শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

মানবিকতায় ধস

আর কত অধঃপতন দেখব আমরা

করোনাভাইরাস কি আমাদের দেশ থেকে মানবিকতাকে কেড়ে নিতে চলেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে এক মহিলাকে তার স্বামী ও সন্তানরা সখীপুর বনের মধ্যে ফেলে এসেছে। পরে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় ঢাকায়। সুনামগঞ্জে অশীতিপর বৃদ্ধ মাকে তার দুই পুত্র ও পুত্রবধূরা গ্রামছাড়া করেছে। ঢাকাফেরত প্রতিবেশীর বাড়িতে যাওয়ায় তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন- এমন যুক্তিতে অসহায় বৃদ্ধ মাকে শুধু বাড়ি নয়, গ্রামছাড়া করেছেন স্বজনরা। ফেনীতে কিডনি রোগে মৃত্যুবরণকারী এক মহিলার লাশ দাফনে বাধা দেয় মানবিক অনুভূতি হারানো এলাকাবাসী। ওই মহিলা ঢাকায় মারা গেলে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নিয়ে গেলে লাঠিসোঁটা নিয়ে চড়াও হয় গ্রামবাসী। তারা অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরের নৃশংসতাও দেখায়। পরে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে লাশ সুলতানপুর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক হামিদা মোস্তফা সেঁওতি। সেখান থেকে তিনি চলে আসেন ময়মনসিংহের চরপাড়া নয়াপাড়া এলাকায় স্বামীর ভাড়া বাসায়। তার স্বামীও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের একজন চিকিৎসক। গত মঙ্গলবার চারদিকে জানাজানি হয়ে পড়ে ডাক্তার দম্পতি করোনা আক্রান্ত। এলাকাবাসীর তোপের মুখে বুধবার স্থানীয় কাউন্সিলর, পুলিশ ও সিভিল সার্জনের উদ্যোগে ওই দম্পতিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি কেবিনে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। সন্ধ্যায় অবশ্য পিসিআর ল্যাবে ওই দম্পতির করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ অর্থাৎ তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন, এমন রিপোর্ট আসে। মানবিকতা বিসর্জনের চারটি প্রতিবেদন পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিনে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, চারটি ঘটনারই শিকার নারীরা। সন্দেহ নেই, করোনা একটি ভয়াবহ ভাইরাস। কিন্তু প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ ভাইরাসে আক্রান্তরা নিরাময় লাভ করেন। অথচ আতঙ্ক ও কুসংস্কার মানুষের মানবিকতাকে কীভাবে কেড়ে নিয়েছে তার প্রমাণ স্বজনরাও তাদের চেহারা বদলাচ্ছে; সন্তানদের কাছে মা হচ্ছেন উপেক্ষিত। সাধারণ রোগে মৃত্যুবরণকারী মানুষের দাফনেও দেওয়া হচ্ছে বাধা; যা শুধু অমানবিকই নয়, নিষ্ঠুরতাও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর