দাবদাহের এই সময়ে ঐতিহ্যের মাটির ঘরে শীতলতা। ডিজিটাল যুগেও দিনাজপুরের অনেক গ্রামে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘরের কদর কমেনি। এখনও দেখা যায় বিলুপ্তপ্রায় নজর কাড়া মাটির একতলা বা দোতলা মাটির বাড়ি। এই গরমে বিদ্যুত না থাকলেও মাটির ঘরে রয়েছে স্বস্তি বললেন বসবাসকারীরা।
মাটির বাড়িগুলো বাইরে থেকে সাদামাটা মনে হলেও ভিতরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রং তুলির আঁচড়ে অপরূপ সৌন্দর্য। বিভিন্ন ধরনের আলপনা দিয়ে করা রয়েছে সুসজ্জিত। মাটির ঘর যাদের আছে তারা প্রতিবছরই মাটির প্রলেপ দেয় কিংবা রং-বেরংয়ের নকসা-আলপনা একেঁ দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। অনেকে আবার চুনকামসহ বিভিন্ন রংও করেন। বাড়ির দেয়ালের নক্সা প্রথম দেখলে অনেকের ওয়াল পেপার বা টাইলস্ বলে ভ্রম হতে পারে। অথচ এসব নক্সা কোন পেশাদার কারিগর বা শিল্পী’র হাতের নয়, বাড়ি’র মা-বোনেদের মনের ভিতরে লুকিয়ে থাকা শৈল্পিক স্বত্ত্বা দিয়ে নিজ হাতে তা ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে এখনও দিনাজপুরের বিরামপুরের খানপুর ইউপির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সাঁওতাল অধ্যুষিত ধানজুড়ি এ গ্রামে শতাধিক বসতঘরের অধিকাংশই নক্সা আর রংয়ের আলপনায় ঐতিহ্য মাটির বাড়ি দেখা যায়। অনেক পর্যটক এদিকে এলে এই সাজানো গ্রামটি দেখতে ভিড় করেন।
এক সময় এ মাটির ঘর ঠান্ডা বলে অনেকে এটাকে গরিবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরও বলা হতো। গরমের সময় আরামদায়ক। তাই অনেক গ্রামে বিত্তশালীদেরও দোতলা মাটির ঘর ছিল। অনেক গ্রামে এখনও রয়েছে।তবে মাটির ঘর দেখা গেলেও আগের সেই ধান-চাল রাখার জন্য মাটির তৈরী গোলা ঘর ও কুঠি আর দেখা যায়না। অবশ্য দিন দিন মাটির ঘরও কমতে শুরু করেছে।
সদরের মহররমপুরের গাজী সুলতান জানায়, দিনাজপুরে সামপ্রতিক বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এসব মাটির ঘরের বেশিরভাগ হয় ভেঙ্গে গেছে, না হয় ফেটে গেছে। আবার আধুনিকতার ছোয়ার অনেকে হয়তো চেষ্ঠা করছে মাটির ঘর আর না। মাটির সহজলভ্যতা, এর প্রয়োজনীয় উপকরন আর শ্রমিক খরচ কম হওয়ায় মাটির তৈরী ঘর বানাতে আগ্রহী।
আউলিয়াপুর গ্রামের মোসাদ্দেকসহ কয়েকজন জানায়, এটেল বা আঠালো মাটি দিয়ে পানির সঙ্গে মিশিয়ে কাদায় পরিণত করা হয়। এরপর ২০/৩০ইঞ্চি চওড়া দেয়াল তৈরী করা হয়। প্রতিটি ঘর তৈরীতে মাসখানেক সময় লেগে যায়। কারণ একেবারে দেয়াল তোলা যায় না। কিছু দেয়াল তোলার পর শুকাতে হয়। ১০/১৫ ফুট উচু দেয়ালে কাঠ বা বাশের সিলিং তৈরি করে তার উপর খড় বা চিনের ছাউনি দেয়া হয়। অনেকে বাঁশ, মাটি, টিন সংগ্রহ করে নিজেরাই মাটির ঘর তৈরি করেন। এক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে। তবে খরচ কম পড়ে। শ্রমিক না নিলে কমপক্ষে ১৬-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই মাটির ঘর ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে এর স্থায়িত্ব শতবছরও হতে পারে বলে তারা জানায়।
ধানজুড়ি গ্রামের হেমব্রমসহ অনেকেই বলেন, ধানজুড়ি গ্রামের সব বাড়িই মাটি দিয়ে তৈরি। আমাদের জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই এ মাটির বাড়ি নির্মাণ করে আসছি এবং এখনও মাটির বাড়িতে আছি। ইটের বাড়ির চেয়ে মাটির বাড়িতে বেশি আরাম।
বিডি প্রতিদিন/এএম