শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

যেভাবে দাঁড়াব প্রিয় নবী (সা.)-এর সামনে

মুফতি মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

যেভাবে দাঁড়াব প্রিয় নবী (সা.)-এর সামনে

ইসলামপূর্ব যুগে মদিনার নাম ছিল ইয়াসরিব। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের পর এর নাম হয় মদিনাতুন্নবী বা নবীনগর। সংক্ষেপে বলা হয় মদিনা। সোনার মদিনা, প্রাণের মদিনা। মুমিন-মুসলমানের প্রাণের ভূমি। মদিনা হলো রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় শহর; শান্তির নগর। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে আমার রওজা জিয়ারত করল, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেল।’ বায়হাকি। তিনি আরও বলেন, ‘যে হজ করল কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করল না; সে আমার প্রতি অন্যায় করল।’ ইবনে হিব্বান, দারা কুতনি, দায়লামি। ফকিহদের মতে, হাজীদের জন্য মদিনা জিয়ারত করা সুন্নত। পাকিস্তানের প্রখ্যাত মুফতি হানাফি মাজহাবের জবরদস্ত আলেম ইউসুফ ইসলাহি তার আসান ফিকাহ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘হাজীদের জন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা জিয়ারত করা ওয়াজিব।’

জান্নাতপ্রত্যাশী প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের অন্তর সর্বদা উন্মুখ থাকে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা জিয়ারত ও মদিনা মুনাওয়ারা দেখার জন্য। তাঁর রওজার সবুজ গম্বুজ তো বেহেশতের একটি নিদর্শন যা দর্শনে কেবল চোখ পবিত্র হয় না, প্রশান্তিতে ভরে ওঠে হৃদয় ও মন। সবুজ গম্বুজের চারদিকে রহমতের এমন স্রোতধারা প্রবহমান, যার প্রস্রবণে কার না অবগাহন করতে ইচ্ছা করে। কার না মন চায় হৃদয় উজাড় করে তাঁকে সালাম জানাতে! কারণ, এখানেই শুয়ে আছেন তিনি।

জান্নাতি নিশান রওজার জিয়ারতে রয়েছে অধিক পুণ্য ও ফজিলত। যা কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস দ্বারা সমর্থিত ও উত্তম ইবাদত হিসেবে গণ্য। রওজার জিয়ারতের ফজিলত কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

আল কোরআনের আলোকে : আল কোরআনে রওজার জিয়ারতের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, ‘(হে মাহবুব!) যদি তারা নিজেদের আত্মার ওপর জুলুম করে তাহলে যেন তারা আপনার দরবারে আসে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রসুল যদি তাদের জন্য ক্ষমা চেয়ে সুপারিশ করেন তবে তারা অবশ্যই আল্লাহকে তওবা কবুলকারী ও দয়ালু পাবে।’ সূরা নিসা, আয়াত ৬৪।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা কাজী আয়াজ তার আশ-শিফা গ্রন্থে বলেন, ‘নবীজির জীবদ্দশায় যেমন এ আয়াতের আমল প্রযোজ্য ছিল, তেমনি তাঁর ওফাতের পরও এ আয়াতের আমল হুবহু অবিকল কার্যকর থাকবে। তাঁর রওজার কাছে গিয়ে তাঁর অসিলা দিয়ে ক্ষমা চাইলে, দোয়া করলে তিনি ওই উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন এবং আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, তার দোয়া কবুল করবেন।’

হাদিসের আলোকে : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করল তার জন্য আমার শাফায়াত (সুপারিশ) ওয়াজিব হয়ে গেল।’ বায়হাকি। আরেক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে মদিনায় উপস্থিত হয়ে আমার রওজা জিয়ারত করবে কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে সাক্ষী ও সুপারিশকারী হব।’ বায়হাকি। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহয় হজ করল অথচ আমার রওজা জিয়ারত করল না, মূলত সে আমার ওপর জুলুম করল।’ ইবনে হিব্বান, দারা কুতনি ও দায়লামি।

যেভাবে দাঁড়াব প্রিয় নবীর সামনে : রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা হাজারো বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। তাঁর শান ও মর্যাদা আল্লাহ-প্রদত্ত। এই মহিমান্বিত পুণ্যস্থান জিয়ারতে আদব বজায় রাখা ইমানের দাবি। আসুন জেনে নিই কীভাবে আদবের সঙ্গে রওজা জিয়ারত করব। দেহ-মনে পবিত্র হয়ে নিন। সুন্দর পোশাকে সুসজ্জিত হোন। খুশবু মেখে নিন মন ভরে। দুরু দুরু বুকে পা ফেলুন। প্রবেশ করুন মসজিদে নববীতে। বার বার মনকে বলুন, এ মসজিদেই জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

রিয়াজুল জান্নাতে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বিগলিত হয়ে নবীর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করতে থাকুন। খুব আদবের সঙ্গে বিনয়ের সুরে বলুন, ‘আস-সালাতু আস-সালামু আলাইকা ইয়া রসুলাল্লাহ’। তারপর হজরত আবুবকর ও ওমর (রা.)-এর প্রতি সালাম পেশ করুন এবং তাঁদের মাজার জিয়ারত করুন।

জিয়ারতের সময় হৃদয়-মন পরিপূর্ণ বিনয়াবনত ও সম্পূর্ণ নম্র করে ফেলুন। সাবধান! রওজায় উচ্চ আওয়াজে কথা বলা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। প্রিয় নবীকে অসিলা করে আল্লাহর কাছে প্রাণ খুলে দোয়া করুন। নবীপ্রেমে সিক্ত হৃদয়ে অঝরে কাঁদুন। দুই চোখের অশ্রুতে নিজের ভিতরের সব পাপ-তাপ ধুয়ে-মুছে সাফ করে নিন। বেশি বেশি দরুদ পাঠ করুন। আরও বেশি সালাত-সালাম পেশ করুন।

লেখক : বেতার ও টিভির   ইসলামবিষয়ক উপস্থাপক

খতিব, মণিপুর বাইতুর রওশন (মাইকওয়ালা) জামে মসজিদ মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর