শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজকন্যা ও রাক্ষসী

দিপংকর দাশ

রাজকন্যা ও রাক্ষসী

পূর্ণিমায় চাঁদের আলোয় আলোকিত রাজ্য হিমাংশু নগর। সে রাজ্যে বাস করে এক সুন্দরী রাজকন্যা। চন্দনের মতো তার গাত্র বর্ণ, অমলিন তার হাসি। রাজকুমারী সবসময় প্রাসাদের ভিতরে থাকে। রাজা তার রাজকন্যাকে কখনোই অট্টালিকার বাহিরে যেতে দেন না। কিন্তু রাজকন্যার প্রবল ইচ্ছে সে বাহিরের জগৎটাকে দেখবে। কথা বলবে ফুল, ফল, পাখি, ঘাস আর লতাপাতার সঙ্গে। নিজেকে ওদের মাঝে বিলিয়ে দেবে।

রাজকন্যা রক্ষীদের চোখ এড়িয়ে বাহিরে যেতে পারে না। একদিন সে তার সব সখীদের তার স্বপ্নের কথা জানায়। সখীরা নানা পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু কোনো যুক্তিই সঠিক হচ্ছে না। সখীদের মধ্যে এক সখী ছিল খুব সুন্দরী। সে বলল, ওহে রাজকন্যা।  তুমি আমার পোশাক পরিধান করে বাইরের জগৎ দেখে আস। আমি তোমার পোশাক পরিধান করে বসে থাকি। যুক্তিটা মন্দ নয়। রাজকন্যা রাজী হলো। পোশাক পরিবর্তন করে রাজকন্যা গেল বাহিরের অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

অন্যান্য সখীদের নিয়ে রাজকন্যা প্রথমে তাদের নিজস্ব বাগানে গেল ঘুরতে। আহা! কত সুন্দর এই বাগান। বিভিন্ন রকমের ফুলে ফুলে ভরা এই বাগানে রাজকন্যা প্রবেশ করায় ফুলেরাও যেন হাসছে। পাখিরা মিষ্টি সুরে গান গাইছে, মধুর বাতাস বইছে, ভ্রমরেরা গুঞ্জন করছে। রাজকন্যা পুলকিত হৃদয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগল সব। সে আনন্দচিত্তে হাসতে লাগল। অট্টহাসিতে মুখরিত হয়ে গেল পুরো বাগান। সেই বাগানে বাস করত এক রাক্ষসী। সে ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু রাজকন্যার অট্টহাসিতে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। তার ঘুমে কে ব্যাঘাত ঘটাল। সে বাহিরে এসে রাজকন্যাকে দেখতে পেলো। সে ভঙ্ককর সুরে চিৎকার করতে লাগল। সব সখীরা পালিয়ে গেলেও রাজকন্যা পালাতে পারেনি। রাক্ষসী তখন রাজকন্যার ঘাড় মটকানোর জন্য এগিয়ে যায়। কিন্তু কি ভেবে রাক্ষসী রাজকন্যাকে তার ডেরায় নিয়ে গেল। রাজকন্যা তখন অজ্ঞান হয়ে ছিল। জ্ঞান ফেরার পর সে খুব ভয় পেয়ে গেল। কাঁদতে লাগল।

ওদিকে যে সখী রাজকন্যার পোশাক পরিধান করেছিলো সেও ভয় পাচ্ছে। রাজকন্যা ফিরে আসছে না তাই। বাকি সখীরা সব কথা খুলে বলার পর সে আরও ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু কিছুই বলে না। চুপচাপ বসে থাকে।

জঙ্গলে রাজকন্যা দুঃখে দিন কাটাচ্ছে। ডেরায় রাক্ষসী বিচিত্র সব খাবার খেতে দেয় তাকে। কাঁচা মাছ, মাংস, প্রাণীর হাড় আরও কত কি! খাবে কি? গন্ধ শুঁকতেই সে বমি করে। ডেরার বাহিরেও যেতে পারে না। শুধুই কাঁদতে থাকে।

এদিকে রাজার বাড়িতে রাজকন্যার স্বয়ংবর অনুষ্ঠান। দূর-দূরান্ত থেকে বিরাট বিরাট প্রদেশের রাজকুমারেরা এসেছে অনুষ্ঠানে। ভাদ্র মাস। তালনবমী তিথিতে হবে সেই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের আগের দিন ‘মন্ত্র’ প্রদেশের এক সুন্দর রাজকুমার রাজার বাগানে তার বন্ধু ‘জুকো’কে নিয়ে ঘুরতে যায়। রাজকুমার ঘুরে ঘুরে বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করে। হঠাৎ তার কানে আসে মেয়েলী কান্নার করুণ স্বর। সে এগিয়ে যায় স্বরের উৎস খুঁজে পাওয়ার আশায়। খুঁজতে খুঁজতে সে ডেরায় পৌঁছে যায়। গিয়ে দেখে এক অপুর্ব রমনি কান্না করছে। তার হাত পায়ে শিকল। রাজপুত্র শিকল খুলে দিয়ে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করে। রাজকন্যা সব খুলে বলে। রাজপুত্র তাই কন্যাকে নিয়ে ডেরা থেকে বাহিরে আসছে। ঠিক ঐ সময় রাক্ষসী এসে হাজির। রাক্ষসী ও রাজপুত্রের মধ্যে প্রবল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে রাক্ষসী মারা যায়। তারপর রাজপুত্র রাজকন্যাকে তার মহলে পৌঁছে দেয়।

রাজকন্যাকে ফিরে পেয়ে সখী মহাখুশি। একে অপরের পোশাক পরিবর্তন করে। শুরু হয় তাল নবমীর স্বয়ংবর অনুষ্ঠান। রাজকন্যা অপরূপ সাজে সেজে আসে অনুষ্ঠানে। এদিকে সকল রাজপুত্র তাদের আসনে বসে আছে। একে একে তারা তাদের পরাক্রম দেখাচ্ছে। সবার পরাক্রমে মুগ্ধ রাজমহল। এবার রাজকন্যা মালা পরাবে তার প্রিয় রাজপুত্রের গলায়। খুঁজতে খুঁজতে রাজকন্যা পেয়ে যায় সেই রাজপুত্রকে যার কারণে সে বেঁচে ফিরেছে রাক্ষসীর হাত থকে। সঙ্গে সঙ্গে সে ঐ রাজপুত্রের গলায় পরিয়ে দিল ফুলের মালা। বিয়ে হলো দুজনের। বধূসহ নিজ রাজ্যে ফিরে গেল রাজপুত্র। দুজনেই আনন্দে বাস করতে থেকে রাজমহলে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর