বৃহস্পতিবার, ১২ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিএনপি : বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত এবং বাস্তবতা

আবু হেনা

বিএনপি : বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত এবং বাস্তবতা

দেশের ক্রমাবনতিশীল অসুস্থ রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকারে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন একটি চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশিদের জন্য’ এ আদর্শ বুকে ধারণ করে যে রাজনৈতিক দলটি দেশ গড়ার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে আত্মপ্রকাশ করেছিল তা ছিল একটি ‘জাতীয় মিলন ও ঐক্যের’ প্রতীক। দলের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল : ‘এ দলের বৈপ্লবিক উদারতা ও বিশালতা সকল দেশপ্রেমিক মানুষকে এই অটল ঐক্যবাদী কাতারে শামিল করে জাতীয় পর্যায়ে স্থিতিশীলতা এবং সার্বিক উন্নতি ও প্রগতি আনতে সক্ষম হবে বলে যৌক্তিক ও বাস্তব আশা ও সম্পূর্ণ বিশ্বাস আমাদের আছে।’ দলের ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে : ‘অবিস্মরণীয় কাল থেকে বাংলাদেশি জনগণ এক অনস্বীকার্য স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে উপমহাদেশের অন্যান্য জাতিসত্তা থেকে পৃথক অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। ভৌগোলিক অবস্থান, অভিন্ন ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং স্বতন্ত্র বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তিমূল দৃঢ় করেছে। বহিঃশত্রু, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যুগ-যুগান্তরের সংগ্রাম এ চেতনাকে বলিষ্ঠ করেছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ১৯৭১-এর ঐতিহাসিক লোকায়ত সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে সুসংহত, দৃঢ়বদ্ধ ও স্পষ্টতর রূপ দিয়েছে। ধর্ম, গোত্র, অঞ্চলনির্বিশেষে সব বাংলাদেশি এক ঐক্যবদ্ধ জাতিতে পরিণত হয়েছে। স্বনির্ভর সংগ্রামের মাধ্যমে এই জাতি তার নিজস্ব আবাসভূমি, স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি হচ্ছে দলের প্রধান নীতি নির্ধারণী অঙ্গ। এ কমিটি দলের নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়ন ও প্রবর্তন করবে। দলের চেয়ারপারসন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও মহাসচিব স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বলে গণ্য হবেন। জাতীয় কাউন্সিলের দায়িত্ব হলো স্থায়ী কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত ও প্রবর্তিত দলের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও কার্যকর করা। জাতীয় কমিটির সদস্য ও কর্মকর্তাদের নির্বাচনও জাতীয় কাউন্সিলের এখতিয়ার। দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করার সর্বোচ্চ ক্ষমতাও জাতীয় কাউন্সিলের ওপর ন্যস্ত। সেই কারণে প্রতি তিন মাসে একবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা হতে হবে এবং বছরে অন্তত একবার জাতীয় কাউন্সিলের অধিবেশন হতে হবে। প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার জাতীয় নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভা হতে হবে। দলের একটি পার্লামেন্টারি কমিটি থাকবে এবং এ কমিটির সভাপতি হবেন দলের চেয়ারপারসন। জাতীয় স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি, জাতীয় কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করার জন্য প্রয়োজনবোধে চেয়ারপারসন একজন সদস্যকে মনোনয়ন দিতে পারবেন। কিন্তু পার্লামেন্টারি বোর্ডে তিনিই সভাপতিত্ব করবেন। বিএনপির মূল মতাদর্শ ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ ১৯৭৭ সালের ২২ এপ্রিল প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে জিয়াউর রহমান সংবিধানের অষ্টম অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে যে ফরমান জারি করেন তা-ই দলের দার্শনিক ভিত্তি। এ অনুচ্ছেদের সংশোধিত ধারাগুলো : সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার— এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এইভাবে বর্ণিত অন্য সকল রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে।

(১ ক)  সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হইবে যাবতীয় কার্যাবলির ভিত্তি। জাতীয়তাবাদের কথা বলতে গিয়ে জিয়াউর রহমান বলেন : ‘জাতীয়তাবাদের টার্গেট হবে জনগণ। কারণ জনগণই সকল শক্তির উৎস। এজন্যই আমরা গ্রামে গ্রামে সংগঠন করছি, প্রতিষ্ঠা করেছি সামাজিক অর্থনৈতিক স্বনির্ভর গ্রামসরকার।... আমরা স্বপ্ন দেখছি একটি শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের।’

১৯৮১ সালে মার্কাম ফ্রান্ডাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের দেশ, আমাদের ভূমি।... আমাদের ভূমি অনেক বিজেতা এসে নষ্ট করেছে। এখন সুযোগ এসেছে আমাদের এই ভূমি আমরা চাষাবাদ করি এবং এর উৎপাদনশীলতা বাড়াই। শিল্প গড়ে তুলি এবং মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াই।... আমাদের আস্থা রাখতে হবে নিজেদের শক্তিতে... কোনো বিদেশবাদ নয়।’ বিএনপি একটি জীবনদর্শন, একটি জীবনতত্ত্ব, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মতাদর্শ। এটা কোনো ঠুনকো বিষয় নয়, হঠাৎ করে হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া অথবা সমুদ্রের তলদেশে তলিয়ে যাওয়ার দল নয়। এ দলের ভিত এ দেশের মাটির গভীরতম স্তরে জনগণের হৃদয়ে প্রোথিত। ১৯৮১ সালের ৩০ মের রাতে কিছু উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যের হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার মৃত্যু হলেও জিয়ার আদর্শ অমর হয়ে আছে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে। সেই একই আদর্শ বুকে ধরে বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থক মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকবেন চিরকাল। জিয়াউর রহমানই প্রথম প্রেসিডেন্ট যিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার অনুসারী বিচারপতি সাত্তারও একইভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। তারপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে বিএনপির বিজয়যাত্রা অব্যাহতভাবে চলেছে। তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন তিনি (দুবার বিরোধীদলীয় নেতা)। প্রেসিডেন্ট জিয়ার ১৯ দফা অনুসরণ করে দেশের অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন। দেশের জনগণকে সংসদীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছেন। এ দেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক গণতন্ত্রকে সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা প্রণয়ন করেন তিনি। দীর্ঘ পরিক্রমায় ৩৬ বছরের কর্মময় জীবন শেষে তিনি আজ ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দণ্ডিত হয়ে ২২৮ বছরের পুরনো পরিত্যক্ত কারাগারে নির্জন কারাবাস ভোগ করছেন। একদিন ভারতসম্রাট শাহজাহান যেমন আগ্রার দুর্গে বন্দী অবস্থায় তাজমহলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতেন, আজ বেগম জিয়াও তেমনি তার নির্জন সেল থেকে বিশাল আকাশের দিকে চেয়ে অতীত স্মৃতি মন্থন করেন। ১২ বছর আগে রাজত্ব হারিয়েছেন তিনি। প্রবাসে বসবাসরত এবার পুত্রের হাতে তুলে দিয়েছেন দল পরিচালনার দায়িত্ব। এবারের ঈদে পরিবারের ২০ জন সদস্যের তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। দলের কোনো নেতা-কর্মী তার দেখা পাননি। অন্যদিকে জিয়ার মাজারে ১০ হাজার নেতা-কর্মীর সমাবেশ ঘটেছে ওইদিন।

এদিকে তারেক রহমানও বাংলাদেশের বাইরে ব্রিটিশ সরকারের রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। একই মামলায় তারও ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ২ কোটি টাকা জরিমানা হয়েছে। এর আগে মানিলন্ডারিং মামলায় তার সাত বছর সাজা হয়েছে। ২১ আগস্ট হত্যা মামলায় তার ফাঁসি পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতএব আগামী দিন বিএনপির জন্য আরও বিপত্সংকুল। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বিলুপ্ত করে গঠনতন্ত্র সংশোধনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। নির্বাচন কমিশনও এ সংশোধনীকে সংবিধান পরিপন্থী বলে মনে করছে। বিএনপির দলীয় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এ সংশোধনী জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

জাতীয় নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই বিএনপি ভারতপন্থি না ভারতবিরোধী— এ ধরনের প্রশ্ন উঠছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং স্পষ্টভাবে বলে গিয়েছিলেন যে, বিএনপি ছাড়াই বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়া সম্ভব। তখন ভারতের কংগ্রেস সরকার খোলাখুলিভাবেই আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়েছিল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বিজেপি সরকার সুজাতা সিংকে তার সময় পূর্তির আগেই বিদায় দিয়েছিল। সম্প্রতি বিবিসির সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, পারস্পরিক স্বার্থ ও মর্যাদাবোধই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভিত রচনা করবে। তিনি সঠিকভাবেই বলেছেন বিএনপি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল। অতএব বিএনপি বাংলাদেশের স্বার্থই দেখবে। ওটাই স্বাভাবিক। বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি ভিশন-২০৩০-এ পুনর্বার স্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে : ৪১. বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অক্ষুণ্ন্ন রাখতে বিএনপি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিএনপি অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং অন্য কোনো রাষ্ট্রের জন্য নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করবে না। একইভাবে বিএনপি দৃঢ় অঙ্গীকার করছে যে, অন্য কোনো রাষ্ট্রও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে শক্ত প্রতিরোধ (resistance) গড়ে তোলা হবে। বিএনপি বিশ্বাস করে, আমাদের সীমান্তের বাইরে বাংলাদেশের বন্ধু রয়েছে, কোনো প্রভু নেই। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিএনপি মুসলিম উম্মাহ ও প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলবে। অতএব বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কারও কোনো অস্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত নয়। আজ আর একটি নির্বাচনের প্রাক্কালে একটি কথা স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন যে, ১৯৭১-এ যে ঐতিহাসিক মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল তার মূলে ছিল এ দেশের জনগণের এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলার প্রবল আকাঙ্ক্ষা। সবচেয়ে বড় চাওয়া-পাওয়া এ অঞ্চলের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই ১৯০৪ সালে লর্ড কার্জন পূর্ব বাংলার সঙ্গে আসামকে সংযুক্ত করে একটি আলাদা প্রদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। সৃষ্টি হয় কার্জন হল ও ঢাকা হাই কোর্ট। কিন্তু কলকাতার এলিটরা তা মেনে নেয়নি। এ গণতন্ত্রই ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম বাংলা থেকে পৃথক করে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করেছিল। কারণ অবিভক্ত বাংলায় এ অঞ্চলের মানুষই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বাংলার শাসন চালাবে এ আশঙ্কায় কলকাতার এলিটরা বঙ্গভঙ্গের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। এরপর গণতন্ত্রের কারণে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে পাকিস্তানিরা গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যার প্রচেষ্টা চালায়। এ অসদুদ্দেশ্যেই আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে মৌলিক গণতন্ত্র চালু করেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ১৯৬২-এর ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, জনতার আন্দোলন ছিল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার। তারপর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ১৯৭০-এর নির্বাচনে এ দেশের সব মানুষের স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষের গণরায়ই ২৬ মার্চের রাতে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহের মাধ্যমে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের রূপ পরিগ্রহ করে। এ দেশের মানুষের হৃদয়ে দীর্ঘদিন থেকে লালিত গণতন্ত্র আজ আবার সংকটের আবর্তে নিপতিত। আজ তাই ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। আজ সেই প্রক্রিয়াকে আরও সুসংহত ও সুবিন্যস্ত করার জন্য প্রয়োজন স্বপ্ন ও প্রত্যাশাকে সুচারুরূপে সাজানো। এ দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি নিহিত রয়েছে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, প্রতিনিধিত্বশীল, জননির্ভর সক্রিয় অংশীদারিত্বের গণতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্যে।

বর্তমান সরকার যা করতে পারে তা হচ্ছে এ প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটানো। সে প্রয়াস আরও সুচিন্তিত, সংহত ও সুপরিচালিত হওয়া প্রয়োজন। দরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ ও জনকল্যাণমুখী রাজনীতি। প্রয়োজন সমাজের উপরিস্থলে আত্মশুদ্ধি ও শাশ্বত মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন ঘটানো। আজ কে কত ‘ভারতপন্থি’ এ প্রতিযোগিতায় মূল্যবোধের বিকৃতি ঘটেছে। ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই প্রতিযোগীরা ভাবছেন—

‘আমিও শীতের রাত্তিরে

না হয় বরুণ মিত্তিরে

দিলাম দেহের কিছুটা তাপ

কি আসে যায়?’

তাত্ক্ষণিক লাভের জন্য মানবসভার ও আত্মমর্যাদার এ অবমাননাকর বেসাতি রাষ্ট্রক্ষমতার লোভে অনেকেই করছেন। এখন প্রয়োজন মোড় ফেরানোর। আত্মশুদ্ধির ও মূল্যবোধের পুনর্জাগরণের যে ইতিবাচক প্রক্রিয়া তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে আলোকিত মঞ্চের প্রাণকেন্দ্রে।

আজ সমাজের শীর্ষ অংশের মধ্যে রয়েছে এক দুঃসহ দেউলিয়াপনা। রয়েছে প্রকৃত নেতৃত্বের প্রকট শূন্যতা। এ শ্রেণির প্রায় সবাই সর্বক্ষণ স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রিক লক্ষ্য ও অভীষ্ট অর্জনের সর্বগ্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। আজ প্রয়োজন নিখাদ দেশপ্রেম এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা ও বিশ্বাসে বলীয়ান এলিট শ্রেণি যারা দেশের মানুষের ভাগ্যে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে পারে, অর্জন করতে পারে সার্বিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি।

            লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য।

সর্বশেষ খবর