৭০ দশকের আগ থেকে মানুষ রং তুলির মাধ্যমে প্রকৃতিসহ বিভিন্ন চিত্র মনের মাধুরি মিশিয়ে তুলে ধরতো। সেই সব রং তুলির ছবি শিল্পীরা দেশের বাইরে ও দেশে প্রদর্শনী মাধ্যমে অনেক সুনাম অর্জন করেছেন। অনেকে ওই সব ছবির জন্য বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন মানুষের মাঝে। মানুষ এইসব গুণী চিত্র শিল্পীদের কখনো ভুলবে না, ভুলাও যায় না।
কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নে কালের গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে শিল্পীর রং তুলির ছোঁয়া। যুগের সাথে রুচির পরিবর্তন হওয়ায় কাজ না থাকায় ইতোমধ্যে পেশা পরিবর্তন করেছেন এক সময়ের নামিদামী রং তুলির বাণিজ্যিক শিল্পীরা, কিন্তু প্রকৃত রং তুলির শিল্পীরা ঠিক আগের মতই রং তুলির মাধ্যমে ছবি একেই যাচ্ছেন।
বর্তমানে ডিজিটাল ক্যামেরা, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সহজলভ্য ও সুন্দর হওয়ায় নতুন প্রজন্মের আগ্রহ এখন ডিজিটালের দিকে।
তারই ধারাবাহিকতায় এখন ঠাকুরগাঁওয়ের নতুন প্রজন্মের কাছে ডিজিটাল ক্যামেরা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কেউ পাখির ছবি, কেউবা প্রকৃতির ছবি, কেউবা অসহায় মানুষের ছবিসহ বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরছেন ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে।
তেমনি একজন ডিজিটাল ফটোগ্রাফার ও তরুণ ব্যবসায়ি রেজাউর হাফিজ রাহী। ছোট বেলা থেকে কেন জানি ইকেলট্রনিক জিনিসের উপর নেশা ছিল তার। তাই প্রথমে ছবি তোলা শুরু করেছিলেন অন্যের ফোনের ক্যামেরা দিয়ে।
তার সাথে কথা বলে জানা গেছে ‘স্কুলে যখন পড়তেন, তখন ফোনও ছিল না, ক্যামেরাও ছিল না। অনেকে এনালক ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতো। তখন মনে হতো একটা ক্যামেরা ফোন থাকলে ভালো হতো। এসএসসি পরীক্ষার পর একটা ক্যামেরা ফোন পেয়েছিলেন হাতে। তা দিয়েই তার ছবি তোলা শুরু। তারপর ডিজিটাল ক্যামেরা কিনেছেন। এর মাঝে দেশে অনেক ফাটোগ্রাফারের আগমন ঘটেছে। তারা বিভিন্ন প্রকৃতি, পরিবেশ, অনুষ্ঠানের ছবি তুলে প্রদর্শনও করেছেন।
কিন্তু রাহী একটু ব্যতিক্রমি হয়ে শুধু ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ছবি তুলে সংগ্রহ করেছেন। তার মাধ্যমে এবং তার ছবি সংগ্রহ দেখে ঠাকুরগাঁওয়ের অনেক তরুণ ডিজিটাল ক্যামেরা ক্রয়করে অবসর সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ছবি তুলে সংগ্রহ করছেন। ইতোমধ্যে ঠাকুরগাঁও বার্ডস ক্লাব নামে তারা একটি সংগঠনও গড়ে তুলেছেন ।
এখন তারা তাদের পাখি ও প্রকৃতির ছবি সংগ্রহ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আগামী ১৯-২১ মে পর্যন্ত এই ক্লাবের উদ্যোগে “প্রকৃতি ও প্রাণ” শিরোনামে আলোকচিত্র প্রর্দশনীর আয়োজন করতে যাচ্ছেন। ঠাকুরগাঁওয়ে প্রথমবারের মত ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা আলোকচিত্র প্রর্দশনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে প্রতিদিন বিকাল ৩টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে।
ইতোমধ্যে ঠাকুরগাঁও বার্ডস ক্লাবের সদস্যরা ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন স্থানে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর পোষ্টার লাগিয়ে প্রচারণা করছেন। এছাড়াও তারা জোরে সোরে ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এই প্রর্দশনীর প্রচারণা চালাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও বার্ডস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আমরা ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবি প্রদর্শনীয় করবো। তাই খুব ভাল লাগছে। আলোকচিত্র প্রদর্শনীর জন্য ক্লাব থেকে নীতিমালা অনুয়াযী সবাই ছবি প্রদর্শনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করার জন্য সম্মতি জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল, এছাড়াও আরো উপস্থিত থাকবেন সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতারুজ্জামান সাবু, দিনাজুপর ফটোগ্রাফি সোসাইটি ফাউন্ডার কে.বি.দিপন। আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন ঠাকুরগাঁও বার্ডস ক্লাবের সভাপতি এমদাদ আলী।
ঠাকুরগাঁও বার্ডস ক্লাবের সভাপতি এমদাদ আলী জানান, আমরা এই প্রথম ঠাকুরগাঁওয়ে ডিজিটাল ক্যামেরায় বিভিন্ন দৃশ্য তুলে ধরার জন্য এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে যাচ্ছি। ৩ দিনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী সফল করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।