বুধবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হে বান্দা, দুঃখ পেলেও নিরাশ হইও না

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হে বান্দা, দুঃখ পেলেও নিরাশ হইও না

জীবন পথে চলতে গিয়ে আমাদের অনেক সময় বন্ধুর পথ পারি দিতে হয়। দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হতে হয়। চোখ ভিজিয়ে, বুক ভিজিয়ে কষ্টের কান্না কাঁদতে হয়। সত্যি বলতে, জীবন এবং দুঃখ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেখানে জীবন আছে, মানুষ আছে সেখানে দুঃখ-কষ্টও আছে। অন্যভাবে বললে, পৃথিবী নামক এ গ্রহটি দুঃখেরই গ্রহ। মানুষ এ জগতে কষ্ট করে আরেক জগতে যাবে। যেখানে কষ্টের লেশমাত্রও নেই। শুধুই শান্তি। তাই তো এ জীবনের শত কষ্টও চোখ বুঝে সওয়া যায় পরজীবনের শান্তির আশায়। আশার কথা হলো, আমাদের জীবনে দুঃখ আছে, সঙ্গে আছে সুখও। দুঃখের সময়টা কখনো কখনো দীর্ঘ হয়, কিন্তু সুখের আনন্দটাও কম নয়। প্রশ্ন হতে পারে, আল্লাহতায়ালা কেন আমাদের দুঃখ-কষ্ট, রোগ যন্ত্রণা দেন? এর উত্তরে আল্লাহ নিজেই বলেন, ‘লিয়াবলুয়াকুম আইয়্যুকুম আহসানু আমালা। তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি সুন্দর আমল করে তা দেখার জন্য।’ (সূরা মুলক : ২)। কারণ, একমাত্র দুঃখ-কষ্টের মাধ্যমেই সবর ও ইস্তেকামাতের পরীক্ষা করা যায়। পরীক্ষা করা যায় প্রেমের গভীরতা ও প্রেমিক হূদয়ের বিশালতা সম্পর্কে। বিষয়টা আরেকটু খুলে বলা দরকার। আমরা সবাই বলি, ‘আমানতু বিল্লাহ-হে আল্লাহ! আমি আপনার ওপর ইমান এনেছি। আপনাকে ভালোবেসে আপনার সব নির্দেশ মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত আছি।’ এ দাবি করার পর আল্লাহ বলেন—  ‘আহাসিবান নাস, আইয়ুতরাকু আয়্যাকুলু আমান্না বিল্লাহ, ওয়া হুম লা ইউফতানুন।’ অর্থ : ‘মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, তারা বলবে ‘হে আল্লাহ! আমরা ইমান এনেছি’- আর অমনিই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে? তাদের কোনো পরীক্ষা করা হবে না!’ (সূরা আনকাবুত : ২)। অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘পূর্বে যারাই এ দাবি করেছে, তাদেরই আমি পরীক্ষা করেছি। দুঃখ-কষ্ট যন্ত্রণায় কাতর হয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের মুখ গলে বেরিয়েছে মাতা নাসরুল্লা- আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? আমি তাদের বলেছি, এখনো সাহায্যের উপযুক্ত সময় আসেনি- তবে আল্লাহর সাহায্য খুবই কাছে।’ সার কথা হলো, আমাদের ইমানের দৃঢ়তা প্রমাণের জন্যই আল্লাহতায়ালা পরীক্ষাস্বরূপ আমাদের দুঃখ-কষ্ট দিয়ে থাকেন। বুখারি শরিফের এক হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক মানুষকেই পরীক্ষা করা হয়। যে যত বড় মুমিন তার পরীক্ষাও তত বড়। আর সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা হয় নবীদের প্রতি। আর নবীদের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে মুহাম্মদ (সা.)কে।’ আমরা যদি একটু আমাদের নবীজী (সা.)-এর জীবন নিয়ে ভাবি, তবে দেখব ৬৩ বছরের জীবনে অল্প সময়ের জন্যও তিনি সুখের দেখা পাননি। কারণ, তিনি আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন, আর তার পরীক্ষাও ছিল সবার চেয়ে বেশি। তো বলতে চাচ্ছি, আমাদের জীবনে যে দুঃখ-কষ্ট আসে তা একান্তই আমাদের পরীক্ষার জন্য। এ পরীক্ষায় যদি আমরা উত্তীর্ণ হতে পারি তবেই আমাদের জন্য ‘আজরুন আজিম-সীমাহীন পুরস্কার রয়েছে’। আল্লাহর পরীক্ষায় আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। হাসিমুখে আল্লাহর প্রতি অটল অবিচল থাকতে হবে। বিশ্বাস রাখতে হবে, একদিন এ কষ্টের মেঘ কেটে যাবেই। এভাবে ধৈর্যের সঙ্গে টিকে থাকাও বড় ধরনের ইবাদত। কিন্তু, আমরা অনেকেই কষ্টের সময়, দুঃখের সময় আল্লাহর দয়া-মায়ার কথা ভুলে যাই। বলি, আল্লাহ আর কাউকে চোখে দেখে না ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ধরনের কথা না বলে আমরা বলব, আল্লাহ! এত মানুষ থেকে আপনি আমাকে পরীক্ষার জন্য মনোনীত করেছেন এ দয়ার কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই। এভাবে যদি আমরা কৃতজ্ঞ বান্দার পরিচয় দিয়ে হাসিমুখে ‘আমানতু বিল্লাহ’র প্রমাণ দিতে পারি তবে এ দুনিয়া এবং আখেরাত দুটোই আমাদের জন্য সুন্দর হবে ইনশা আল্লাহ।  এর বিপরীতে আমরা যদি বিদ্রোহী হয়ে ওঠি, পাপের পথে ছুটি, আত্মহননের পথ বেছে নিই, তবে মনে রাখতে হবে, এতে আল্লাহর কিছু যাবে আসবে না, ক্ষতি আমার নিজেরই হবে।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

সর্বশেষ খবর