রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অভিশাপের নাম হুন্ডি

রেমিট্যান্স আয় থেকে যাচ্ছে বিদেশে

হুন্ডির কারণে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ে ধস নামছে। রেমিট্যান্স আয়ের এক বড় অংশ বিদেশে থেকে যাওয়ায় তা দেশের অর্থনীতির জন্য প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আনছে না। ১৯৭৬ সালে বিদেশে ৬ হাজার ৮৭ জন কর্মী পাঠিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচিত হয় বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের যাত্রা। সে বছর রেমিট্যান্স এসেছিল ২ কোটি ৩৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। গড় হিসাব করলে জনপ্রতি রেমিট্যান্স এসেছিল ৩ হাজার ৮৯৫ মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে প্রবাসীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি। রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। জনপ্রতি ১ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলার। মোট রেমিট্যান্স বাড়লেও বছরে জনপ্রতি পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা কমেছে ২ হাজার ৩৪১ ডলার। শ্রমশক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ থেকে অনুমান করা হচ্ছে, চলতি বছর শেষে এ হার আরও কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অথচ চার দশকে সারা বিশ্বে শ্রমমজুরি কয়েক গুণ বাড়ায় রেমিট্যান্সও সে হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল। জনশক্তি রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১৯৭৬ থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশে গেছেন প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি। চার দশকে প্রবাসীর সংখ্যা ১৬০০ গুণ বাড়লেও রেমিট্যান্স বেড়েছে মাত্র ৬৫৫ গুণ। অর্থাৎ আগে যে অর্থ দুজনে পাঠাতেন, এখন পাঠান পাঁচজনে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ৯০ লাখের বেশি প্রবাসী শ্রমিকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের মতো। একই সময়ে এশিয়ার দেশ ফিলিপাইন ৬৫ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের মাধ্যমে পেয়েছে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ একজন ফিলিপাইনি নাগরিক যেখানে পাঠিয়েছেন ৫ হাজার ৭৬ ডলার, সেখানে একজন বাংলাদেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধা পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৫৫৫ ডলার। সোজা কথায়, বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিদেশি শ্রমিকের চেয়ে আয় করছেন এক-তৃতীয়াংশ মাত্র। অন্যদিকে হুন্ডির কারণে রেমিট্যান্স আয় বিদেশে থেকে যাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি অনিবার্য হয়ে উঠছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মুদ্রাস্ফীতির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ সংকট অবসানে হুন্ডি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর