পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়ার রামনাবাদ পাড়ের ১৪ গ্রামের প্রায় তিন হাজার পরিবারের আবারও কপাল পুড়েছে। এ বছর তাদের আমন আবাদ ভেস্তে যাচ্ছে। রামনাবাদ নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের তান্ডবে পশুরবুনিয়া থেকে ব্যুরো জালিয়া পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রায় চার কিলোমিটার লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত বাঁধ এখন জমির সঙ্গে মিশে গেছে। স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে জনপদ এখন থৈ থৈ করছে।
গত বছর রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় আমনের বাম্পার ফলন পেয়েছিল। কিন্তু ফের এ বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৭/৫ পোল্ডারের দীর্ঘ বেড়িবাঁধটি এবারের জলোচ্ছাসে ছিন্নভিন্ন হয়ে ভেসে গেছে। এখন আবাদি জমি আর বাঁধের লেভেল এক হয়ে গেছে। আমন আবাদ তো দুরের কথা, মানুষ বসবাস করতে পারছে না। এদিকে পায়রা বন্দরের জন্য অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলছে ওই এলাকায় ফলে কৃষকসহ সাধারণ মানুষ নিতান্ত ঠেকায় পড়ে দুই-এক শতক জমি বিক্রি করবে তাও পারছেন না। কারন ওই মৌজার জমি বেচা-কেনায় রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
জানা গেছে, উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের পশুরবুনিয়া, চারিপাড়া, চৌধুরীপাড়া, গাজীরখাল, মুন্সিপাড়া, ব্যুরোজালিয়াসহ অন্তত আটটি পয়েন্টে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বাঁধের অস্তিত্ব পর্যন্ত বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধঘেষা মানুষ বাড়িঘর স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চারিপাড়া, চৌধুরীপাড়া, নেওয়াপাড়া, পশুরবুনিয়া, ছোট পাঁচ নং, বড় পাঁচ নং, ধঞ্জুপাড়া, ১১নং হাওলা, বানাতিপাড়া ও মুন্সিপাড়ার মানুষের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি। আমন মৌসুম শেষ হয়ে যাচ্ছে অথচ এখন পর্যন্ত কৃষক পরিবারের হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। এছাড়া কোথাও নেই সবুজের ছোঁয়া। মানুষের দুরবস্থার যেন শেষ নেই। রান্না-বান্না পর্যন্ত করতে পারছে না। ব্যবহারের পানির সঙ্কট রয়েছে তীব্র। খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয় এক/দেড় কিঃমিঃ দুর থেকে। বিধ্বস্ত হয়ে গেছে অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা।
চারিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য মজিবর রহমান বলেন, ‘সব নষ্ট অইয়া গ্যাছে। আমনের আশা নাই। সাগরে সব ভাসাইয়া রাখছে।’ এসব এলাকার মানুষ পড়েছেন বহুমুখী সমস্যার মধ্যে।
রমিজ ফকির, কুদ্দুস ফকির, আরিফুর রহমান, মহসিন ফকির, হাসান মৃধা, আবু নয়ন মৃধাসহ অর্ধশত কৃষক জানালেন, তারা উত্তরা ব্যাংক খেপুপাড়া শাখা থেকে কৃষি লোন নিয়েছিলেন। জমিজমা আবাদ করতে না পারা, রবিশস্য আবাদ করতে পারেন নি। ফলে লোনের কিস্তি দিতে পারেন নি। এমনকি জমি বিক্রি করে ব্যাংকের লোন পরিশোধ করবেন তাও পারছেন না। কারন জমি বিক্রিতে রয়েছে সরকারের নিষেধাজ্ঞা। অপরদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা আদায়ে মামলার জন্য একাধিক নোটিশ করে যাচ্ছে। এভাবে হাজারো পরিবারে এখন বহুমুখী দুর্ভোগ নেমে এসেছে। মোটকথা লালুয়ার গোটা ইউনিয়নে এক ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। কৃষকসহ সব শ্রেণির মানুষ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়ে জীবন-জীবিকা বিপন্নের শঙ্কায় পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মসিউর রহমান জানান, বিধ্বস্ত বাঁধ জরুরি মেরামত না করলে রামনাবাদপাড়ের বহু কৃষি জমি এবছর অনাবাদি থাকার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারন আমন আবাদের মৌসুম একেবারে শেষ পর্যায়ে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম সাদিকুর রহমান সাংকাদিকদের জানান, তিনি নিজে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মানুষের দূর্ভোগের প্রকৃত অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছেন। অবহিত করেছেন জেলা প্রশাসকসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে। জানিয়েছেন পানিউন্নয়ন বোর্ডকে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আবুল খায়ের জানান, এই মুহুর্তে রামনাবাদ পাড়ের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ জরুরি মেরামত করতে অন্তত দুই কোটি টাকার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এলাকার সার্বিক অবস্থা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানালেন।
বিডি-প্রতিদিন/তাফসীর