রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র ৯ দিন বাকি রয়েছে। এ সময় তৃণমূলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ৩৩ ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীরা নিজের পছন্দের কাউন্সিল প্রার্থীকে জেতাতে কাজ করছেন। মেয়র প্রার্থী নিয়ে তাদের খুব একটা চিন্তা নেই। অপরদিকে জাপা কাউন্সিলর নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে মেয়র প্রার্থীকে কীভাবে জেতানো যায় এই নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে।
এদিকে প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে। আচরণবিধি কেউই মানছেন না। শুক্রবার সন্ধ্যার পরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার পথসভার মঞ্চ ভেঙে দিয়েছে নির্বাচন অফিস। আচরণবিধি অমান্য করে তিনি পথসভার নামে জনসভার আয়োজন করেন। এ কারণে আচরণবিধি প্রতিপালনে তাকে মঞ্চ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরে প্রার্থীর লোকজনই সভামঞ্চ খুলে ফেলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। অনেক ওয়ার্ডেই জাপা সমর্থিত কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী নেই। সব মিলিয়ে দেখা গেছে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭৯ জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শতাধিক প্রার্থী রয়েছেন। রংপুর জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও তিন ভাগের একভাগ ওয়ার্ডে জাপা সমর্থিত কোনো কাউন্সিলর প্রার্থী না থাকায় তারা মনোযোগ দিয়েছে লাঙ্গল মার্কার মেয়র প্রার্থীকে বিজয়ী করার। কীভাবে মেয়র প্রার্থীকে বের করে আনা যায়- এ নিয়ে তারা ব্যস্ত। অপরদিকে প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের ২ জন থেকে ৫ জন পর্যন্ত প্রার্থী রয়েছে। তারা মাঠ পর্যায়ে নিজেদের নিয়ে মাতামাতি করছেন। কীভাবে নিজে বিজয়ী হওয়া যায় এ চিন্তায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন।আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিল প্রার্থীরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মেয়র পদে প্রচারণায় ভাটা পড়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম ল বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যস্ততায় নৌকা প্রতীকে কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ প্রতিটি ওয়ার্ডে নেতা-কর্মীরা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করছেন।
পাড়া মহল্লায় ক্লাব সংগঠনগুলো সরগরম, বেড়েছে মইয়ের কদর
রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনকে উপলক্ষ করে ৩৩টি ওয়ার্ডের পাড়া মহল্লার ক্লাবগুলো সরগরম হয়ে উঠছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ক্লাবগুলোতে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এই সুযোগে নগরীতে নতুন ক্লাবও গড়ে উঠছে। ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৭৯ জনসহ মোট ২৫৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিজয়ী হওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে ভোটারদের কাছে টানছেন তারা। প্রার্থীরা নানাভাবে বাগে নেওয়ার চেষ্টা করছেন ক্লাবের সদস্যদের। তারা বিভিন্ন সময় ছুটে যাচ্ছেন ক্লাবগুলোতে, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। আগে দীর্ঘ সময় যেসব ক্লাব বন্ধ থাকত সেগুলোও এখন সার্বক্ষণিক খোলা থাকছে। তবে প্রার্থীদের কাছে সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদকদেরই কদর বেশি। এদিকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন এলেই কয়েকটি জিনিসের চাহিদা বেড়ে যায়। তেমনি রসিক নির্বাচনেও বেড়ে গেছে মইয়ের চাহিদা। প্রার্থীর মার্কাসহ পোস্টার আছে, সুতলি আছে, আটা আছে, লোকজন আছে অথচ মই নেই। যদি এমন হয় তাহলে বর্তমান নির্বাচনী বিধি বজায় রেখে পোস্টার লাগানো যাবে না। আর পোস্টার না লাগাতে পারলে প্রার্থীর প্রচারণা ঘরবন্দি হয়ে থাকবে। যে কারণে মই গুরুত্বপূর্ণ। এই মই ছাড়া মাথার ওপরে কোনোভাবেই পোস্টার লাগানো সম্ভব নয়। যে কারণে রসিক নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৪ শতাধিক প্রার্থীর জন্য মই অপরিহার্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু নগরীর মানুষের কাছে বিপুলসংখ্যক লম্বা মই থাকা অকল্পনীয়। তাই প্রার্থীরা নিজের তাগিদেই বাঁশ কিনে মই বানিয়ে নিচ্ছেন। বিভিন্ন সূত্রের দাবি, পোস্টার লাগানোর জন্য প্রায় ১ হাজার নতুন মই তৈরি করা হয়েছে। তবে এই মই নির্বাচন-পরবর্তী সময়েও মানুষের বিভিন্ন কাজে লাগবে বলে মজবুত করে তৈরি করা হয়েছে।