শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিরপেক্ষ ইসি গঠনে ব্যর্থতা বিপর্যয় ডেকে আনবে

নূরে আলম সিদ্দিকী

নিরপেক্ষ ইসি গঠনে ব্যর্থতা বিপর্যয় ডেকে আনবে

আমি মনস্তাত্ত্বিক নই, জ্যোতিষীও নই। এ দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল এতই অস্থির এবং টালমাটাল যে, আমার ৫০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাপ্রসূত যে কোনো ধারণা খোল নলচেসহ বদলে যেতে পারে। তবে দেশবাসীর গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে নিবন্ধিত রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আমন্ত্রণ, সার্চ কমিটি গঠন, সার্চ কমিটির সদস্যদের বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে ক্রমাগত বৈঠক, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দৃশ্যত একটা চলমান উদ্যোগ।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন পর্যন্ত খুব সংযত ও সন্তর্পণে এগোচ্ছে। এটা জাতিকে আপাতত কিছুটা আশান্বিত করেছে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পাওয়ার জন্য আশায় বুক বাঁধতে প্রান্তিক জনতাকে অনেকখানি উৎসাহিত করেছে। সংযত ও সহনশীল মনোভাব নিয়ে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতিকে তারা এই প্রথমবারের মতো একটা আশার আলো দেখাতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এটিই বোধহয় সবচেয়ে স্বস্তির মুহূর্ত।

হঠাৎ কোনো রাজনৈতিক দমকা হাওয়া এই সম্ভাবনার প্রদীপটি নিভিয়ে না দিলে আলোচনা-পর্যালোচনার ধারাবাহিকতায় একটি গঠনমূলক ফল বেরিয়ে আসতে পারে, এটা নিঃসন্দেহে আশা করা যায়। আমি আমার সব অনুভূতি ও মননশীলতা দিয়ে বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কোনো ম্যাজিক বা তন্ত্রমন্ত্র কাজ করে না। রাজনৈতিক সব মহলে আলোচনা-পর্যালোচনার মধ্য দিয়েই একটা সুরাহার সৃষ্টি হয়। পৃথিবীতে দৃষ্টান্তের অভাব নেই। অনেক অভ্যন্তরীণ জটিল সমস্যা, এমনকি ভিয়েতনামে প্রায় ২০ বছর ধরে চলমান যুদ্ধ দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে একটা সফল ও টেকসই পরিণতি পেয়েছে। ইরানের স্বৈরশাসক রেজা শাহ পাহলভি প্যারিসে অনুষ্ঠিত আলোচনার অনুসরণে ইমাম খোমেনির হাতে ক্ষমতা তুলে দিলে প্রায় গৃহযুদ্ধে উন্মত্ত ইরানিদের ভয়াল দিনগুলোর অবসান হয়েছে।

বাংলাদেশে সেই ভয়াল রূপ কখনই ধারণ করেনি। আশঙ্কা থাকলেও আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে জাতি গৃহযুদ্ধের মতো সংকটে নিপতিত হয়নি। তবু না বললেই নয়, জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা, পেট্রলবোমা, অন্যদিকে অজস্র গুলিবর্ষণ, টিয়ার গ্যাস ও পুলিশি নির্যাতনের কারণে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিপর্যস্ত হয়েছে, বিধ্বস্ত হয়েছে। তাই দুই জোটের মধ্যে আজকে যতটুকুই সহনশীলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তাকে স্বাগত না জানিয়ে কোনো সুস্থমনের গণতান্ত্রিক মানুষ পারে না। কিন্তু ঘরপোড়া গরুর সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাওয়ার মতো মনে একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। এটি জাতির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কৌশলী কোনো নাটক নয় তো! নিঃসন্দেহে উদ্যোগটি সুশীলসমাজকে নানাবিধ আলোচনা করার সুযোগ এনে দিয়েছে। টক-শোগুলো সরগরম হচ্ছে। প্রতিনিয়তই সুধীজনেরা টক-শোয় তাদের বিশ্লেষণ তুলে ধরছেন। একেও আমি শুভলক্ষণ মনে করি।

আমি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে বিশেষ করে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগের জন্ম। গণতান্ত্রিক পথ পরিক্রমণের মধ্য দিয়েই এর ব্যাপ্তি, বিকাশ ও সফলতা। আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মূল পাথেয় হলো ১৯৭০-এর নির্বাচনে জনগণের নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট। এটি ছাড়া স্বাধীনতা আন্দোলন থমকে যেত, অথবা চৈনিক প্রভাবান্বিত দীর্ঘমেয়াদি গেরিলা যুদ্ধের রূপ নিত। ফল যে অনিশ্চিত ও মরীচিকায় রূপান্তরিত হতো তা বলাই বাহুল্য। পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের ২৩ বছরের পথ পরিক্রমণের শক্তির উৎস ছিল জনগণ; কখনই অস্ত্র নয়। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের ত্যাগ-তিতিক্ষা, রক্ত ও উদ্দীপনা যে চেতনার উন্মেষ ঘটায়, গণতান্ত্রিক পথে একেকটি আন্দোলনের সোপান উত্তরণের মধ্য দিয়ে সেটাই স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধিকার, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় সফল উত্তরণ ঘটায়। আওয়ামী লীগের মধ্যে ভ্রান্ত বামের অনুপ্রবেশ তার মৌলিকতাকে প্রায়ই বাধাগ্রস্ত করলেও আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস কোনো দিনই বন্দুকের নল ছিল না। ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আওয়ামী লীগের রাজনীতির কাছে মূলত পরিত্যাজ্যই ছিল। তবে ভ্রান্ত বামের প্রভাব অতিমাত্রায় হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ কখনো কখনো মূলধারা থেকে সরে এসেছে, এমনকি একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার মতো আত্মঘাতী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বিপর্যস্ত বাংলাদেশে সংগঠনের ভিতরে এবং বাইরে উগ্র বামদের সাংঘর্ষিক তত্পরতা আওয়ামী লীগকে কার্যত বাধ্য করেছে বাকশালের মতো একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার মতো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে। যদিও বঙ্গবন্ধু সময় পেলে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করতেন, এতে আমার অন্তত কোনো সন্দেহ নেই। তাই সার্বিক বিচারে এ দেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র প্রতিবন্ধকতা উত্তরণের সারথি এবং গণতন্ত্রের মূল অভিযাত্রিক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের মূল প্রচেষ্টায় আওয়ামী লীগই এ দেশে গণতন্ত্রের ধারক, বাহক এবং পাকিস্তানিদের পরাজিত করার বিরল দৃষ্টান্ত প্রতিস্থাপনকারী।

আজ গণতন্ত্র যখন মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে, প্রান্তিক জনতা যখন নীরব, নিথর, নিষ্প্রভ— তখন গণতন্ত্রের প্রাণ প্রতিষ্ঠার মূল দায়িত্বটি আওয়ামী লীগের ঘাড়েই বর্তায়। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি সৃষ্টি করার গৌরবদীপ্ত সুযোগ এখন আওয়ামী লীগের সামনে। তারা এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করলে প্রান্তিক জনতা শুধু স্বস্তিই পাবে না, গণতন্ত্রের একটা শক্ত পাকাপোক্ত টেকসই অবকাঠামো তৈরি হবে। ষাটের দশকের বিপ্লবের উন্মত্ত উন্মাদনা পৃথিবীজোড়া (এমনকি বাংলাদেশেও) বারুদের গন্ধ এবং মানুষ হত্যা ও উন্মুক্ত লাশ যখন সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছিল, বিপ্লবই (!) যখন প্রগতির ও জনকল্যাণের রাজনীতির রাজটীকা ছিল, তখন অকুতোভয় ও সাহসী নেতা মুজিব ভাইয়ের অনুপ্রেরণা ও নিঃশর্ত সমর্থনে যারা বিপ্লবের প্রসবযন্ত্রণায় ছটফট করতেন তাদের রুখে দিয়ে ’৭০-এর নির্বাচনটি করতে পেরেছিলাম। এটিই আমার জীবনের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অর্জন। ছাত্রলীগের একটা সংখ্যালঘিষ্ঠ গ্রুপের সমর্থন পুঁজি করেই আল্লাহর অশেষ রহমতে ’৭০-এর নির্বাচন সংগঠিত করার এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জনগণের অভাবনীয় ম্যান্ডেট অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল এবং এ ম্যান্ডেটই ছিল স্বাধীনতা অর্জনের মূল পাথেয় বা একমাত্র প্রাণস্পন্দন।

আজ যে যাই বলুক, কৃতিত্বের অংশীদার যে যেভাবেই হোক না কেন, ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধকেই বিজয়ের একমাত্র শক্তি হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার যত চেষ্টাই হোক না কেন, ’৭০-এর নির্বাচন এবং তা থেকে অর্জিত ম্যান্ডেট স্বাধীনতা অর্জনের মৌলিক উপাদান ছিল। সেই সত্যের আলোকে আওয়ামী লীগকেই আজকে প্রত্যয়দৃঢ় ভূমিকা রাখতে হবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে। আগামী নির্বাচনটা সর্বজনগ্রাহ্য হলেই গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদানের অভিযাত্রা শুরু হবে। এ সত্যটির সঙ্গে প্রান্তিক জনতার সঙ্গে আমিও নিঃসন্দিহান। ২০১৪ সালের নির্বাচনটিতে সব দলের অংশগ্রহণ ছিল না বিধায় এর সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। শেখ হাসিনা হয়তো আজ এ সত্যটি হৃদয়ের গভীরে অনুধাবন করছেন। তাই আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের গুরুত্বটি তিনি সম্যক উপলব্ধি করছেন। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ, সার্চ কমিটি গঠন, সুশীলসমাজের মতামত, বিশেষ করে বিএনপিকে মতামত প্রদানের ও নির্বাচন কমিশনের জন্য পছন্দের নাম প্রস্তাবের আহ্বান ও প্রস্তাব গ্রহণ করে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাকে যে কোনো মূল্যে শেখ হাসিনাকেই সফল করতে হবে। তার বিস্মৃত হলে চলবে না, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা আসুক এটা দেশের এবং দেশের বাইরের অনেকেই চান না। কারণ দেশে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা এলেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা আসবে। মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে প্রান্তিক জনতা শুধু স্বস্তিই পাবে না, একটা টেকসই উন্নয়নের নিশ্চয়তাও পাবে। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত করা গেলে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতার সম্ভাবনার সিংহদ্বার উন্মোচিত হবে এবং অতীতের নির্বাচনের দৈন্যতা ও ভুলত্রুটিরও অনেকটা অবসান হবে। এ সুযোগটি ক্ষমতাসীন নেত্রী হাতছাড়া করবেন না বলেই আমাদের বিশ্বাস। কারণ, সুযোগটি হাতছাড়া হলে সাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের পথটি রুদ্ধ হবে এবং সামাজিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা ঘনীভূত হবে। যেটি বাংলাদেশের উন্নয়ন, তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

এবার একটু আমেরিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আসা যাক। ডোনাল্ড ট্রাম্প সারা বিশ্বের জন্যই এক অশনিসংকেত। আমেরিকার ২৪০ বছরের ইতিহাসে তিনি একজন আশ্চর্যজনক ব্যতিক্রম। সব ঐতিহ্য, গণতান্ত্রিক চেতনা বিধ্বস্ত করে একটা নেতিবাচক বীভৎস উল্লাসে মেতে উঠতে তিনি প্রচণ্ড আগ্রহী। শৃঙ্খলা, সৌজন্য, সহিষ্ণুতা, গণতান্ত্রিক মননশীলতা; যা কিছু সুন্দর, যা কিছু মানবিক, সবকিছু প্রচণ্ড পাশবিকতায় গুঁড়িয়ে দেওয়ার মধ্যেই তার অতীব আগ্রহ ইতিমধ্যেই তিনি প্রতিভাত করেছেন। আমেরিকার চার প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন, জন অ্যাডামস, জেফারসন ও র‍্যাডিসন থেকে শুরু করে বারাক ওবামা পর্যন্ত ৪৪ জন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট একটি গণতান্ত্রিক আবর্তে সহনশীল রাজনীতির আঙ্গিকে একটি বিস্তীর্ণ পরিমণ্ডলের মধ্যে সংযত, সুস্থ ও সহনশীল-মননশীলতার যে ঐতিহ্য বিনির্মাণ করেছেন, তার সবকিছু দুমড়ে মুচড়ে চূর্ণবিচূর্ণ করার ঔদ্ধত্য মনোভাবের প্রকাশ ও কার্যকারিতার মধ্য দিয়ে বিশ্বমানবতাকে তিনি স্তম্ভিত করেছেন।

রিপাবলিকান পার্টির মতো একটি রক্ষণশীল দলের এ অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বটিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেওয়াটাই বিশ্ববাসীকে বিস্ময়াভিভূত করেছে। রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন শিষ্টাচারবিবর্জিত ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই যেন নিজের কাছে অপরিচিত। না হলে সাংবাদিকদের মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করার মতো চরম নির্বুদ্ধিতার প্রকাশ তিনি ঘটাতেন না। তিনি আমেরিকার রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বেমালুম বিস্মৃত হয়ে বলতে সাহস পেতেন না, রাজনীতিকরা বাচাল এবং আপন স্বার্থচিন্তায় নিমগ্ন থাকেন। অভিষেক অনুষ্ঠান থেকেই তার উত্কট দাম্ভিকতা ও স্বেচ্ছাচারী মনের প্রকাশ ঘটেই চলেছে। ওইদিন তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশের সঙ্গে করমর্দন করেছেন। কিন্তু বিল ক্লিনটনের সঙ্গে করমর্দন দূরে থাক বরং অশালীনভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির অভিষেক ভাষণে সবাই তার প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য অন্তত দু-একটি প্রশংসাসূচক বাক্য উচ্চারণ করেন। এটিই এতদিন যাবৎ হয়ে এসেছে। কিন্তু ট্রাম্প তা করেননি। তিনি আমেরিকার সব ধর্মযাজকের, ভিন্ন ভিন্ন মতাবলম্বী খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের এমনকি ইহুদি ধর্মযাজকেরও আশীর্বাদে সিক্ত হলেন। সেখানেও তার বর্ণবাদী মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। একজন কৃষ্ণাঙ্গ যাজক আমন্ত্রিত হয়েও বাণী দেওয়ার সুযোগ পাননি। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু ইসলামবিদ্বেষী নন, অন্যান্য সব ধর্ম ও বর্ণের প্রতিও তার বিদ্বেষ সমস্ত বিশ্বমানবতাকে আতঙ্কিত করেছে। নারীদের প্রতি তার অশোভন ও কুরুচিকর বক্তব্য ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়াসহ সারা বিশ্বের লাখ লাখ নারীর ঘৃণা কুড়িয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। আত্মসম্মানে আঘাতপ্রাপ্ত নারীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। রাজনীতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্কবিবর্জিত জামাতা জ্যারেড কুশনারকে হোয়াইট হাউসের অন্যতম শীর্ষ উপদেষ্টা বানানো তার স্বজনপ্রীতির একটা উত্কট উদাহরণই শুধু নয়, তা প্রমাণ করে জনগণ তো বটেই, তিনি কংগ্রেসকেও মোটেই পরোয়া করেন না।

তার প্রথম নির্বাহী আদেশে সাতটি দেশের মুসলমানদের আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কোর্ট থেকে স্থগিত রাখার যে আইনি প্রক্রিয়া তাকে একটু থমকে দিয়েছে, তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করেছেন। ইরানের অস্কারজয়ী তারকা অভিনেত্রী তারানে আলিদুস্তি এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে অস্কার অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন। বারাক ওবামা এ সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, কাউকে তার বিশ্বাস বা ধর্মের কারণে বৈষম্য করা আমেরিকার ঐতিহ্য ও মৌলিক অধিকারবিরোধী। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য তিনি আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানান।

বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা হলো এই যে, বিএনপিকে এবার নির্বাচনে আসতেই হবে। নইলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। অন্যদিকে দেশব্যাপী একটি অহিংস অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলার সাংগঠনিক শক্তি তাদের নেই। জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাসী আন্দোলন মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে; এটা তারাও উপলব্ধি করছেন। অন্যদিকে ভারতবিরোধী জনমতটা এখনো তাদের পক্ষে রয়েছে বলেই ধরে নেওয়া যায় (নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন তার দৃষ্টান্ত)। এ বাস্তবতা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ যদি গ্রহণযোগ্য সমাধান থেকে কোনো কৌশলে সরে যায়, তাহলে সবকিছুই ভণ্ডুল হয়ে যাবে। এটা কোনো অবস্থাতেই জাতির কাছে প্রত্যাশিত নয়। এ নাম চালাচালির রাজনৈতিক খেলার প্রাক্কালে আমার একটি ব্যক্তিগত প্রস্তাব হলো, এ নির্দিষ্ট বিষয়ে একটা বিশাল জনসভায় দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনাকে জাতির কাছে শপথ করতে হবে, আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্ভাব্য নিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপিত করে গ্রহণযোগ্য করে তুলবেন। মোদ্দা কথা হলো, শেখ হাসিনা চাইলেই নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে, নচেৎ কোনো অবস্থাতেই নয়। এটার পুনরাবৃত্তি হলেও বলি, যে মহড়া চলছে তা নান্দনিক কিন্তু নির্বাচন নিরপেক্ষ করার চাবিকাঠি শেখ হাসিনার আঁচলেই বাঁধা। এ ব্যাপারে তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ। আল্লাহ তার সুমতি দিলে তবেই জাতি পরিত্রাণ পাবে।

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

সর্বশেষ খবর