শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কীর্তনখোলা দখলে প্রতিযোগিতা

রাহাত খান, বরিশাল

কীর্তনখোলা দখলে প্রতিযোগিতা

বরিশালের হৃৎপি- হিসেবে পরিচিত কীর্তনখোলা নদী দখল-দূষণে অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে। এ নদীর পশ্চিম তীরের পোর্ট রোড থেকে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত ৫ হাজার ৩২০ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা করেছে সরকারের তিনটি সংস্থা। নদী দখলদাররা বিশিষ্ট ব্যক্তি, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে সিএস-আরএস ম্যাপ অনুযায়ী পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে না পারলে আগামীতে কীর্তনখোলা মরা নদীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার লামছরি নিমাই হালদারের বাড়ি এলাকা থেকে কীর্তনখোলা নদীর দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার। যা শেষ হয়েছে নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালীজিরা নদীর সংযোগস্থলে। পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো নদীর তীর সংরক্ষণ ও গতিপথ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে। আর নদী দখল-দূষণ রোধের দায়িত্ব নদীরক্ষা কমিশন, জেলা প্রশাসন এবং বিআইডব্লিউটিএর।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন) মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, নদীর অবৈধ দখলদারদের একটি তালিকা অনেক আগে হয়েছিল। তবে করোনার কারণে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া থমকে যায়। জেলা প্রশাসনে নদীরক্ষা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দখলদারদের তালিকা আবার হালনাগাদ করা হবে। তারপর শুরু হবে অবৈধ দখল উচ্ছেদ। তার দাবি এ ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএর কোনো গাফিলতি নেই।

কীর্তনখোলার দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার হলেও বেলতলা ফেরিঘাট থেকে কালীজিরা নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার পড়েছে নগরীর মধ্যে। করোনাকালের আগে পোর্ট রোড থেকে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার নদীর তীরে ৫ হাজার ৩২০ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা করে জেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিএ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সরেজমিন দেখা যায়, পোর্ট রোড থেকে কালীজিরা নদী পর্যন্ত কীর্তনখোলার পশ্চিম তীরে পাইকারি মাছ বাজার, বহুতল ভবন, পাকা মসজিদ, বহু দোকান, ডকইয়ার্ড, ইট-বালু-কংক্রিটের ব্যবসা, গোডাউনসহ নানা স্থাপনা রয়েছে। অস্থায়ী টং ঘর রয়েছে হাজার হাজার। সম্প্রতি রসুলপুর চরে অবৈধ বসতি আরও বেড়েছে। কীর্তনখোলা নদীর মধ্যে খুঁটি-সাইনবোর্ড দিয়ে দিন দিন আরও আগ্রাসী হচ্ছে অবৈধ দখলদাররা। নদীর পশ্চিম পাশে অবৈধ দখলের কারণে কৃত্রিম চর সৃষ্টি হওয়ায় পূর্ব তীরে চরকাউয়া এলাকায় নদীভাঙন ব্যাপক হয়েছে। কয়েক বছর আগে নগরীর ত্রিশ গোডাউন এলাকায় শহররক্ষা বাঁধের নামে নদীর মধ্যে অন্তত ৩০০ ফুট বাঁধ দিয়েছেন ঠিকাদার।

ধান গবেষণা রোড ও খেয়াঘাট এলাকায় নদীতীর রক্ষায় ফেলানো ব্লকের অধিকাংশ চুরি হয়ে গেছে। সেখানে বাঁশ-খুটির পাইলিং দিয়ে নদীর অনেকাংশ দখল করা হয়েছে। পাশেই বড় বড় গোডাউন নির্মাণ করা হয়েছে। দপদপিয়া সেতু এলাকায় কীর্তনখোলার তীর দখল করে গড়ে উঠেছে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কর্ণকাঠি এলাকায় মেরিন একাডেমির পাশ ঘিরে কীর্তনখোলার তীর দখল করে ইট-বালুর ব্যবসা চালু করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দপদপিয়া পুরান ফেরিঘাট এলাকায় ব্লক ফেলে কীর্তনখোলার অন্তত ৩০০ ফুট দখল করেছে একটি ওষুধ কোম্পানি। এতে সৃষ্ট বাঁকের কারণে নদীর দক্ষিণ তীরে নলছিটি প্রান্তে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন।

বরিশাল নদী-খাল রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, দখল-দূষণকারীরা নদী হত্যাকারী এবং নগরবাসীর শত্রু। নদীর পূর্ব তীরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শহর সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া চলছে। এখন এক তীরে দখল হচ্ছে। এরপর দুই তীরে দখল হবে। সিএস-আরএস ম্যাপ অনুযায়ী কীর্তনখোলাকে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে হবে।  অন্যথায় কীর্তনখোলা মরা নদীতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক গৌতম বাড়ৈ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নদীর সীমানা এবং অবৈধ দখলদারদের তালিকা না পেলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো যায় না। জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট প্রস্তুত আছে। বিআইডব্লিউটিএ অবৈধ দখলদারদের তালিকা দিলে যে কোনো সময় উচ্ছেদ অভিযান চালাবে জেলা প্রশাসন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর