তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজদের ছাড় না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। বলেছেন দুর্নীতিবাজবিরোধী চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে যে-ই জড়িত থাকুক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। সাধারণ মানুষের ‘হক’ যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণের কথাও বলেছেন তিনি। জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে তাঁর শাসনামলে যে দৃষ্টিকাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে তারও উল্লেখ করেছেন। বলেছেন ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করা হয়েছিল; যার অন্তর্নিহিত মূল লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করা। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার অতিক্রম করায় বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালে বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যেখানে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, ২০১৯ সালে তা ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। আইএমএফের হিসাবে পিপিপির ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ৩০তম। দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছেছে। ৯৭ ভাগ মানুষ উন্নত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে কর্মসংস্থানে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ, দেশের বৈদেশিক নীতি, জনকল্যাণে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়েও আলোকপাত করেছেন। সন্দেহ নেই, গত ১১ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো ১১ বছরের ব্যবধানে জনপ্রতি আয় সাড়ে তিন গুণ বৃদ্ধি পাওয়া। বিশ্ব পরিসরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষস্থানের দিকে বাংলাদেশের অবস্থানও গর্বের।
তবে দুর্নীতির ভয়াল দৈত্য এসব সাফল্যকে যে কেড়ে নেওয়ার হুমকি সৃষ্টি করছে তা একটি বাস্তবতা। এ প্রেক্ষাপটে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুধু এগিয়ে নেওয়া নয়, আরও জোরদারের উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের সুনামের স্বার্থেই এ বিষয়ে হতে হবে আপসহীন।