মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বংশী নদীর দুরবস্থা

দখল ও দূষণের অভিশাপ বন্ধ হোক

বাংলাদেশকে বলা হয় নদ-নদীর দেশ। একই সঙ্গে যদি বলা হয় নদীখেকোদের দেশ, তবে তাতে হয়তো খুব বেশি অতিশয়োক্তি করা হবে না। রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারের বংশী নদীর দিকে তাকালেই অনুভব করা যাবে নদ-নদীর প্রতি আমাদের কৃতঘ্নতা কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। বংশী নদী রাজধানীর অন্যতম নদী এবং বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু নদ-নদীর মতোই এ নদী দখল ও দূষণে অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। সরকারিভাবে নদী দখলের সঙ্গে ৬৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে নোটিস দেওয়া হলেও অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে নদীকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেই। নদীর দুই পাড়ে সমানতালে চলছে দখল ও ভরাট। পাশাপাশি বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য নদীতে পড়ায় দূষণ বাড়ছে। নির্মাণ করা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। নদীর মাটি কেটে বিক্রি করছে মাটিখেকোরা। এসব কারণে ভালো নেই বংশীপাড়ের জনপদ সাভারের ৪০ থেকে ৪২ লাখ বাসিন্দা। দূষণ ও দখলের প্রতিযোগিতায় বংশী নদী হুমকির মুখে। নদীর সাভার থানা ঘাট থেকে শুরু করে নামাবাজার হয়ে বাঁশপট্টি পর্যন্ত অংশ এখন দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে। এসব নিয়ে পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করলেও সুফল মিলছে না। গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর সাভার ভূমি অফিসের সর্বশেষ তালিকায় ৬৫ নদ-নদী দখলদারিত্বের নাম রয়েছে। ঢাকার উত্তরের বিশাল এলাকাজুড়ে প্রবাহিত এই নদী এখন শিল্পবর্জ্য ও অবৈধ দখলদারের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। শিল্পবর্জ্যরে দূষণ ও অবৈধ দখলদারদের কারণে একসময়ের ভরা যৌবনা বংশী আজ হুমকির মুখে। বর্তমানে যেসব নদ-নদীর জলপ্রবাহ শুষ্ক মৌসুমে প্রায় জলশূন্য হয়ে পড়ে তার মধ্যে সাভার-আশুলিয়ার বংশী অন্যতম। সাভার, ধামরাই, আশুলিয়া, সিংগাইরসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রবাহিত বংশী নদী ঘিরে হাজার হাজার মানুষ একসময় জীবিকা নির্বাহ করত। বংশীর সর্বনাশ ডেকে এনেছে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তরের ঘটনা। বুড়িগঙ্গা দূষণে প্রধান ভূমিকা পালনকারী ট্যানারি শিল্প বংশীর অস্তিত্বেও আঘাত হানছে। গার্মেন্টসহ অন্যান্য শিল্পের বর্জ্যও বংশীর চেহারাকে ম্লান করে দিচ্ছে। বংশীসহ রাজধানীর নদ-নদীগুলোকে বাঁচাতে সরকারকে এখনই তৎপর হতে হবে। দখল ও দূষণের বিরুদ্ধে নিতে হবে কড়া ব্যবস্থা।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর