একদল শিক্ষার্থী বাদ্যের তালে গান গাইছে, আর পাশে বসে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন একজন শিক্ষক। বিদ্যালয়ের গেটে প্রবেশ করতেই কানে ভেসে আসছে ‘এমন যদি হতো আমি পাখির মতো, উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ’। বিদ্যালয়ে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেওয়া এই শিক্ষকের নাম আবদুল মাজেদ।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার সেনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল মাজেদ। সংগীতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও আগ্রহের বশে বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যেও তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে নাচ, অভিনয়সহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সহশিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে মাজেদের এ ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ বদলে দিয়েছে বিদ্যালয়টিকে। জানা যায়, ২০০৬ সালে বিদ্যালয়ে যোগ দেন মাজেদ। তখন তিনি গণিত শেখাতেন। একদিন মনে হলো শেখার মধ্যে আনন্দ নেই। শিক্ষাকে আনন্দময় করার পথ খুঁজতে লাগলেন তিনি। ২০১৫ সালে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখা শুরু করলেন। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষককে প্রস্তাব দেন, ক্লাসের বিরতিতে শিক্ষার্থীদের সংগীত ও বাদ্যযন্ত্র শেখাতে চান। সায় পেয়ে প্রথমে নিজের টাকায় একটি বাদ্যযন্ত্র কেনেন। শিক্ষক আবদুল মাজেদ বলেন, যেদিন সংগীতের ক্লাস চলে, সেদিন প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে।
এতে তিনি উৎসাহ পান, যা নজরে আসে প্রধান শিক্ষকেরও। তিনি বিদ্যালয়ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন। যা দিয়ে কাহন, হাতবয়া, জিপসি ও গিটারের মতো বাদ্যযন্ত্র কেনা হয়। গান শেখানোর পাশাপাশি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে অন্য সহশিক্ষা কার্যক্রমও। একসময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি আশানুরূপ ছিল না। এখন উপস্থিতি শতভাগ বললেই চলে। ঝরে পড়ার হারও শূন্যের ঘরে। নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কারও নিয়ে আসছে শতবর্ষী এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।