্রজেক্ট। যেদিকে তাকান ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ওভারপাস। আপনাদের সময় কী ছিল? জিরো। ওই জিরোর বিরুদ্ধে খেলা হবে। ওই জিরো যে করছেন, ভোগান্তিতে রাখছেন লাখো কোটি মানুষকে; সেটিই খেলা হবে।’

এদিকে দেশ-বিদেশের যে কোনো উৎস, ব্যক্তি, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়াসহ স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তি ও শেয়ার হস্তান্তরের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ গ্যাস, তেল ও খনিজসম্পদ করপোরেশন’ আইন-২০২২ বিল পাস হয়েছে জাতীয় সংসদে। বিলে জনস্বার্থে ও বাণিজ্যিক বিবেচনায় করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এর পরিচালনা পরিষদকে।

এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। সংসদে স্থিরকৃত আকারে বিলটি পাস হয়। এর আগে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও বিএনপির রুমিন ফারহানার সংশোধনী গ্রহণ করা হয়। পরে বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গত ৫ জুন বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়।

১৯৮৯ এর ভিত্তি আইন ‘বাংলাদেশে অয়েল, গ্যাস অ্যান্ড মিনারেল করপোরেশন অর্ডিন্যান্স ১৯৮৫’ রহিত করে সংশোধিত ও পরিমার্জিত আকারে বাংলা ভাষায় আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

বিলে রহিত অধ্যাদেশ বলে ‘পেট্রোবাংলা’ সব কার্যাবলিকে বৈধতা ও সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিলে পরিচালনা পরিষদ জনস্বার্থে বাণিজ্যিক বিবেচনায় এর দায়িত্ব পালন করবে এবং সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করবে। করপোরেশনের চেয়ারম্যান, পরিচালকসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কার্যসম্পাদনকালে ‘জনসেবক’ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন হবে ২০০ কোটি টাকা। সরকার গেজেট দ্বারা মূলধনের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারবে। করপোরেশন সরকারের ভর্তুকি, সরকারের অনুমোদনক্রমে দেশি-বিদেশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো উৎস বা ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ বা অনুদান নিয়ে মূলধন বাড়াতে পারবে। বিলে শেয়ার হস্তান্তরের বিধান রাখা হয়েছে।

করপোরেশনের সব শেয়ার সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে পারবে। এ ছাড়া অধীনস্থ কোম্পানি থেকে লেভি, ফি, চার্জ, আদায় করতে পারবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৯৮৫ সালে অধ্যাদেশের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশে অয়েল, গ্যাস অ্যান্ড মিনারেল করপোরেশন (বিওজিসি) ও বাংলাদেশ মিনারেল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনকে (বিএমইডিসি) একীভূত করে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন’ (বিওজিএমসি) গঠন করা হয়। পরে ১৯৮৯ সালে আংশিক সংশোধনের মাধ্যমে এই করপোরেশনকে ‘পেট্রোবাংলা’ নামকরণ করা হয়। ওই অধ্যাদেশের মাধ্যমে তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়নের উদ্দেশ্য গঠন করা কোম্পানিগুলোর শেয়ার ধারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের মন্ত্রিসভা বৈঠকে আদালতের নির্দেশে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বরের মধ্যে জারি করা বিলুপ্ত সব অধ্যাদেশের মধ্যে যেসব আবশ্যিক বিবেচিত হবে সেগুলো সংশোধন ও পরিমার্জন করে বাংলা ভাষায় প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর