ধামরাই সুয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মটর চালক শ্রমিক লীগ ইউনিয়নের মধ্যে ইজিবাইক থেকে ১০০ টাকা চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় সাংসদ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। সুয়ারপু ইউনিয়নের পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’ গ্রুপের এ কোন্দল এবার প্রকাশ্যে চলে আসে। যেকোন সময় এই কোন্দল আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি ধামরাইয়ের সংসদ সদস্য এমএ মালেক ও পৌর মেয়রের অভ্যন্তরীণ কোন্দলনের কারণে উল্টো রথ যাত্রা উৎসব থমকে গিয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধামরাই উপজেলা এলাকার এমপি মালেক ও পৌর মেয়র কবির মোল্লার সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনৈতিক বিরোধ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলে আসছিল। পরে সেই কোন্দলের জেরে গত দেড় মাস আগে শত বছরের উল্টো রথ যাত্রায় থমকে গিয়েছিল। এসময় হিন্দু সম্প্রদায়ী লোকজন ক্ষোভে ফুসে উঠে। এক পর্যায়ে দলীয় উচ্চ পর্যায়ে নেতাকর্মীর হস্তক্ষেপে সেই উত্তাল থামানো হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতে এমপি মালেক এবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে প্রকাশ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন আগে ধামরাইয়ের সুয়ারপুর ইউনিয়নের মোটর শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন পরিবহন থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় শুরু করেন। অবৈধভাবে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় বাধাঁ দেয় ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সোরহাব। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদকে জানালে তিনি চাঁদা আদায় বন্ধ তো দূরের কথা অথচ ওই ইউপি চেয়ারম্যানের উপর ক্ষুব্দ হয়। পরে এ ঘটনায় এক পর্যায়ে মোটর চালক শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজনের উপর হামলা চালায়। এতে আহত অন্তত ৪০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পাল্টা জবাবে তারাও হামলা চালালে দু’ পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় স্থানীয় সাংসদের নির্দেশে মটর চালক শ্রমিক লীগের নেতা আবুল বাদী হয়ে ধামরাই থানায় ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে ৯১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। অন্যদিকে একই ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা সোহেল মাহমুদ বাদী হয়ে মোটর শ্রমিক লীগের নেতা আবুলকে প্রধান আসামি করে আরো ৩৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ধামরাই থানায় অপর একটি মামলা দায়ের করেন।
এবিষয়ে ধামরাই-২০ আসনের এমপি আব্দুল মালেক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউপি সদস্য তার লোকজনের উপর হামলা চালিয়েছে, এ কারনেই ছাত্রলীগ নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৯১ জনের বিরুদ্ধে ধামরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
সুয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সোহাব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একজন রাজনীতিবিদের কাছে এমন নোংরা আচরণ আশা করা যায় না। তিনি ইতোপূর্বে আমার বিরুদ্ধে অন্য লোক দিয়ে মিথ্যা বক্তৃতা করিয়েছেন। এলাকার উন্নয়নেও তিনি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। সেইখানে ধামরাই থানার পুলিশ ছিলো। তাদের সামনে সড়ক থেকে প্রতিটি গাড়ী থেকে চাঁদা আদায়ে বাধাঁ দেওয়ায় স্থানীয় সাংসদের লোকজন হামলা চালিয়ে আহত করে। আবার মিথ্যে মামলা দায়ের করেছে।
এব্যাপারে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহম্মেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একজন সাংসদ রাজনৈতিক কোন্দলনের কারণে উপজেলা সাংগঠনকি সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যানের উপর এভাবে হামলা চালিয়ে আবার নিজেই মটরচালক শ্রমিক লীগের নেতা আবুলকে দিয়ে মামলা দায়ের করেছে। ফলে দলের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এমপি উঠে পড়ে লেগেছে। তবে স্থানীয় সাংসদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানায়।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ধামরাই থানার (ওসি) রেজাউল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ধামরাই সংঘর্ষের ঘটনায় দেড় শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার