বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

আত্মিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম

মাওলানা মুহম্মাদ জিয়াউদ্দিন

‘সাওম’ বা ‘সিয়াম’ আরবি শব্দ। বাংলা ভাষায় এর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত রোজা মূলত ফারসি শব্দ। সাওম অর্থ বিরত থাকা, কঠোর সাধনা, অবিরাম চেষ্টা ও আত্মসংযম। ইসলামী পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তের সঙ্গে পানাহার ও সব ধরনের যৌন-সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলা হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পর সেখানকার ইহুদিদের মধ্যে আশুরার রোজা পালন করতে দেখে মুসলমানদের ওই দিনের রোজা পালন করতে নির্দেশ দেন। হিজরতের আঠার মাস পর, কেবলা পরিবর্তনের পরে শাবান মাসে রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার নির্দেশসংবলিত আয়াত নাজিল হয়। তখন থেকে আশুরার রোজা পালনের অপরিহার্যতা নাকচ হয়ে যায়। প্রত্যেক বয়ঃপ্রাপ্ত, শারীরিক ও মানসিকভাবে মুসলিম নর-নারীর ওপর রমজানের রোজা ফরজ। সংগত কারণে এ মাসে রোজা না রাখতে পারলে পরবর্তী সময়ে তা কাজা করা ফরজ। তা ছাড়া কাফ্ফারা আদায়েরও বিধান রয়েছে। মানুষের আত্মিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে রোজা অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

পবিত্র কোরআনে সিয়াম বা রোজা পালন সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। আশা করা যায় তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুণ ও বৈশিষ্ট্য জাগ্রত হবে।’ সূরা বাকারা : ১৮৩।

রমজান হলো সেই মাস, যে মাসে আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য আল্লাহ-প্রদত্ত জীবন-বিধান এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। আর হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসটি পাবে সে যেন এ মাসের রোজা রাখে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য কঠিন করতে চান না। যাতে তোমরা এ সংখ্যা পূরণ করতে পারো এবং তোমাদের হেদায়াত দানের জন্য আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা কর। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পারো। সূরা বাকারা : ১৮৫।

সিয়ামের ফজিলত সম্পর্কে বহুসংখ্যক হাদিস রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন, যে লোক রমজান মাসের রোজা রাখবে ইমান ও চেতনাসহকারে (সওয়াবের আশায়) তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যায়। বুখারি, মুসলিম।

আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে লোক এক দিন আল্লাহর পথে রোজা রাখবে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডল জাহান্নাম থেকে ৭০ বছর দূরে সরিয়ে রাখবেন। বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাহে রমজানে রোজা পালনের তাওফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর