রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

বৃষ্টি ঝরে রবের রহমত হয়ে

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

বৃষ্টি ঝরে রবের রহমত হয়ে

রসুল (সা.) এর জীবন থেকে জানতে পারি, তিনি বৃষ্টিকে খুব ভালোভাবেই উপভোগ করতেন। প্রখ্যাত সাহাবি আনাস (রা.) বলেন, ‘আমরা রসুলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে থাকাকালে একবার বৃষ্টি নামল। রসুলুল্লাহ (সা.) তখন তাঁর কাপড় প্রসারিত করলেন যাতে পানি তাঁকে স্পর্শ করতে পারে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসুল, আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, কারণ বৃষ্টি তার মহান রবের কাছ থেকে এই মাত্রই এসেছে।’ (মুসলিম : ৮৯৮)। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা নামে রহমতের ধারা হয়ে। বৃষ্টি হলে প্রভুকে স্মরণের শিক্ষাও দিয়েছেন রসুল (সা.)। মা আয়েশা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বৃষ্টি নামতে দেখলে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিয়া’। অর্থাৎ হে আল্লাহ, উপকারী বৃষ্টি আমাদের ওপর বর্ষণ করুন।’ আবু দাউদের বর্ণনায় রয়েছে, রসুল (সা.) বলেছেন, বৃষ্টির সময় করা দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’

‘এসেছে বরষা, এসেছে নবীনা বরষা, /গগন ভরিয়া এসেছে ভুবন-ভরসা-

ঋতু বৈচিত্র্যের রবিঠাকুর আর নজরুলের দেশ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে চলছে বর্ষাকাল। বর্ষার সুশীতল বর্ষণ প্রকৃতির সব চাওয়াকে তৃপ্ত করে। বাংলার প্রকৃতিতে নতুনরূপে সজ্জিত হয়ে নয়নাভিরাম শোভা নিয়ে শ্যামলী বর্ষা এসেছে। বর্ষার আগমনে খাল-বিল জলমগ্ন হয়ে গেছে। ব্যাঙেরা দল বেঁধে ডাকছে মেঘ হ মেঘ হ। শুরু হয়েছে নবজীবনের আনন্দমেলা। প্রকৃতির রানী বর্ষা এক আশ্চর্য উপভোগ নিয়ে হাজির হয়েছে। কী এক অফুরন্ত লীলা বৈচিত্র্য!  গ্রীষ্মের নিমর্মতার পরিসমাপ্তি ঘটেছে বর্ষার কোমলতায়। শুরু হয়েছে অঝোরে বর্ষণ। কদম-কেয়া ফোটার সময় এ মাস। গ্রীষ্মের বিদায়ে প্রকৃতির শান্তির আভাস জানিয়ে দেয় কদম-কেয়া ফুল। হলুদ সাদা মিশ্রিত কদম ফুল যেন শান্তির বার্তা জানিয়ে দিতে এসেছে। শুধু কদমেই নয়, শাপলা ফুলেও এ হাসি শোভা পাচ্ছে। সরোবরে ফুটে আছে অজস্র শাপলা যেন উৎসব আনন্দে হাসিতে আত্মহারা। বর্ষায় কবিমন বিচিত্রতায় ভরে ওঠে। তাই কতই না কবিতা-ছড়া তার লেখনিতে প্রকাশ পায়। কদম-কেয়া-শাপলার স্নিগ্ধ হাসি ভাবুক কবিমন আন্দোলিত করে তোলে। ভাবের সঞ্চয় হয়  তার মনে।

বর্ষার বর্ষণে মানব দেহ এবং চোখ জুড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানবাত্মায় প্রশান্তি ঝড়ারও কথা ছিল। বিশাল নীল আকাশ কীভাবে অশ্রু জড়াচ্ছে? এতে বনি আদমের জন্য কী শিক্ষা রয়েছে? এসব এখন আর ভাবার সময় পাচ্ছে না মানুষ। অথচ আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘তিনিই সে সত্তা, যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, যাতে রয়েছে তোমাদের জন্য পানীয় এবং তা থেকে হয় উদ্ভিদ, যাতে তোমরা জন্তু চরাও। তার মাধ্যমে তিনি তোমাদের জন্য উত্পন্ন করেন ফসল, জয়তুন, খেজুর গাছ, আঙ্গুর এবং সব ফলফলাদি। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য, যারা চিন্তা-গবেষণা করে।’ (সূরা নাহল : ১০-১১)। অন্যত্র আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তিনিই আসমান থেকে বর্ষণ করেছেন বৃষ্টি। অতঃপর আমি এ থেকে উত্পন্ন করেছি সব জাতের উদ্ভিদ। অতঃপর আমি তা থেকে বের করেছি সবুজ ডালপালা। আমি তা থেকে বের করি ঘন সন্নিবিষ্ট শস্যদানা। আর খেজুর বৃক্ষের মাথি থেকে বের করি ঝুলন্ত থোকা। আর উত্পন্ন করি আঙ্গুর বাগান এবং সাদৃশ্যপূর্ণ ও সাদৃশ্যহীন জয়তুন ও আনার।  চেয়ে দেখ তার ফলের দিকে, যখন সে ফলবান হয় এবং তার পাকার সময়। নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য যারা ইমান আনে।’ (সূরা আনআম : ৯৯)।

প্রকৃতির এ বৈচিত্র্য নিয়ে চিন্তা গবেষণা না করার জন্যই মানুষ আজ যান্ত্রিক রোবটে পরিণত হয়েছে। হায় আফসোস! প্রকৃতি নিয়ে ভাবনা, বর্ষা, জোছনা উপভোগ করা, খোদার সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা গবেষণা করা বেমালুম ভুলেই গেছে মুসলমান। মুসলমান তরুণ আজ পড়ে আছে ফেসবুক, টুইটার নিয়ে। তারা বৃষ্টি ও জোছনা নিয়ে স্ট্যাটাস কমেন্ট করে ঠিক কিন্তু এর প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে না।

আমাদের প্রত্যেকের উচিত প্রকৃতির বৈচিত্র্য উপভোগ করা এবং এ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা করা। তবেই মহান আল্লাহ আমাদের আত্মায় তার নূর ঢেলে ইলহামী ইলম দান করবেন। আমরা হতে পারব প্রকৃতির মতো সুন্দর।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর