চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে চলছে এইচএসসি পরীক্ষা। আর সেখানে জারি রয়েছে ১৪৪ ধারা। কিন্তু তা উপেক্ষা করে পার্শ্ববর্তী হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এই অবস্থায় কিভাবে মেলার অনুমোদন দেয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্টসহ হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটার আশংকা করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকরা। এদিকে অনুমোদন না থাকলেও র্যাফেল ড্রয়ের নামে ব্যাপক জুয়া খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে মেলা কমিটি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের অভিযোগ জেলা প্রশাসন আর রাজনৈতিক চাপেই তারা বাধ্য হয়েছেন মেলার অনাপত্তিপত্র দিতে।
এদিকে জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারকে উপেক্ষা করে র্যাফেল ড্র’র নামে ইতিমধ্যে বিক্রি করা হয়েছে কোটি টাকার টিকিট। অভিযোগ উঠেছে বাণিজ্য মেলার নামে অবৈধ বাণিজ্যে নেমেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল। জানা গেছে, চাঁপাইনবাগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রষ্টির সহ-সভাপতি আব্দুল হান্নান খান হানুর আবেদনের প্রেক্ষিতে এই মেলার অনুমোদন দেয় জেলা প্রশাসন। ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে মেলা চলবে ১২ মে পর্যন্ত। যদিও আরও কয়েকদিন সময় লাগবে মেলা চালু হতে।
পরীক্ষার সময় মেলার অনুমতি প্রসঙ্গে জেলা জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশে জেলা প্রশাসন কিভাবে মাসব্যাপী মেলার অনুমোদন দিল-তা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, মেলায় উচ্চস্বরে মাইক ব্যবহারের কারণে পরীক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। এছাড়া মাসব্যাপী এই মেলার অনুমোদনে ক্ষুব্ধ হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও।
স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও সমাজকর্মী কমলা বেগম জানান, এসএসসি পরীক্ষার কারণে একমাস বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি ক্লাস শুরু হয়েছে। এখন এই স্কুল মাঠে আবার মাসব্যাপী মেলা বসায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া লাটে উঠবে। আবার ২ মাস পরেই শুরু হবে স্কুলগুলোর অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা।
এবিষয়ে হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে এই মেলার ব্যাপারে তাদের আপত্তি ছিলো। কিন্তু প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চাপে তারা অনাপত্তিপত্র দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর আশংকা, অনুমতি না দিলে পরবর্তীতে তাদের রোষানলে পড়তে হতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা চেম্বার অব কমার্স অনুমতি নিলেও মেলা পরিচালনায় তাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। সবকিছু তদারকি করছেন ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা ও প্রভাবশালী কয়েকজন ঠিকাদার। তারা বাণিজ্য মেলায় র্যাফেল ড্রয়ের নামে জুয়ার আসর বসানোর জন্য সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যেই র্যাফেল ড্র পরিচালনার দায়িত্ব এক কোটি টাকায় একটি কোম্পানীকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। র্যাফেল ড্রয়ের বিষয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে পোষ্টারিং করে প্রচারণাও চালোনো হচ্ছে। এব্যাপারে মেলার আয়োজক চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল হান্নান হানুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, চেম্বারের নামে মেলা হলেও কারা মেলার কাজকর্ম করছে তা তিনি কিছুই জানেন না।
বিষয়টি নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মেলায় র্যাফেল ড্রয়ের নামে কোন প্রকার জুয়া পরিচালনা করতে দেয়া হবেনা। এমন কর্মকান্ড হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। চাঁপাইনবাবঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হাসান জানান, ১৮ টি শর্তে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন বিকেল ৫টার পর মেলা শুরু হওয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও হরিমোহন স্কুলের শিক্ষার্থীদের কোন সমস্যা হবেনা। এছাড়া মেলায় র্যাফেল ড্রসহ সব ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ থাকবে। শর্ত ভেঙ্গে কোন কার্যকলাপ চললেই সঙ্গে সঙ্গে মেলার অনুমোদন বাতিল করা হবে বলে জানান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/১৫ এপ্রিল ২০১৭/হিমেল