বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ বেড়েছে। কম খরচে বেশি আয়ের আশায় চাষিরা এই ফুল চাষে ঝুঁকে পড়েছে। একজনের দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছে সূর্যমুখী ফুল চাষে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বাজারে চাহিদা থাকায় কৃষকদের মাঝে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। চলতি বছর ফলন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ মেট্রিক টন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা যমুনা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে। নদী অঞ্চল বলে প্রায় সবরকমের ফলন হয়ে থাকে সারিয়াকান্দি উপজেলায়। ধান চালের পাশাপাশি চাষিরা ভিন্ন রকমের ফলনও চাষ করে যাচ্ছে। চলতি বছর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ভাল তেল পেতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। সারিয়াকান্দি কৃষি অফিসের কৃষি প্রণোদনার আওতায় এ বছর উপজেলায় সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। সমগ্র উপজেলাতেই সূর্যমুখী চাষ হলেও সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে ভেলাবাড়ী ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের বাঙালি নদীর উপর নির্মিত জোড়গাছা ব্রিজের উপর থেকে উত্তরে চোখ দিলে দেখা যায় দৃষ্টিনন্দন বেশকিছু সূর্যমুখীর ক্ষেত।
সারিয়াকান্দি উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের জোড়গাছা গ্রামের কৃষক এরশাদ আলী জানান, উপজেলা কৃষি অফিস হতে সারবীজ সংগ্রহ করে জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ফলন ভাল হয়েছে। এ বছর তিনি ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ১ বিঘা জমিতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছে ৮ হাজার টাকা। তিনি আশা করছেন তার জমি হতে তিনি প্রায় ৭ মণ সূর্যমুখী বীজ পাবেন। বর্তমানে প্রতি মণ সূর্যমুখী বীজের দাম ৪০০০ টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল উৎপাদন করা হয়। তাছাড়া এই ফুলের মাধ্যমে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যাপক মধু উৎপাদন করা সম্ভব। সেই সাথে জ্বালানির চাহিদা পূরণেও ভূমিকা রয়েছে। সূর্যমুখী বীজ রোপণের ৯০-১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাত মণ বীজ পাওয়া যাবে। সূর্যমুখী ফুলের চাষে কৃষকদের প্রযুক্তিসহ সব ধরণের সহযোগিতা দিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
বগুড়া সদর উপজেলার চাষিরা জানান, বাজারে সুর্যমুখী ফুলের বীজের চাহিদা যতটায় বাড়বে, ঠিক ততটায় কৃষকরা ফুল চাষে অঅগ্রহী হয়ে উঠবে। বাজারে এখনো সুর্যমুখি তেলের ততটা চাহিদার সৃষ্টি হয়নি। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুর্যমুখি তেলের চাহিদা বাড়লে কৃষকরাও লাভবান হবে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাফিউল আলম জিকো জানান, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষে খরচ কম। এতে সার ওষুধ কম লাগে। তেমন পরিচর্যাও করতে হয় না। তাছাড়া অন্যান্য তেল বীজ যেমন সরিষা, তিলের চেয়ে তেলও বেশি পাওয়া যায়। পুষ্টি চাহিদা পুরুণে সুর্যমূখী তেলের জন্য বিদেশ থেকে এর বীজ আমদানি করতে হয়। প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজ হতে প্রায় আধা লিটার সূর্যমুখী তেল পাওয়া যায়। এছাড়া সূর্যমুখী হতে উৎকৃষ্ট মানের খৈল পাওয়া যায়।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে সূর্যমুখী তেল এর কোন বিকল্প নেই। এ বছর কৃষি প্রণোদনার আওতায় সমগ্র উপজেলায় ৩৫০ জন চাষীর মাঝে সূর্যমুখী বীজ এবং সার দেয়া হয়েছে। সারা উপজেলায় সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ হেক্টর। যার শতভাগ অর্জিত হয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানা গেছে, জেলায় এবছর ৫০ মেট্রিক টন বীজ হিসেবে ফলন ধরা হয়েছে। বগুড়ায় দিন যাচ্ছে আগের থেকে সুর্যমুখীর চাষ বাড়ছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি ছাড়াও জেলা সদরে, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলাতেও সুর্যমুখীর চাষ হচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ