মহান আল্লাহ প্রিয় বান্দাকে কিছু কিছু বিশেষ সময় উপহার দেন ইবাদত-বন্দেগির জন্য। গুনাহ মাফের জন্য। আদরের বান্দাকে কাছে টানার জন্য। রহমতের চাদরে আবৃত করার জন্য। আরবি বারো মাসের মধ্যে মাহে রমজান আল্লাহর নৈকট্য লাভের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এ মাসে দিনের বেলায় রোজা ফরজ করা হয়েছে এবং রাতের বেলায় তারাবির নামাজ পড়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রোজা রাখার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে তাকওয়া ও আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়। আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করে দেওয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অনুসারীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। এ থেকে আশা করা যায়, তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলি সৃষ্টি হয়ে যাবে। এ কতিপয় নির্দিষ্ট দিনের (রমজান মাসের) রোজা। যদি তোমাদের কেউ অসুস্থ অথবা মুসাফির হয়ে থাকে তাহলে সে যেন অন্য দিনগুলোয় এই সংখ্যা পূর্ণ করে নেয়। আর যাদের জন্য রোজা অত্যন্ত কষ্টদায়ক তারা যেন ফিদিয়া দেয়। একটি রোজার ফিদিয়া হলো একজন মিসকিনকে খানা খাওয়ানো। আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ও সানন্দে কিছু বেশি সৎকাজ করে, তা তার জন্য ভালো। তবে যদি তোমরা সঠিক বিষয় অনুধাবন করে থাকো তাহলে তোমাদের জন্য রোজা রাখাই ভালো।’ সূরা : আল বাকারাহ : ১৮৩-১৮৪। উল্লিখিত আয়াতে অতিশয় বৃদ্ধ লোকদের জন্য ফিদিয়া ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, যারা কোনোভাবেই রোজা রাখতে সক্ষম নয় এবং আর কখনো রোজা রাখার মতো সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে যারা পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে যায় এবং রোজা রাখতে সক্ষম হয় তাদের অবশ্যই রোজা পুনরায় রাখতে হবে। মাহে রমজান কোরআন নাজিলের মাস। রহমতের মাস। বরকতের মাস। ধৈর্য ধারণের মাস। তাকওয়া ও আল্লাহভীতি অর্জনের মাস। সংযমী হওয়ার মাস। গরিবের পাশে দাঁড়ানোর মাস। এ মাসে রয়েছে অফুরন্ত সওয়াব। গুনাহ মাফের অপূর্ব সুযোগ। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াব লাভের প্রত্যাশায় রমজানের রোজা রাখে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। এবং যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াব অর্জনের উদ্দেশ্যে রমজানে রাত জাগরণ করে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ বুখারি, মুসলিম। রোজাদারকে ইফতার করানোর সওয়াব প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় সে তার (রোজাদারের রোজার) সমান প্রতিদান পায়। কিন্তু এর ফলে রোজাদারের সওয়াবের কোনো কমতি হবে না।’ তিরমিজি। রোজা রেখে কেউ যেন কারও সঙ্গে ঝগড়া-ঝাঁটি না করে সে বিষয়ে রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে ও ঝাগড়া-ঝাঁটি না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা কেউ তার সঙ্গে ঝাগড়া-ঝাঁটি করে তাহলে তার বলা উচিত, আমি রোজাদার।’ বুখারি ও মুসলিম।
লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।