পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী প্রাণের উৎসব সাংগ্রাই-কে ঘিরে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। পাহাড়ি পল্লীগুলোতে এখন সাজ-সাজ রব। পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরের বরণকে সামনে রেখে প্রতান্ত পাহাড়ি গ্রামগুলোতে চলছে নানা প্রস্তুতি। হাট-বাজারগুলোতে পড়েছে কেনা-কাটার ধুম। এদিকে সাংগ্রাই উৎসবকে সামনে রেখে সমগ্র বান্দরবানের হোটেল-মোটেলে আগাম বুকিং হয়ে গেছে। উৎসবে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক বার্তায় সুখ, সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
নতুন আশা আজ নব-প্রভাতে, শিশু-নারীসহ সকলে থাকুক শান্তিতে, বন্ধ হোক যত সহিংসতা, মৈত্রীময় স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় আসুক শুভ্রতা, এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে লামাসহ বান্দরবানের সাতটি উপজেলার লোকজন মেতে উঠেছে তাদের অন্যতম সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই বা বৈ-সা-বি উৎসবে। ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এ উৎসব। নতুন বছরকে বরণ এবং পুরাতন বছরকে বিদায় জানাতে মূলত পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র- ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাসমূহ নিজস্ব সামাজিক ঐতিহ্য নিয়ে সমন্বিতভাবে সাংগ্রাই উৎসব পালন করে থাকে।
এই উৎসবকে মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই, বম সম্প্রদায় চাংক্রান, খেয়াং সম্প্রদায় সাংগ্রান, খুমী সম্প্রদায় সাংগ্রাই, চাকমা সম্প্রদায় বিঝু ও তংচঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিষু এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায় বৈসু বলে। এই সাত সম্প্রদায়ের এই উৎসবকে সমষ্টিগতভাবে বৈসাবি বলা হয়।
বান্দরবানে মারমাদের সাংগ্রাই মূল আকর্ষণ জলকেলি বা মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসব। সকল পাপাচার ও গ্লানি ধুয়ে মুছে নিতে তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর উৎসবে মেতে উঠেন এসময়। এই উৎসব শুধু পাহাড়িরা নয় বাঙালিরাও নানা ভাবে পালন করে থাকেন। সাংগ্রাই উৎসবকে দেখার জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বহু দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে।
এদিকে লামায় প্রধান পাহাড়ি জাতিস্বত্বা মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সমবেত প্রার্থনা, জলকেলি (পানি খেলা), পিঠা তৈরি, বৌদ্ধ মূর্তি স্নান, হাজারো প্রদীপ প্রজ্বলন, বয়স্ক পূজা এবং পাহাড়ি নিজস্ব ঐতিহ্যবাসী নৃত্য-গান নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই উপলক্ষে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আগামী ১৩ এপ্রিল বিশাল শোভাযাত্রা ও ১৫ এপ্রিল বিকালে লামা কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার মাঠে ও সাবেক বিলছড়ি বৌদ্ধ বিহারে পানি বর্ষণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসমূহ পালন করা হবে।
বৈসাবি উৎসবকে সামনে রেখে লামা উপজেলার হাট-বাজারে কেনা-কাটা বেড়েছে। বিপনী বিতানগুলোতে এখন পাহাড়িদের পাশাপাশি বাঙ্গালি তরুণীদেরও উপচে পড়া ভিড়। লামায় এবার উৎসবমুখর পরিবেশে সাংগ্রাই পালিত হবে। লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু জানিয়েছেন, বাংলা বর্ষবরণ ও সাংগ্রাই উৎযাপনে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পহেলা বৈশাখের সকল উৎসব পালনে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সাল থেকে বান্দরবানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত তিন সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে 'বৈসাবি' নামে এ উৎসব পালন করে আসছে। যা সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের কাছে 'বৈসাবি' শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি-বাঙ্গালির মধ্যে শান্তি-সম্প্রতি ও ঐক্য আরও সুদৃঢ় হোক এই প্রত্যাশা সকলের।
বিডি প্রতিদিন/১১ এপ্রিল, ২০১৭/ফারজানা