ময়মনসিংহের ভালুকায় সনাতন ধর্মীয়দের চড়ক পূজায় মানুষের ঢল নেমেছে। শুক্রবার বিকালে উপজেলা বায়াবহ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এই মেলা ও গা শিউরে উঠা এই চড়ক পূজার আয়োজন করে স্থানীয়রা।
চড়ক পূজার শুরুতে শিবপাঁচালী পাঠক মন্ত্রপড়া শুরু করলে সন্ন্যাসী শিবধ্বনি দিতে দিতে গোছল করতে যান। গোছল শেষ করে মাটির কলসি ভরে পানি আনেন তারা। সেখানেই তাদের বাণবিদ্ধ করা হয়। পরে সন্ন্যাসী চড়ক গাছের গোড়ায় পানি ঢেলে প্রণাম করে চলে যান ফাঁকা জায়গায়। মানুষের মাথায় হাত বুলিয়ে আর্শিবাদ করেন এবং মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলেন সন্ন্যাসী ।
পরে নিজের শরীর বড়শিতে বিঁধে চড়কগাছে ঝুলে শূণ্যে ঘুরতে থাকেন। আবার সন্ন্যাসীর আর্শীবাদ লাভের আশায় শিশু সন্তানদের শূন্যে তুলে দেন অভিভাবকরা। সন্ন্যাসী ঘুরতে ঘুরতে আবার শিশুদের মাথায় হাত দিয়ে আর্শীবাদও করেন। এ অব্স্থায় একহাতে লোহার তৈরি ত্রিশুল ঘুরাতে থাকেন আর দর্শনার্থীদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ান ঝুলন্ত সন্ন্যাসী।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্বাবদ্যালয়ের ছাত্রী তুলি রায় জানান, "চড়ক পূজা কবে কিভাবে শুরু হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস আমরা জানি না। তবে বড়দের মুখে শুনেছি ১৫০০ খ্রীস্টাব্দের দিকে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পূজা প্রচলন করেন। রাজ পরিবারের লোকজন এই পূজা আরম্ভ করলেও চড়কপূজা কখনও রাজ-রাজড়াদের পূজা ছিল না। এটি ছিল হিন্দু সমাজের লোকসংস্কৃতি।"
উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি মলয় কুমার মানিক নন্দী জানান, "আমাদের উপজেলায় মোট ৮টি স্থানে চড়ক পূজা উদযাপন হয়। আমাদের বিশ্বাস জগতে যারা শিব ঠাকুরের সন্তুষ্টি লাভের জন্য স্বেচ্ছায় এত কঠিন আরাধনার পথ বেছে নিয়েছেন বিনিময়ে পরলোকে শিবঠাকুর তাদের স্বর্গে যাওয়ার বর দেবেন।"
বিডি প্রতিদিন/ ১৫ এপ্রিল, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত